বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে রুপির ব্যবহার শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রপ্তানি ও আমদানির লক্ষ্যে এলসি খোলার মাধ্যমে এই লেনদেন শুরু হয়েছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে লেনদেন শুরুর দিনে বাংলাদেশ থেকে তামিম এগ্রো লিমিটেড ১৬ মিলিয়ন রুপির বেশি রপ্তানি এলসি খুলেছে। অপর প্রতিষ্ঠান নিতা কোম্পানি লিমিটেড আমদানি এলসি খুলেছে প্রায় ১২ মিলিয়ন রুপির।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, দুই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রুপিতে বাংলাদেশ-ভারত আনুষ্ঠানিক লেনদেন শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে জড়িত ব্যবসায়ীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) রুপিতে লেনদেনের জন্য নস্ট্রো হিসাব খোলার অনুমোদন পায়। ইবিএল ও এসবিআইকে গত সপ্তাহে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) অনুমোদন দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) আনুষ্ঠানিকভাবে রুপিতে লেনদেন চালু হয়েছে। ইতোমধ্যে রুপিতে দুই প্রতিষ্ঠানের এলসি খোলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতি বছর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। এর মধ্যে দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। একই সময়ে বাংলাদেশ ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ভারত থেকে আমদানি করে।
ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য শুরু
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ভারতীয় হাইকমিশনের যৌথ আয়োজনে বাণিজ্যে রুপির ব্যবহার শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা বলেন, ‘শেষ ১০ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে এই সম্পর্কের ভিত আরও মজবুত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে রুপিতে লেনদেন শুরু হওয়ার মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও বাড়বে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুল রউফ তালুকদার বলেন, ‘বাংলাদেশ বছরে ভারতে ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। রুপির মাধ্যমে বাণিজ্য শুরু হওয়ায় তা অনেকগুণ বাড়বে বলে আশা করছি।’
প্রথমে ভারতীয় মুদ্রায় লেনদেন শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে এ সুবিধা মিলবে টাকাতেও। এতে বৈদেশিক মুদ্রায় চাপ কমবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি অনেক। এমন উদ্যোগের সুফল নিয়ে ব্যবসায়ী এবং বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। বলা হচ্ছে, রুপি আন্তর্জাতিক মুদ্রা নয়। এর ফলে ভারতীয় মুদ্রার চাহিদা বাড়বে, শক্তিশালী হবে রুপি।
তবে কেউ কেউ বলছেন, ডলারের আধিপত্য কমিয়ে আনতে এটি একটি পদক্ষেপ মাত্র। ভবিষ্যতে টাকাতেও লেনদেনের উদ্যোগ নিতে হবে।
রুপিতে যেভাবে লেনদেন
রুপিতে লেনদেন করতে ভারতের ব্যাংকের সঙ্গে নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট করবে বাংলাদেশের ব্যাংক। যেসব পণ্য ভারতে রপ্তানি করা হয়, সেসব বিল নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে জমা থাকবে। পণ্য আমদানির পর ওই অ্যাকাউন্টে যে রুপি জমা থাকবে, সেখান থেকে রুপির মাধ্যমে আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা হবে।
দুই দেশের চারটি ব্যাংকের মাধ্যমে এই লেনদেন চালু হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক এবং ভারতের স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই।
প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের সোনালী, ইস্টার্ন ও ভারতের স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে রুপিতে লেনদেন করতে পারবেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ভারত অংশে এ সম্পর্কিত বিষয়ের দায়িত্বে থাকবে দেশটির আইসিআইসি ব্যাংক ও স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া। রুপিতে লেনদেনের চাহিদা বাড়লে পর্যায়ক্রমে অন্য ব্যাংককেও অনুমতি দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।