ঢাকার পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নিয়ে আলোচনা চলছে। বলা হচ্ছে, প্রথম ক্যাটাগরির শেয়ারের বদলে দুর্বল হিসেবে পরিচিত শেয়ারের দিকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য বলছে, শীর্ষ লেনদেনকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে বুধবার সবার ওপরে ছিল ফুয়াং ফুড।
কোম্পানিটি এ দিন টাকার অংকে লেনদেন করেছে ৪৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির ১ কোটি ২৩ লাখ শেয়ারের হাতবদল হয়েছে।
এ নিয়ে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৮০ শতাংশ দামও বেড়েছে আলোচিত ফুয়াং ফুডসের।
‘বি’ ক্যাটাগরির আরেক আলোচিত কোম্পানি রংপুর ডেইরি বা আরডি ফুড। প্রতিষ্ঠানটি বুধবার দর হারালেও লেনদেনে ছিল তৃতীয় অবস্থানে।
৬২ লাখের বেশি শেয়ারের হাতবদল হওয়ায় কোম্পানিটির লেনদেন ছাড়িয়েছে ৩৬ কোটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে শুরু হওয়া বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতার ঢেউ এখনও ঢাকার পুঁজিবাজারে রয়ে গেছে। এ কারণে বেঁধে দেয়া ফ্লোর প্রাইস অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের সর্বনিম্ন দরসীমা উঠাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আগ্রহী নয়।
যদিও ঢাকার পুঁজিবাজারে গত কয়েক দিন ধরেই লেনদেন হচ্ছে হাজার কোটি টাকার ঘরে। তাতে বাজার নিয়ে নতুন করে আশাবাদী হতে শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার দিন শেষে দেখা গেছে, প্রায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান নিয়েছে ৬ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে। এ দিন লেনদেন হয়েছে ৮৭৭ কোটি টাকা।
লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১১৬টির, কমেছে ৬৫টির এবং ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকাসহ নানা কারণে ১৮৫টি কোম্পানির দর ছিল অপরিবর্তিত।
এ পরিস্থিতি আশা জাগালেও শীর্ষ লেনদেনকারী কোম্পানিগুলোর তথ্যে বিনিয়োগকারীদের সাম্প্রতিক আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তারা ভালো মানের শেয়ারে না ঝুঁকে দুর্বল শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন বলে সমালোচনা হচ্ছে।
এদিকে ফুয়াং ফুড, আরডি ফুড ছাড়াও আরেক ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানি খান ব্রাদার্সকে দফায় দফায় নোটিশ দিয়েও থামানো যাচ্ছে না।
মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণের বেশি দাম বেড়েছে কোম্পানিটির। বুধবার কিছুটা দর সংশোধন হলেও লেনদেন হয়েছে ২৮ কোটি টাকারও বেশি।
একইভাবে ইয়াকিন পলিমার, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, এডভেন্ট ফার্মা ও বিচ হ্যাচারি নিয়ে এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
বুধবার দিন শেষে দেখা যায়, লেনদেনের শীর্ষ ১১ কোম্পানির মধ্যে ৭টিই ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত।
বাজারে কিছুটা দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ‘বি’ ক্যাটাগরিকে। অর্থাৎ যেসব কোম্পানি তার আগের বছরে ১০ শতাংশের নিচে লভ্যাংশ দিয়েছে তাদের ‘বি’ ক্যাটাগরি হিসেবে চিহ্নিত করে ডিএসই।
অবশ্য এসব শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ রয়েছে এমন কথা মানতে নারাজ পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবু আহমেদ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বি বা জেড ক্যাটাগরির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে একটা শ্রেণি। এসব কোম্পানির ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারাই কারসাজির সঙ্গে জড়িত। এর আগেও লোভে পরে বিনিয়োগ করে অনেক বিনিয়োগকারী সর্বশান্ত হয়েছেন।’
অধ্যাপক আবু আহমেদ আরও বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইসের কারণে ভালো মানের শেয়ার কেনাবেচা কম হচ্ছে। ফলে না বুঝে দুর্বল শেয়ারে ঝুঁকছেন অনেকে। ডিএস-৩০ কোম্পানির মধ্যে ২৩টি পড়ে রয়েছে ফ্লোর প্রাইসে।’
যত দ্রুত সম্ভব ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার পরামর্শ দেন এ বাজার বিশেষজ্ঞ।
ডিএসইর তথ্য বলছে, বর্তমানে বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে ১০ বা তার চেয়ে বেশি লভ্যাংশ দিয়ে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে ২৫২টি কোম্পানি।
১০ শতাংশের নিচে লভ্যাংশ দিয়ে ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ১০৬টি।
নতুন তালিকাভুক্ত অর্থাৎ ‘এন’ ক্যাটাগরির কোম্পানি রয়েছে ৫টি।
অপরদিকে কোনো লভ্যাংশ দিতে না পারায় ৩০টি কোম্পানিকে ‘জেড’ শ্রেণিতে অন্তভুক্ত করেছে ডিএসই।