বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে চলতি অর্থবছরের পুরো সময়ে সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেষ কার্যদিবসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ৪৬ মিলিয়ন ডলার বা ৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ নিয়ে ১৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
এ নিয়ে ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের সোমবার পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে, যা গত ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, জুলাই-জুন) চেয়েও দ্বিগুণ। গত অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে সব মিলিয়ে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অন্যদিকে চলতি মাসের জুনের ২৫ দিনেই ২ বিলিয়ন ডলার বা ২০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, যা সাম্প্রতিক মাসগুলোর তুলনায় বেশি। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৮ কোটি ০৮ লাখ ডলার। ২০২২ সালের জুন মাসের এই ২৫ দিনে ১৩৩ কোটি (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই ২৫ দিনে প্রবাসী আয়ে ৫২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এই রেমিটেন্সের ওপর ভর করে এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার যোগ হওয়ায় বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রের মতে, সোমবার পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। গত মাসে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক হচ্ছে রিজার্ভ। আমদানি ব্যয় কমার পরও রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছিল।
কমতে কমতে ১৫ জুন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের আগস্টে এই সূচক ৪৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে উঠে গিয়েছিল, এক বছর আগেও ছিল ৪১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল।
অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক এবং দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। কমতে কমতে রিজার্ভ উদ্বেগজনক অবস্থায় নেমে এসেছিল। সেখান থেকে ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল খুশির খবর।’
তিনি বলেন, ‘এখন সরকার কিছুটা স্বস্তি-সাহস পাবে। চাপ বা সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হবে। তবে আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে চলবে না। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়াতে আরও জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’