বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মো. আল-আমিন। ঈদে ছুটি না পাওয়ায় ঢাকাতেই রয়ে গেছেন। নিজে রান্না করে খাওয়ার জন্য ভ্যান থেকে একশ’ গ্রাম কাঁচামরিচ কিনেছেন ৪০ টাকা দিয়ে। তবে একই মরিচ পাশের বাজারের দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে।
১০ দিনের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি নিয়ে আক্ষেপ করে তিনি ফেসবুকে একটি পোস্টও দিয়েছেন।
আল-আমীনের মতো অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাঁচামরিচের এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। একইসঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন- নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দামে লাগাম পরবে কবে।
ভোক্তারা বলছেন, কয়েক দিন আগে সরকারের তরফ থেকে কাঁচামরিচ আমদানির কথা বলা হয়। আমদানির অনুমতি দেয়ার সেই খবরে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয় যে দ্রুতই কাঁচামরিচের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় নেমে আসবে। তাহলে কখন এই পণ্য আমদানি হবে আর দামই বা কমবে কবে।
ভোক্তা আল-আমীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা উদ্যান বাজারে দোকানে ৬০০ টাকা কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে। আগুন দামের কারণে অনেকেই ১০০ গ্রামের বেশি কিনছেন না। কেউ কেউ আরও কম নেয়ার চেষ্টা করছেন। আবার বিক্রেতারা ১০০ গ্রামের কম বিক্রি করতে নারাজ।
‘তবে বাজার থেকে বের হয়ে মাত্র ২০ গজ দূরেই ভ্যানে ৪০০ টাকা কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি করছেন এক সবজি বিক্রেতা। ৪০ টাকায় প্রতি ১০০ গ্রাম বিক্রি করছেন তিনি।’
দোকানিদের বরাতে তিনি বলেন, ‘বাজারে কাঁচামরিচ নেই। যা আছে সেগুলোর কেনা দাম অনেক বেশি। খুচরা বিক্রেতাদের বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে। আগে ১০ টাকায় যে মরিচ পাওয়া যেত বর্তমানে সেটুকু মরিচের দাম এখন ৬০ টাকা।’
ঈদের বাজারে দাম বেড়ে গেছে বিভিন্ন সবজিরও। ছবি: নিউজবাংলা
মোহাম্মদপুর বসিলা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সালাউদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) মরিচ কিনেছি। পাইকারি বাজারে দুই হাজার থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা দামের মোট চার ধরনের কাঁচামরিচ পাওয়া যায়। আমি বিক্রি করছি ৫২০ টাকা কেজি।’
একই বাজারের সবজি বিক্রেতা সজিব সরকার বলেন, ‘সকালে কারওয়ান বাজারে গিয়ে প্রথমে কাঁচামরিচের দাম শুনলাম ২ হাজার ৫০০ টাকা পাল্লা। পরে অনেকে ২ হাজার ২০০ টাকা পাল্লা বিক্রি করেছে। একদিন আগের মরিচ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা পাল্লা। তাছাড়া চাহিদার উপরে দাম আকাশ-পাতাল হয়ে যায়। বৃষ্টির কারণে মরিচ গাছ মরে যায়। বর্ষায় মরিচের আমদানি কম। চাহিদা বেশি। তাই দাম বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ঈদের আগে কেনা কাঁচামরিচ আছে। ৮০ টাকা, ১০০ টাকা পোয়া দিলেই বিক্রি করে ফেলছি। আবার নতুন মরিচ বিক্রি করতেছি ৬০০ টাকা কেজি দরে। ভ্যানে অনেকে সময় কিছুটা কম বিক্রি করে। তাছাড়া ঢাকার অনেক জায়গায় ৭০০ টাকা কেজি দরেও কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে।’
এই বাজারে মরিচ কিনতে আসা মো. জুবায়ের বলেন, ‘ঈদের সময় এখন। বাসায় মেহমান। রান্না বেশি করতে কাঁচামরিচ বেশি লাগছে। এদিকে কাঁচামরিচ আড়াইশ’ গ্রামের দাম ১৪০ টাকা। আরেক দোকানে চাইলো ১৩০ টাকা। কয়েক দিনের ব্যবধানে এভাবে কয়েক গুণ দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপদে আছি। অথচ কাঁচামরিচ ছাড়া তো চলে না।’
আরেক ক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে কারওয়ান বাজারের খুচরা মার্কেট থেকে হাফ কেজি কাঁচামরিচ কিনেছিলাম ৮০ টাকা দিয়ে। এলাকায় তখন ছিল ২০০ টাকা কেজি। আজকে কিনলাম ৫৬০ টাকা দরে।’
ঈদের প্রভাব সবজির দামেও
শুধু কাঁচামরিচ নয়, সবজির দামও চড়া। বসিলা বাজারে পটল ৫০, করোলা ১০০, কাকরোল ৮০, পেঁপে ৫০, ঢেঁড়স ৫০, লাউ ৫০, টমেটো ১৮০, ঝিঙ্গা ৫০, চিচিঙ্গা ৫০, শশা ৫০ ও বরবটি ৮০ কেজি বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে ভর মৌসুমেও লেবুর হালি হঠাৎ করে ২০ টাকা হয়ে গেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কম। এজন্য দাম বেড়েছে। তবে দুই-একদিনের মধ্যেই সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দামও কিছুটা কমে আসবে।