বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এক বছরে টাকার মান কমেছে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ১৫ আগস্ট, ২০২৩ ২২:০৭

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে ডলারের বিপরীতে সব মুদ্রার দরপতন হলেও রাশিয়ান রুবল ও সিঙ্গাপুরি ডলারের দর বেড়েছে যথাক্রমে ২ শতাংশ ও ১ শতাংশ।

গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ১৩ দশমিক তিন শতাংশ। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট-২০২২ এ তথ্য জানানো হয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়, ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি ডলারের আন্তব্যাংক বিনিময় হার ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। অর্থাৎ, এক ব্যাংকের আরেক ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে প্রতি ডলারের জন্য ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা খরচ করতে হতো। যা ১ ডিসেম্বর বেড়ে দাঁড়ায় ১০৫ টাকা ৪০ পয়সায়। অর্থাৎ, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হয়েছে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। আর বর্তমানে ডলারের দাম আরও বেড়ে হয়েছে ১০৯ দশমিক ৫০ পয়সা।

বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি যে প্রায় ১০ শতাংশে উঠেছে, তাতে ডলারের এ উল্লম্ফন অন্যতম প্রধান একটি কারণ বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। টাকার এ অবমূল্যায়ন সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল করতে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ১৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে।

করোনা মহামারির পরে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়, যে পরিস্থিতি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আরও খারাপ হওয়া শুরু করে। যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয় এবং ডলারের বিপরীতে বেশিরভাগ দেশের মুদ্রার দরপতন হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছর চীনা ইউয়ান, ভারতীয় রুপি, জাপানি ইয়েন এবং ইন্দোনেশিয়ান রুপিসহ প্রধান আমদানি দেশগুলোর মুদ্রার উল্লেখযোগ্য দরপতন হয়েছে। এর মধ্যে পাকিস্তানি রুপির সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ দরপতন হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জাপানি ইয়েনের দরপতন হয়েছে ১৪ শতাংশ। ডলারের বিপরীতে ইউরোর দর ৬ শতাংশ এবং যুব্করাজ্যের পাউন্ড স্টার্লিংয়ের দরপতন হয়েছে ১০ শতাংশ। তবে, ২০২২ সালে রাশিয়ান রুবল ও সিঙ্গাপুরি ডলারের দর বেড়েছে যথাক্রমে ২ শতাংশ ও ১ শতাংশ।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দেশে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর। করোনাকালে ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ডলারের দর ছিল ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা। জুন মাসে এ দর ৮৪ টাকা ৮৫ পয়সায় নেমে আসে। এরপর থেকে ২০২১ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত ডলারের দর ছিল ৮৪ দশমিক ৮০ পয়সা। ২০২১ সালের ৫ আগস্ট থেকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে।

অর্থাৎ, দুই বছর আগে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে প্রতি ডলারের জন্য ৮৪ টাকা ৮০ খরচ করতে হতো, সোমবার তা লেগেছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। এ দুই বছরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার মান কমেছে ২৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর অর্থ হলো- ২০২১ সালের ৫ আগস্ট আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কোনো পণ্য বা সেবা আমদানি করতে যে ডলারের প্রয়োজন হতো, তার জন্য ১০০ টাকা লাগতো, বর্তমানে তা কিনতে ১২৯ টাকা ১৩ পয়সা খরচ করতে হচ্ছে। আমদানি বাড়ায় ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় শক্তিশালী হতে থাকে ডলার, অন্যদিকে দুর্বল হচ্ছে টাকা। এ পরিস্থিতি এখনও অব্যাহত।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে ডলার ও টাকার বিনিময় হার সরকার তথা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করে দিত। ২০০৩ সালে এই বিনিময় হারকে করা হয় ফ্লোটিং বা ভাসমান। এরপর থেকে আর ঘোষণা দিয়ে টাকার অবমূল্যায়ন বা পুনর্মূল্যায়ন করা হয় না। তবে বিনিময় হার ভাসমান হলেও পুরোপুরি তা বাজারভিত্তিক থাকেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব সময়ই এতে পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ রেখে আসছে।

গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। পরে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়।

এ দায়িত্ব দেয়া হয় ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) ওপর। এরপর থেকে এই দুই সংগঠন মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে এ দুই সংগঠন।

তবে, এবিবি ও বাফেদার এ সিদ্ধান্ত অনেক ক্ষেত্রেই মানেনি ব্যাংকগুলো।

অনেক ব্যাংক এ দুই সংগঠনের বেঁধে দেয়া দামের চেয়েও বেশি দামে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে। এজন্য কয়েক দফায় কয়েকটি ব্যাংককে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন, আমদানির ক্ষেত্রে বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে ডলারের দামে বেশি রাখছে ব্যাংকগুলো।

তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ডলার সংকট যতটা প্রকট ছিল, তা অনেকটা কমে এসেছে। আমদানি ঋণপত্র খোলা কমে গেছে। তাতে ব্যাংকগুলোতে ডলারের মজুদ কিছুটা বেড়েছে।

সবশেষ গত ৩১ জুলাই রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দর ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা আর রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে হবে ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে এবিবি ও বাফেদা।

এ বিভাগের আরো খবর