বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেশজুড়ে পেঁয়াজের বাজারে নৈরাজ্য চলছে

  •    
  • ১ নভেম্বর, ২০২৩ ২১:১৪

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি এখন ১৫০ টাকা। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। সে হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আলুর কেজি উঠে গেছে ৬৫ টাকায়।

বাজারে কোনো পণ্যের দাম লাগাতার বাড়তে থাকলে বরাবরই একটি কথা বলা হয় ‘লাগামহীন’। তবে দেশে পেঁয়াজের বাজারে দাম বৃদ্ধির যে নৈরাজ্য তাকে ‘লাগামহীন’ শব্দ দিয়ে বুঝানো মুশকিল। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি এখন ১৫০ টাকা। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেই আমদানির পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা কেজি।

নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্যের দামও লাগামহীন। বাজারে অস্বাভাবিক বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব পণ্য। তবে চোখে পড়ার মতো পেঁয়াজের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আলুর দাম। আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। সবজির দামও বেশকিছুদিন ধরেই চড়া।

বুধবার রাজধানীর বনশ্রী, মালিবাগ, গুলশান ও মিরপুরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে।

দক্ষিণ বনশ্রীর বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা জাকারিয়া জয় ক্ষোভ মেশানো কণ্ঠে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আরে ভাই, এক সপ্তাহ আগে আমি এই বাজার থেকে ৭০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনেছি। আজ এসে শুনছি সেই একই পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকা। এ যেন এক মগের মুল্লুক! এরকম দাম বাড়লে তো পেঁয়াজ খাওয়াই বাদ দিতে হবে!’

একই বাজারে আরাফাত নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘বাজার যে কার হাতে তা-ই আমরা বুঝতে পারছি না। তবে এটা যে সরকারের হাতে আর নেই সেটা বুঝতে পারছি। পেঁয়াজের দাম এক লাফে কেন দ্বিগুণ হয়ে গেল সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারছে না দোকানিরা।

‘দোকানিদের কেউ বলছেন সাপ্লাই কম, আরেকজন বলছেন হারতাল-অবরোধের কারণে পেঁয়াজ আসতে পারছে না বাজারে। আবার ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির যুক্তি দেখাচ্ছেন কেউ কেউ। তবে যত ধরনের যুক্তিই তুলে ধরা হোক না কেন, সরকারের উচিত এখনই পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা।’

দোকানিরা যা বলছেন

পেঁয়াজ, আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি কেন- এমন প্রশ্নে রাজধানীর সব এলাকায় দোকানিদের জবাব প্রায় একই ধরনের।

মিরপুরের শাহ আলী কাঁচাবাজারের বিক্রেতা ফিরোজ জানান, পেঁয়াজের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ ১৩০ আর দেশি বড় পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা কেজি।

‘আর এই দামটা তো আমরা বাড়াই না। শুনেছি ভারত সরকার পেঁয়াজের দাম বাড়াইছে। তাই আমাদের দেশেও পেঁয়াজের দাম বাড়তি।’

কলকাঠি নড়েছে চাকতাই-খাতুনগঞ্জ থেকে!

দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের চাকতাই-খাতুনগঞ্জ। এখানেও পেঁয়াজের পাইকারি দর শুনলে অনেকটা ভিড়মি খেতে হয়। আর বিশেষত পেঁয়াজের বাজারে এমন অস্থিরতা তৈরির নেপথ্য কারিগর এখানকার আমদানিকারকরা।

প্রতিবেশী ভারত পেঁয়াজের রপ্তানি দর বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয়ে ওঠেন খাতুনগঞ্জকেন্দ্রিক আমদানিকারকরা। ভারতে নির্ধারিত বর্ধিত দামের পেঁয়াজ আমদানির আগেই তারা দেশে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর প্রভাবে দুই দিনে খোদ খাতুনগঞ্জেই কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ টাকা। দাম আরও বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামে সোমবার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি।

মূলত নিজ দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে রপ্তানির ন্যূনতম মূল্য বেঁধে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। রোববার থেকে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিটন পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য ৮০০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিবেশী দেশটিতে।

কাজির দেউরি বাজারের ব্যবসায়ী মনির আহমদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘রোববার ভারতে দাম বেড়েছে, এমন খবরের কারণে পাইকারদের কাছ থেকে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে আমাদের। উপরন্তু দাম বাড়ার খবরে আমদানি করা পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। দাম বাড়ানোর জন্য মজুত করে রাখা হচ্ছে পেঁয়াজ।’

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন বলেন, ‘গত সপ্তাহে পূজার ছুটির কারণে বেশ কয়েকদিন বন্দর বন্ধ ছিল। তখন থেকেই পেঁয়াজের ঘাটতি শুরু হয়। এর মধ্যে আমদানিমূল্য বাড়ানোর খবরে বাজার একদম অস্থির হয়ে গেছে। বাজারে পেঁয়াজের সংকট দেখা দিয়েছে।’

যদিও ভারতে নতুন দাম ঘোষণার পর সেই পেঁয়াজ এখনও দেশে আসেনি। অর্থাৎ আগের দামে আমদানি করা পেঁয়াজই রয়েছে বাজারে। তবুও দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। যৌক্তিক কারণ ছাড়াই এভাবে অতিরিক্ত দাম বাড়িয়েছেন কিছু ব্যবসায়ী। এই কারসাজি করে পকেট থেকে স্বল্প সময়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।

ভারতে প্রতি টন পেঁয়াজের দাম ৮০০ ডলার হলে কেজিপ্রতি এর রপ্তানিমূল্য পড়বে ৬৭ রুপি। আগে ভারতের রপ্তানিকারকরা অনির্ধারিত মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারলেও নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশটির ব্যবসায়ীদের সরকার নির্ধারিত দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে। এর আগে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। তখন থেকেই বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা কেজি। দুদিন আগেও তা ছিল৭৫ থেকে ৮০ টাকা।

অপরদিকে খুচরা বাজারে একদিন আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। সেই পেঁয়াজ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। অর্থাৎ এক দিনেই কেজিতে দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের এক আড়তদার বলেন, ‘বর্তমানে খাতুনগঞ্জে যেসব পেঁয়াজ রয়েছে সেগুলো বাজার পর্যন্ত আসতে খরচ পড়েছে কেজিপ্রতি ৭০ টাকা। কিন্তু ভারত রপ্তানিমূল্য বেঁধে দেয়ার ঘোষণার পরপরই প্রতি কেজিতে ৩৫ টাকা বাড়তি হাতিয়ে নিচ্ছেন আমদানিকারকরা।’

নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজার, কাজির দেউরি বাজার, বহদ্দারহাট, চকবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাজারেই পেঁয়াজের দাম বাড়তি। মঙ্গলবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। কোনো দোকানেই এর কমে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি।

চাক্তাই আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পেঁয়াজের বাজার বাড়তির দিকে। ভারতের বাজারেও পেঁয়াজের সংকট রয়েছে। সেখানেও দাম বেড়েছে।

‘দাম বাড়ানোর বা কমানোর ব্যাপারে আড়তদারদের হাত নেই। আমদানিকারকরা যে দামে বিক্রি করতে বলবেন, সেই দামেই আড়তদাররা বিক্রি করেন।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘দেশে ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর নির্ভর করে। তারা একেক সময় একেক অজুহাতে দাম বাড়ান। এখন বলছেন, ভারত রপ্তানিমূল্য বাড়িয়েছে তাই দাম বেড়েছে। বাজারে বর্তমানে যেসব পেঁয়াজ আছে, সেগুলো তো দুই সপ্তাহ আগে আমদানি করা। পেঁয়াজের ক্রয় ও বিক্রয়মূল্য যাচাইয়ে প্রশাসনের দ্রুত অভিযান চালানো উচিত।’

এ বিভাগের আরো খবর