বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কর ফাঁকির অভিযোগের ব্যাখ্যা ইউনূস সেন্টারের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ৯ জুন, ২০২৩ ১৪:৪৮

ড. মুহাম্মদ ইউনূস জীবনে কোনো সম্পদের মালিক হতে চাননি জানিয়ে ইউনূস সেন্টার বলে, কোথাও তার মালিকানায় কোনো সম্পদ নেই। সে কারণেই তিনি নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে ‘প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট’ ও ‘ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট’ নামে দুটি ট্রাস্ট গঠন করেন।

আয়কর রেফারেন্স মামলা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে আইনি লড়াই চলছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ১৫ কোটি টাকা কর দাবি করা মামলা নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে ইউনূস সেন্টার।

শুক্রবার সকালে ফেসবুক পোস্টে সংস্থাটি জানায়, ড. ইউনূসের টাকা নিয়ে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনে যে আলাপ চলছে, তার পুরোটাই প্রফেসর ইউনূসের উপার্জিত টাকা। এই টাকা বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে কর বিভাগ অবহিত আছে। কারণ সব টাকার হিসাব তার আয়কর রিটার্নে উল্লেখ থাকে।

টাকার উৎস

ড. ইউনূসের অর্থ উপার্জনের উৎসের বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ড. ইউনূসের আয়ের প্রধান উৎস তার বক্তৃতার ওপর প্রাপ্ত ফি, বই বিক্রি ও পুরস্কারের টাকা। আয়ের প্রায় সম্পূর্ণ অর্থই বিদেশে অর্জিত ও বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে আনা।

ট্রাস্ট গঠন

ড. মুহাম্মদ ইউনূস জীবনে কোনো সম্পদের মালিক হতে চাননি বলে জানায় সেন্টার। পোস্টে সংস্থাটি বলে, এত টাকা দিয়ে কী করবেন, সেটি ভাবছিলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী।

ইউনূস সেন্টারের ভাষ্য, ড. ইউনূস মালিকানামুক্ত থাকতে চান। কোথাও তার মালিকানায় কোনো সম্পদ (বাড়ি, গাড়ি, জমি, শেয়ার ইত্যাদি) নেই। সে কারণেই তিনি নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে ‘প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট’ ও ‘ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট’ নামে দুটি ট্রাস্ট গঠন করেন।

সংস্থাটি জানায়, উত্তরসূরিদের কল্যাণে মোট টাকার ৬ শতাংশ দিয়ে ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট গঠন করেন ড. ইউনূস। শুধু তাই নয়, তার পরবর্তী প্রজন্ম ছাড়া ফ্যামিলি ট্রাস্টের সম্পদ পরিবারের আর কোনো সদস্য বা পরবর্তী প্রজন্মগুলো ভোগ করতে পারবে না বলেও বিধান রাখেন তিনি। ফ্যামিলি ট্রাস্টের মূল দলিলে তিনি বিধান রাখেন, তার পরবর্তী এক প্রজন্ম পরে এই ট্রাস্টের অবশিষ্ট টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল ট্রাস্টে অর্থাৎ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্টে ফিরে যাবে।

ট্রাস্টের লক্ষ্য বাস্তবায়নে তার অবর্তমানে টাকাগুলো যাতে ট্রাস্টিদের তত্ত্বাবধানে নিরাপদে থাকে, সে কারণেই এমন বিধান বলে জানায় সংস্থাটি।

দানকর প্রসঙ্গে

ওই পোস্টে ইউনূস সেন্টার জানিয়েছে, নিজের টাকা নিজের কাছে রেখে দিলে ড. ইউনূসকে তুলনামূলক কম ট্যাক্স দিতে হতো। কারণ ব্যক্তিগত করের হার প্রতিষ্ঠানিক করের হারের চেয়ে কম।

এতে আরও বলা হয়, দানকরের প্রসঙ্গটি প্রথম তোলেন তার আইনজীবী। তিনি বলেন, ট্রাস্ট গঠন করলে তাকে দানকর দিতে হবে না। কারণ বড় ট্রাস্টটি জনকল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠিত। ফ্যামিলি ট্রাস্টের ব্যাপারে তিনি পরামর্শ দেন, এ ক্ষেত্রে (ড. ইউনূসের অবর্তমানে তার সম্পদের কী হবে, সে চিন্তায় যদি তিনি কোনো ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন) তাকে কোনো কর দিতে হবে না। কারণ এটা হবে তার অর্জিত টাকার একটি সুব্যবস্থা করে যাওয়া।

ইউনূস সেন্টারের ভাষ্য, আইনজীবীর পরামর্শেই টাকা ট্রাস্টে স্থানান্তর করার সময় ড. ইউনূস কোনো কর দেননি, কিন্তু আয়কর রিটার্ন জমার পর কর বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তাকে জানান, এ ক্ষেত্রে তাকে কর দিতে হবে। রিটার্নের যেখানে তিনি দানের তথ্যটি উল্লেখ করেছিলেন, সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তা তার ওপর দানকর ধার্য করে দিলেন।

টাকার অঙ্কটা তিনি ‘রিটার্নস’-এ উল্লেখ করায় কর কর্মকর্তা তা দেখে কর আরোপ করেন।

আদালতের শরণাপন্ন

ইউনূস সেন্টারের ভাষ্য, আইনজীবীর পরামর্শের সঙ্গে কর বিভাগের কর্মকর্তার কথার মিল না থাকায় ড. ইউনূস এ বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত চাইলে আদালত কর দেয়ার পক্ষে মত দেয়। এখানে তার কর ফাঁকি দেয়ার কোনো প্রশ্নই নেই। কর দিতে হবে কি না, এ ব্যাপারে তিনিই আদালতের সিদ্ধান্ত জানতে চান। আদালতে সরকার পক্ষ নয়, অধ্যাপক ইউনূস গিয়েছেন।

ইউনূস সেন্টার জানায়, কর বিভাগ কোনো পর্যায়ে বলেনি যে, প্রফেসর ইউনূস কর ফাঁকি দিয়েছেন। এখানে কর ফাঁকি দেওয়ার কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। প্রশ্ন ছিল আইনের প্রয়োগযোগ্যতা নিয়ে। আদালতের সিদ্ধান্তের পর এখন অধ্যাপক ইউনূস বিবেচনা করবেন, তিনি কর পরিশোধ করবেন নাকি উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত চাইবেন।

করের আইন যদি এ ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য না হয়, তাহলে দাবিকৃত ওই টাকা তিনি জনহিতকর কাজে ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন।

ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য নয়, জনকল্যাণে টাকাটা খরচ করাই তার মূল উদ্দেশ্য বলে জানায় ইউনূস সেন্টার।

বিদেশ ভ্রমণ প্রসঙ্গে

ড. ইউনূস বিদেশ ভ্রমণে বিপুল অর্থ ব্যয় করেন বলে যে অভিযোগে উঠেছে, তা মোটেও সত্য নয় বলে দাবি করেছে ইউনূস সেন্টার।

সংস্থাটি জানায়, তার বিদেশ ভ্রমণের সব ব্যয় আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বহন করে। শুধু তাই নয়, প্রতিবার ভ্রমণের সময় সফরসঙ্গী হিসেবে একজন অতিরিক্ত ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার খরচও আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বহন করে থাকে।

ইউনূস সেন্টার জানায়, নোবেলজয়ী এ অর্থনীতিবিদের বিদেশ ভ্রমণ-সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যয় তার কোনো ট্রাস্টকে বা তাকে বহন করতে হয় না। এমনকি মাঝে মাঝে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রাইভেট বিমানও পাঠিয়ে দেয়া হয়।

আয়কর রেফারেন্স মামলা

আয়কর রেফারেন্স নিয়ে করা তিনটি মামলার শুনানি শেষে ৩১ মে এনবিআরের নোটিশের বৈধতা নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চ্যালেঞ্জ খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে তাকে এনবিআরের দাবি করা ১৫ কোটি টাকা দানকর পরিশোধ করতে নির্দেশ দেয় আদালত।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৯০ সালের দানকর আইন অনুযায়ী ২০১১-২০১২ করবর্ষে ৬১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দানের বিপরীতে প্রায় ১২ কোটি ২৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা কর দাবি করে নোটিশ পাঠায় এনবিআর। একইভাবে ২০১২-২০১৩ করবর্ষে ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা দানের বিপরীতে প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা দানকর দাবি করে আরেকটি নোটিশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৩-২০১৪ করবর্ষে ৭ কোটি ৬৫ হাজার টাকা দানের বিপরীতে প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ টাকা কর দাবি করে নোটিশ দেয়া হয়। দানের বিপরীতে কর দাবি করে এনবিআরের এসব নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেন ড. ইউনূস। তার দাবি, আইন অনুযায়ী দানের বিপরীতে এনবিআর এই কর দাবি করতে পারে না।

এই মামলার শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালে খারিজ করে রায় দেয় কর আপিল ট্রাইব্যুনাল। এরপর হাইকোর্টে আলাদা তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলা করেন ড. ইউনূস।

হাইকোর্ট তার মামলার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে দানকর দাবির নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করে ২০১৫ সালে রুল জারি করে। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার রায় দেয় উচ্চ আদালত।

নিয়ম অনুযায়ী করের ১০ শতাংশ হারে ৩ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ৪৪৮ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি ১২ কোটি টাকা ড. ইউনূসকে পরিশোধ করতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর