চট্টগ্রাম বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় নিয়ে আসা সাত কন্টেইনার পণ্য জব্দ করার কথা জানিয়ে কাস্টমসের নিরীক্ষা, অনুসন্ধান ও গবেষণা (এআইআর) টিম বলেছে, এসব পণ্য আমদানির মাধ্যমে আড়াই কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করেছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি প্রতিষ্ঠান।
চট্টগ্রাম কাস্টমস জানায়, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার শতভাগ কায়িক পরীক্ষার পর মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা এসব কন্টেইনার জব্দ করা হয়।
কাস্টমসের এআইআর টিম জানায়, সম্প্রতি রাজধানীর ওয়াই ট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চীন থেকে চার কন্টেইনার ক্যালসিয়াম কার্বনেট আমদানি করে। কাস্টমসের এআইআর টিম ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতায় বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করে এসব কন্টেইনারে ঘোষণা-বহির্ভূত পণ্য রয়েছে বলে ধারণা করে। পণ্যগুলো বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়। নজরদারির বিষয়টি আঁচ করতে পেরে কন্টেইনার চারটি সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য রিটার্ন অফ বোর্ড (রোব) ঘোষণা করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি।
এআইআর টিমের ভাষ্য, কন্টেইনারগুলো নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে এআইআর টিমের চাপে পণ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে রেখে যেতে বাধ্য হয় শিপিং এজেন্ট। পরবর্তী সময়ে বুধবার কন্টেইনার চারটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায়, কন্টেইনারে থাকা সবকটি বস্তায় ক্যালসিয়াম কার্বোনেট লেখা থাকলেও সেখানে রয়েছে উচ্চ শুল্কের পণ্য। ৮০ টন ঘোষণা করা হলেও কন্টেইনারগুলোতে ক্যালসিয়াম কার্বনেট পাওয়া যায় তিন টন। অন্য বস্তাগুলোতে ১৫ টন গুঁড়া দুধ, ৬০ টন ডেক্সট্রোজ, এক টন কফি মেট ও তিন টন মেনথল পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস জানায়, মিথ্যা ঘোষণায় এসব পণ্য আমদানির মাধ্যমে দেড় কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করে ওয়াই ট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বরও একই প্রতিষ্ঠানের চার কন্টেইনার পণ্য জব্দ করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি ক্যালসিয়াম কার্বনেট ঘোষণায় গুঁড়া দুধ ও ডেক্সট্রোজ আমদানির মাধ্যমে এক কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করেছিল সেই সময়।
এদিকে ২৭ সেপ্টেম্বর চীন থেকে তিনটি কন্টেইনারে ৬০ টন সোডা অ্যাশ লাইট আমদানি করে চট্টগ্রামের সদরঘাট থানার ৪৬৪ ডিটি রোডের সামিনা ম্যানশনের মেসার্স আরাফাত ট্রেডিং নামের এক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। কাস্টমসের এআইআর টিম ও পোর্ট কন্ট্রোল ইউনিট (পিসিইউ) ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতায় বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করে এসব কন্টেইনারে ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য রয়েছে বলে ধারণা করে। এতে কন্টেইনার তিনটি নজরদারিতে করে তারা। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বিল অফ এন্ট্রি দাখিল বা খালাসের উদ্যোগ নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।
পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে কন্টেইনার তিনটি শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে ভেতরে থাকা সবকটি বস্তায় সোডা অ্যাশ লাইট লেখা পাওয়া যায়, কিন্তু কায়িক পরীক্ষায় ৪০টি বস্তায় এক টন সোডা অ্যাশ লাইট পাওয়া যায়। বাকি বস্তাগুলোতে ৬০ টন ঘনচিনি, গুঁড়া দুধ, স্যাকারিন, সাইট্রিক অ্যাসিডের মতো বিভিন্ন ফুড গ্রেডের পণ্য পাওয়া যায়, যা মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির মাধ্যমে এক কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার ডেপুটি কমিশনার মো. সাইফুল হক বলেন, ‘চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের চৌকস এআইআর টিম ও পিসিইউর বিশেষ নজরদারির ফলে এই বিশাল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। খাবার উপযোগিতা জানার জন্য ১৯ অক্টোবর জব্দ পণ্যগুলোর নমুনা রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনারের নির্দেশে আলাদা দুটি আমদানির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।