বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বেনাপোলে আটকা শতাধিক চালান, ব্যবসায়ীদের হয়রানি

  • রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল   
  • ১৬ আগস্ট, ২০২৩ ০৮:৪৫

বেনাপোলের কয়েকটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট গত কয়েক মাসে বন্দরের দেয়া ওজন স্লিপের ওজন কমিয়ে ডুপ্লিকেট ওজন স্লিপ সংযুক্ত করে পণ্য খালাস নিয়ে চলে গেছে। এতে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এর পর থেকে ওজন স্লিপ দেয়া নিয়ে কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে শুরু হয়েছে রশি টানাটানি।

ওয়েব্রিজের ওজন স্লিপ নিয়ে বেনাপোল কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে সৃষ্ট জটিলতায় ১০ দিন ধরে আমদানি করা বাণিজ্যিক পণ্যের পরীক্ষণ রিপোর্ট মিলছে না।

বেনাপোল কাস্টমস পরীক্ষণ (আইআরএম) গ্রুপ রিপোর্ট না দেয়ায় বন্দরে শতাধিক পণ্য চালান আটকা পড়ে আছে। এতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে আমদানি হয়ে আসা পণ্য চালানগুলো বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের আগে বন্দর স্কেলে ট্রাকসহ পণ্যের গ্রস ওজন নিশ্চিত করা হয়। পণ্য আনলোড হওয়ার পর আবার খালি ট্রাক ওজন করে পণ্যের নিট ওজন নিশ্চিত করে ওজন স্লিপ দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

তবে গত কয়েক মাসে বেনাপোলের কয়েকটি সিএন্ডএফ এজেন্ট বন্দরের দেয়া ওজন স্লিপের ওজন কমিয়ে ডুপ্লিকেট ওজন স্লিপ সংযুক্ত করে পণ্য খালাস নিয়ে চলে গেছে। ওজন স্লিপে ওজন কমানোর কারণে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

এ ঘটনায় পণ্যের সঠিক ওজন নিশ্চিত হওয়ার জন্য ৭ আগস্ট ১১টি পণ্য চালানের বন্দর স্কেলের ওজন নিশ্চিত হওয়ার জন্য বেনাপোল কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার তানভীর আহম্মেদ স্বাক্ষরিত পত্র বেনাপোল বন্দর পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়, কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ ওজন স্লিপের সত্যতা যাচাই না করে কাস্টমসের পত্রের বিপরীতে কাস্টমস কমিশনার বরাবর আরেকটি পত্র দিয়েছে।

বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) অ. দ. আব্দুল জলিল স্বাক্ষরিত পত্রে লেখা আছে, উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রোক্ত স্মারকের প্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, বেনাপোল স্থলবন্দরের ওয়েব্রিজ নং-০৪ ও ০৫ এ কাস্টম হাউস, বেনাপোল-এর প্রতিনিধির (সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা) উপস্থিতিতে ওজন কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়। ওয়েব্রিজ স্কেলে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সশরীরে উপস্থিতি নিশ্চিতপূর্বক ভারতীয় প্রতিটি ট্রাকের ওজন স্লিপে স্বাক্ষর প্রদান করা প্রয়োজন।

সূত্রোক্ত পত্রে বর্ণিত পণ্য চালানের ওজনের বিষয়ে ওয়েব্রিজ স্কেলে কর্মরত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার কাছে ওজন স্লিপ সম্পর্কে মতামত গ্রহণপূর্বক পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। উল্লেখ থাকে যে, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন অন্যান্য স্থলবন্দরের ওয়েব্রিজগুলোর প্রতিটি পণ্য চালানের ওজন স্লিপে কাস্টমস ও স্থলবন্দরের প্রতিনিধির যৌথ স্বাক্ষরে সম্পাদিত হয় এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের অটোমেশন কার্যক্রম ডাটা সফট কোম্পানি কর্তৃক সফটওয়্যারের আপগ্রেডেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এ ঘটনায় কাস্টম হাউস (আইআরএম) কর্তৃক পণ্য পরীক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে না। আর পরীক্ষণ রিপোর্ট না হলে সে চালানের শুল্কায়ন সম্ভব নয়। এ কারণে বন্দর থেকে আমদানি করা কমার্শিয়াল পণ্য খালাস হচ্ছে না।

বেনাপোলের সাধারণ ব্যবসায়ীরা জানান, সমস্যার সমাধান না করে কাস্টমস ও বন্দরের মধ্যে পত্র চালাচালি হচ্ছে। এ কারণে আমদানিকারকদের পণ্য বন্দরে আটকে আছে প্রায় ১০ দিন। পণ্য খালাস নিতে পারায় একদিকে যেমন বন্দরের ভাড়া বাড়ায় আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উভয় পক্ষকে এক টেবিলে বসে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা উচিত।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমসবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘কাস্টমস ও বন্দরের মধ্যে ওয়েব্রিজের ওজন নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ‌এ কারণে আমরা ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছি। ১০ দিন ধরে কমার্শিয়াল পণ্য (আইআরএম) পরীক্ষণ গ্রুপ কর্তৃক পরীক্ষণ হলেও রিপোর্ট না হওয়ায় আমদানি করা পণ্য বেনাপোল কাস্টম হাউস থেকে শুল্কায়ন হচ্ছে না।

‘শুল্কায়ন করতে না পারায় পণ্য বন্দর থেকে খালাস হচ্ছে না। ইতোমধ্যে শতাধিক কমার্শিয়াল পণ্য চালান বন্দরে আটকে আছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশীয় আমদানিকারকরা।’

তিনি বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অ্যাসোসিয়েশন সদস্যরা কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। স্কেলের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য বন্দর স্কেলে বন্দর অফিসার ও কাস্টমস অফিসারের উপস্থিতিতে ওয়েব্রিজের ওজন নিশ্চিতসহ স্লিপে উভয়েই স্বাক্ষর করলেই সব সমাস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

বেনাপোল কাস্টমসের জয়েন্ট কমিশনার মো. শাফায়েত হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক মাসে বেনাপোলের কয়েকটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বন্দরের দেয়া ওজন স্লিপের ওজন কমিয়ে ডুপ্লিকেট ওজন স্লিপ সংযুক্ত করে পণ্য খালাস নিয়ে চলে গেছে। এতে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারিয়েছে।

‘এ ঘটনায় পণ্যের সঠিক ওজন নিশ্চিত হওয়ার জন্য ৭ আগস্ট ১১টি পণ্য চালানের বন্দর স্কেলের ওজন নিশ্চিত হওয়ার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ এর সঠিক উত্তর না দিয়ে তাদের স্কেলে আমাদের কোনো অফিসার নিয়োগসহ ওজন স্লিপে উভয়ের স্বাক্ষরের মাধ্যমে ওজন নিশ্চিত করতে বলেছে। ওজন স্লিপ নিয়ে যে জটিলদার সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধানের জন্য আমরা কমিশনার স্যারের নির্দেশ মোতাবেক দ্বিতীয় দফায় আরও একটি পত্র বন্দরকে দিয়েছি। আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি, কিন্তু বন্দর কর্তপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা রাখছে না।’

বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল এ বিষয়ে বলেন, ‘বন্দরের ওয়েব্রিজ নং-০৪ ও ০৫ এ কাস্টম হাউস, বেনাপোল-এর প্রতিনিধির (সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা) উপস্থিতিতে ওজন কার্যক্রম সম্পাদন করা হলেও ওজন স্লিপে কাস্টমস প্রতিনিধি স্বাক্ষর করেন না।

‘ওয়েব্রিজ স্কেলে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার সশরীরে উপস্থিতি নিশ্চিতপূর্বক ভারতীয় প্রতিটি ট্রাকের ওজন স্লিপে স্বাক্ষর দেয়া হলে ওজন স্লিপের সঠিকতা যাচাই করা হয়ে যায়। কাস্টমস এই কাজটি না করে সব দায় আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘পণ্য পরীক্ষণের সময় তো কাস্টমস অফিসাররা ডিজিটাল স্কেলে ওজন করে ওজন নিশ্চিত করে থাকেন। আসলে সমস্যা কোথায় হচ্ছে আমার জানা নেই।

‘তা ছাড়া বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন অন্যান্য স্থলবন্দরের ওয়েব্রিজগুলোর প্রতিটি পণ্য চালানের ওজন স্লিপে কাস্টমস ও স্থলবন্দর প্রতিনিধির যৌথ স্বাক্ষরে সম্পাদিত হয়। শুধু বেনাপোলে ওজন স্লিপে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ স্বাক্ষর করছেন না।’

এ বিভাগের আরো খবর