বিনিয়োগ বাড়ানো আর ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি ধরে রাখতে ব্যবসায়ীদের করা দাবির মুখে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ব্যাংক খাতে সুদ হার বেঁধে দেয় সরকার। সে সময় ব্যাংক আমানতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ আর ঋণের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ হার নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেঁধে দেয়া সেই সুদ হার থেকে বের হয়ে আসার কথা জানানো হয়।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সে সময় সুদ হার নয়-ছয়ে বেঁধে না দিলে বর্তমানে ব্যাংক খাত খুঁজে পাওয়া যেত না। এমনকি দেশের মানুষের খাবার-দাবারের ব্যবস্থাও থাকত না।
রোববার সচিবালয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রথম বিনিয়োগ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থনীতির জন্য একেক সময় একেক ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সে সময়ের প্রেক্ষাপটে সুদ হার বেঁধে দেয়াই ছিলো সবচেয়ে ভালো সমাধান।
রিজার্ভ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এক সময়ের ৬ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ আমরা ৪৮ বিলিয়নে নিয়ে গিয়েছিলাম। বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ১৯ থেকে ২২ বিলিয়ন ডলার।’
রিজার্ভ কমে আসার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণের উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে বিশ্বব্যাপী একের পর এক টানাপড়েন চলছেই। মহামারি থেকে শুরু হয়ে আমরা আর ছাড়া পাইনি। তবে যা যা করণীয় ছিলো সরকার তা করার চেষ্টা করছে। এরপরও নানা প্রশ্ন আসে। এগুলো ঠিক নয়।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সুদ হার বেঁধে না দেয়ার জন্য আমার ওপর নানামুখী চাপ ছিলো। শেরাটনের অনুষ্ঠানে আমাকে বলা হলো- আপনি ছয়-নয় করতে পারবেন না। আপনারা নিজের বিবেককে জিজ্ঞেস করে দেখুন- যদি ওই সময় তা না করতাম তাহলে আজকে ব্যাংকিং খাত খুঁজে পেতেন? এমনকি দেশের মানুষের খাবার-দাবারের ব্যবস্থাও থাকত না।’
মূল্যস্ফীতি নিয়েও কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের চাপ আরও কিছুদিন সহ্য করতে হবে। তবে তা কমাতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
‘আগে ভারত থেকে অনেক খাদ্যদ্রব্য আসতো। এখন তা কমে গেছে। আগে তারা দিতে পারত। এখন তাদেরও দেয়ার সামর্থ্য অনেক কমে গেছে।’
বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতি ভালো রয়েছে বলেও দাবি করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এক সময় বাংলাদেশে খাবারের টানাপোড়েন ছিলো। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। দেশে দীর্ঘ সময়ের জন্য নিজস্ব খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।’
খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য তিনি দেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৫ হাজার ব্যক্তি চাঁদা দিয়েছেন। তাদের জমা দেয়া মোট চাঁদার পরিমাণ ১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বেশি। সেখান থেকে ১১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
আইএমএফ ঋণপ্রাপ্তি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ঘোষিত সময়েই মিলবে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ।’