‘দেড় কেজি আলু ৮০ টাকা, এক কেজি বেগুন ৭০ টাকা, এক পোয়া কাঁচামরিচ ৬০ টাকা দিয়ে কিনেছি, কিন্তু বাসা থেকে ২০০ টাকা নিয়ে এসেছি। তিনটি কাঁচাবাজার কিনতেই ২১০ টাকা লাগল। মরিচ যে দোকান থেকে কিনেছি সেখানে ১০ টাকা বাকি রেখেছি। স্ত্রী বলেছে কোনো টাটকা শাক নিতে, কিন্তু সেটিও নিতে পারলাম না। এখন হেঁটে হেঁটে বাড়ি যাব।
‘সবজির বাজারে ঢুকলে চোখ থেকে পানি চলে আসে। আয় হয় এক টাকা, আর খরচ হয় তিন টাকা। তাহলে সংসার কীভাবে চালাব? সবজির দাম যদি এত বেশি হয়, তাহলে তো মাসে এক দিনের জন্যও মাছ ও মাংসের দেখা পাব না।’
দিনাজপুর শহরের বাহাদুর বাজারে শনিবার সকাল ১০টার দিকে এভাবে নিজের অসহায়ত্বের কথাগুলো বলছিলেন শহরের বালুয়াডাঙ্গা অন্ধ হাফেজ মোড়ের বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম।
দেশের শীর্ষস্থানীয় খাদ্যশস্য উৎপাদনকারী জেলা দিনাজপুরে বিভিন্ন সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি সবজি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।
দিনাজপুর শহরের পাইকারি বাহাদুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগে আলু প্রকারভেদে ৪০ থেকে ৪২ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বেগুন এক সপ্তাহ আগে ৬০ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি।
এর বাইরে পটল এক সপ্তাহ আগে ৫৫ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি, ঢেঁড়স এক সপ্তাহ আগে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে ৭০ টাকা, পেঁপে এক সপ্তাহ আগে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে ৩০ টাকা, করলা এক সপ্তাহ আগে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে ৬০ টাকা এবং বরবটি এক সপ্তাহ আগে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
লাউ প্রকারভেদে এক সপ্তাহ আগে প্রতি পিস ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঝিঙা এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে ৬০ টাকায়, শসা এক সপ্তাহ আগে ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে কাঁচামরিচের। এক সপ্তাহ আগে ওই বাজারে কাঁচামরিচ ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও শনিবার সকালে বিক্রি হয় ২৪০ টাকা কেজিতে।
অপর দিকে আগাম শীতকালীন সবজির দামও অনেকের নাগালের বাইরে। টমেটো কেজিপ্রতি ১০০, গাজর কেজিপ্রতি ১০০, ফুলকপি ১০০, বাঁধাকপি ৬০, শিম ১২০ ও মুলা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পান দোকানি খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘ছোট একটি পানের ঘুন্টি (পানের দোকান) আছে আমার। সেখানে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেচাবিক্রি হয়। এর মধ্যে দোকানের মাল (পণ্য) কিনতেই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা চলে যায়। বাকি টাকা নিয়ে সংসার চালাতে হয়।
‘এখন তো মানুষের পকেটে টাকা নাই। তাই দোকানের বেচাবিক্রি খুব কম হচ্ছে। চারজনের সংসারে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকার কাঁচাবাজার লেগে যাচ্ছে। সপ্তাহে এক দিন কোনোমতে মাছ বা মাংস খাই, কিন্তু বর্তমানে কাঁচাবাজারে যে আগুন লেগেছে। তাতে মাছ ও মাংস আর পাতে (প্লেটে) উঠবে না।’
বাজার করতে আসা ইজিবাইক চালক আবদুর রশিদ বলেন, ‘সারা দিন ইজিবাইক চালিয়ে যা আয় হয়, তাতে তো বাজার করতেই শেষ হয়ে যায়। কয়েক দিন ধরে কাঁচা শাকসবজির দাম খুবই বেড়েছে। মাছ ও মাংস খাওয়া আগেই ছেড়ে দিয়েছি; এখন শাকসবজি খাওয়াও ছেড়ে দিতে হবে।
‘দিনাজপুর শহরে যাত্রীর চেয়ে ইজিবাইকের সংখ্যা বেশি। ঠিকমতো ভাড়া পাওয়া যায় না। সামান্য আয় দিয়ে কোনোরকমে চলতে হচ্ছে।’
সরবরাহ কম ও বৃষ্টির কারণে সবজির দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক সবজি ব্যবসায়ী। তাদের একজন কামরুল হাসান বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে দিনাজপুরে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে ফসলের ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। ফলে সবজি বাজারে সরবরাহ কম হচ্ছে। তাই দাম এত বেড়েছে।
‘আমরা বেশি দামে সবজি কিনে কয়েক টাকা লাভ করেই বিক্রি করে দিই। কৃষক আমাদের ঠিকভাবে সরবরাহ করলে সবজির দাম অনেক কমে আসবে।’