দেশের চলমান অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বজায় রাখার স্বার্থে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। সরকারের ছয়টি আর্থিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে আর্থিক খাতে সুশাসন ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
রোববার গভর্নরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সজেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বিমা নিয়ন্ত্রক ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ), রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্ম (আরজেএসসি), ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) ও সমবায় অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, ‘আর্থিক খাতের অনিয়মগুলো সব সময় একক সংস্থার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর যৌথভাবে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। আর এটি যথাযথভাবে হলে গ্রাহক কোনো সংস্থাকে ফাঁকি দিলেও অন্য সংস্থাগুলো সেই অনিয়ম চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে।’
সরকারের সবগুলো সংস্থা যৌথভাবে কাজ করলে অনিয়ম-দুর্নীতি, খেলাপি, অর্থপাচার, আর্থিক কেলেঙ্কারি ইত্যাদি কমে আসবে বলেও মনে করেন বক্তারা। এ সময় তারা আরও বলেন, ‘আর্থিক খাতের সুশাসন নিশ্চিত না হলে অর্থনীতি বেগবান করা কঠিন হয়ে পড়বে।’
অনুষ্ঠানে আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার জন্য আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে আরও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।’ ‘কোনো একক সংস্থার পক্ষে পুরো অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সমন্বিত করার সময় এসেছে।’
এ সময় বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিনের এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর জন্য বিদ্যমান আইনে মজুরি কমিশন গঠন করার সুযোগ নেই। ব্যাংকের আইনে বেতন কাঠামো থাকলেও কোনো কমিশন সম্ভব নয়। এটা করতে হলে অর্থ মন্ত্রণালয় বা সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।’
এদিকে ছয়টি আর্থিক সংস্থার প্রতিনিধিরা বলেন, ভুয়া ঋণের কারণে দেশের ব্যাংক খাতের অবস্থা এখন নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে। তাই যাচাই-বাছাই ছাড়া নতুন ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকার দাবি জানিয়েছেন তারা। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের একক মোবাইল নম্বর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাগুলো। একক মোবাইল নম্বর ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে কেউ নতুন করে ভুয়া ঋণ নিতে পারবে না বলে দাবি তাদের।
মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান (ইভিসি) মো. ফসিউল্লাহ বলেন, আলোচনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। তার মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আইনের সীমাবদ্ধতা, সংস্কার ও সংশোধনীর বিষয়গুলো অন্যতম। এগুলো বাস্তবায়ন হলে আর্থিক খাত আরও শক্তিশালী হবে। যার সুবিধা পাবে সাধারণ মানুষ।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, আলোচনাটি ছিল নিয়মিত বৈঠকের অংশ। এখানে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আসেনি। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পরিচালকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।