চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। মঙ্গলবার এমন পূর্বাভাসের ঠিক পরদিন আর্থিক খাতে সংস্কারের ওপর আবারও জোর দিলেন ঢাকায় নিযুক্ত বাংলাদেশ ও ভূটানের বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করেন মিস্টার সেক। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘গেল কয়েক বছরে বেশ কিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছে বাংলাদেশ, যা ধরে রাখতে এখন সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সংস্কার প্রয়োজন।’
এসময় তিনি দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। তবে মূল্যস্ফীতিকে আবারও সবচেয়ে বড় ঘাতক হিসেবে উল্লেখ্য করে এটি কমাতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
আবদুলায়ে সেক বলেন, ‘মুদ্রানীতি ও আর্থিক খাতে এখন সংস্কার প্রয়োজন। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে কিছু সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংকিং খাতে সংস্কার হচ্ছে, সুদহারের সীমা উঠিয়ে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যা ইতিবাচক।’
যেকোনো ইতিবাচক সংস্কার কার্যক্রমে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংস্কারের পাশাপাশি জনগণের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। জলবায়ুর অভিঘাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে বিনিয়োগ করতে হবে।’
‘দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশ লক্ষ্যণীয় উন্নয়ন করেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গেল কয়েক বছরে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমা থেকে বের হয়েছে, প্রায় ৫০ লাখ মানুষ অতি দারিদ্র্যতার বৃত্ত থেকে বের হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিদায়ক।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে ৪০ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে। স্বল্প সুদে ঋণের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল ও অন্যান্য স্কিমে আরও ঋণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে।’
এছাড়া বাংলাদেশের জন্য বাজেট সহায়তা বাড়ানোর কথাও বলেন তিনি। এসময় তিনি বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে আরও পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন।
এসময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘সংস্কার চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা নিয়ে বিশ্বব্যাংক সন্তুষ্ট। সুদহারের সীমা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে- এমন পদক্ষেপে বিশ্বব্যাংক সাধুবাদ জানায়। তবে বিশ্বব্যাংক আরও সংস্কর চায়।’
এ সময় নির্বাচনকালের অর্থনীতি নিয়েও কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। বলেন, ‘সরকার ও বিশ্বব্যাংক উভয়ই মনে করে নির্বাচনের সময়ের পরিবেশ ভালো থাকলে উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। এজন্য কাজের পরিবেশ, উৎপাদনের পরিবেশ ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি বাড়েনি, তা সকলের জন্য স্বস্তির খবর। তবে যা কমেছে তা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই।
‘মূল্যস্ফীতি কমাতে যা যা করণীয় সবই সরকার করছে। চলতি বছরের শেষদিকে মুল্যস্ফীতি পাঁচ কিংবা ছয় শতাংশের ঘরে নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির আঘাত মোকাবেলায় নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য প্রণোদনা কর্মসূচি বাড়ানোর কথা বলেছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির জন্য বিশ্বব্যাংক সহায়তা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে।’
উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বর মাস শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে দাড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আগস্ট শেষে যা ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।