ব্যাংকের সব ধরনের ঋণের সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। রোববার জাতীয় মুদ্রানীতি ঘোষণার পরদিন আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, সুদ হার নির্ধারণ হবে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের ওপর। কৃষি, এসএমই, ব্যক্তিগত ও গাড়ি ঋণসহ সব ধরনের ঋণের সুদ বাড়বে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হার হবে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘সিক্স মানথ মোভিং এভারেজ রেট অফ ট্রেজারি বিল-স্মার্ট’। ফলে ব্যাংক ঋণের সুদ হার হবে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ।
আর সিএমএসএমই ও ভোক্তা ঋণের আওতাধীন ব্যক্তিগত ঋণ ও গাড়ি ক্রয় ঋণে আরও ১ শতাংশ তদারকি মাশুল যুক্ত হবে। ফলে এসব ঋণের সুদ হার হবে ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ। তবে কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদ হার হবে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এ ধরনের ঋণের সুদ হার ট্রেজারি বিলের গড় সুদের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি। বর্তমানে কৃষি ঋণে সুদ হার ৮ শতাংশ এবং অন্য ঋণে তা ৯ শতাংশ। আর ক্রেডিট কার্ডে সুদ হার আগের মতোই ২০ শতাংশ বহাল থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, কোনো সুদ আরোপ করার পর ৬ মাসের মধ্যে তা পরিবর্তন করা যাবে না। এর মধ্যে সুদ হার বাড়লেও ব্যাংক গ্রাহকের সুদ বাড়াতে পারবে না। আবার সুদ হার কমলেও গ্রাহকের সুদ কমবে না।
কোনো ঋণ মেয়াদের আগে সমন্বয় করতে চাইলে সিএমএসএমই ও ভোক্তা ঋণের আওতাধীন ব্যক্তিগত ঋণ ও গাড়ি ক্রয় ঋণের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ তদারকি মাশুল আনুপাতিক হারে আদায় করতে হবে। ফলে বছরের মাঝখানে কেউ ঋণ শোধ করে দিতে চাইলে তার ঋণের ওপর দশমিক ৫০ শতাংশ হারে তদারকি মাশুল নিতে পারবে ব্যাংক।
প্রচলিত ব্যাংকের পাশাপাশি ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোকেও একই নিয়মে মুনাফা হিসাব করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সুদ হারের সীমা বেঁধে দেয়া থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে সুদ হার কিছুটা বাড়ল। তবে এখনও তা নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার মধ্যেই থেকে গেছে, পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হয়নি।
২০২০ সালের এপ্রিলে ব্যাংক উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে ৯ শতাংশ সুদ হার কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদ হার বেঁধে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার রোববার মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে বলেন, ‘যখন সুদ হার ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ ছিল, তখন ব্যবসার খরচ কমাতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুদ হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। তখন বিদেশি ঋণ ২ শতাংশ সুদে পাওয়া যেত।
আবার বর্তমান প্রেক্ষাপটে সুদ হার বাড়ানো প্রয়োজন। আমরা সরকারকে এটা বুঝাতে সক্ষম হওয়ায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই আবার ঋণের সুদ হারের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেয়া হয়েছে।’