পোশাক খাতের শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামোতে মালিকদের দাবিরই প্রতিফলন ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন শ্রমিক নেতারা। তাদের দাবি, ন্যূনতম মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দেয়া প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়নি।
প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলেছেন, ন্যূনতম যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে শ্রমিকদের প্রস্তাবের প্রতিফলন ঘটেনি। মজুরি বোর্ডে মালিকদের আধিপত্য থাকায় তাদের দেয়া মজুরি প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়া হয়নি।
নতুন মজুরি প্রস্তাবে চলমান শ্রমিক অসন্তোষ আরও বাড়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন তারা।
গামেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দাবি পুরোপুরি উপেক্ষিত হয়েছে। ঘোষিত সর্বনিম্ন মজুরি শ্রমিকদের আশাহত করেছে।
‘কয়েক দিন আগেও মালিকরা বললেন আন্দোলন থামাতে। জানালেন যে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি তারা দেখছেন। আর আজকে যেটা ঘোষণা করা হলো তা এক প্রকার তামাশা।’
মিশু আরও বলেন, ‘নতুন এই মজুরি ঘোষণার পর শ্রমিক আন্দোলন বাড়লে তার দায় মালিকদের নিতে হবে। সরকারও এর দায় এড়াতে পারে না। মজুরি বোর্ডে মালিকরা দাবি রাখতেই পারেন। তবে সরকারের উচিত শ্রমিকদের স্বার্থ দেখা।’
বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পোশাক রপ্তানি খাতের পরিস্থিতি তুলে ধরলে জবাবে এই শ্রমিক নেত্রী বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তি দামে শ্রমিকরা খাবার যোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। পেটের দায়ে আজকে আন্দোলন হচ্ছে। মালিকরা কারখানা বন্ধের হুমকি দিচ্ছেন। তবে কারখানা বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়।’
বাংলাদেশ গামেন্টস শ্রমিক ঐক্যপরিষদের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একজন পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।
‘বেশিরভাগ শ্রমিক সংগঠন দাবি করেছে ২০ হাজারের উপরে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা বেতন ও সরকারি কিছু রেশন হলে শ্রমিকরা এই বাজারে টিকে থাকতে পারবে।’
নতুন মজুরি কাঠামো শ্রমিকরা মানবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় কেউ-ই মানবে না। তবে আমরা এটা এখনই প্রত্যাখ্যান করছি না। সর্বনিম্ন মজুরি আরও বাড়ানোর সুযোগ এখনও রয়েছে।
‘প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে আছেন। আমি আশা করবো তিনি ফিরে আসা পর্যন্ত এটা আটকে রাখা হবে। তিনি শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট অনুধাবন করে ন্যূনতম বেতন আরও বাড়াবেন।’
একই সুরে কথা বলেন শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার। তার যুক্তি, পাঁচ বছর পর নির্ধারণ হওয়া মজুরি সাড়ে চার হাজার টাকা বাড়ানো মেনে নেয়ার নয়।
তিনি বলেন, ‘সেই সময়ে ডলার হিসাবে সর্বনিম্ন মজুরি ৯৪ ডলার ছিলো, বর্তমানে ডলারের দাম অনেকটা বেড়েছে। আর বেতন বেড়েছে মাত্র ১৮ ডলার। এটা কোনোভাবেই মানার নয়। ন্যূনতম মজুরি দ্রুত পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।’
শ্রমিক প্রতিনিধিদের প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একজন পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবি জানাই আমরা।
‘নতুন মজুরি নিয়ে শ্রমিক আন্দোলন বাড়লে তার দায় যারা মজুরি বোর্ডে ছিলেন তাদেরকে নিতে হবে। এমনকি শ্রমিক প্রতিনিধি যারা ছিলেন তারাও এই দায় এড়াতে পারেন না।’