কোভিড-১৯ মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে ডলার সংগ্রহ ও সঞ্চয়ে জোর দেয়া হলেও প্রবাসীদের জন্য বিশেষ কোনো আকর্ষণ রাখা হয়নি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে।
বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট অধিবেশনে বিদেশগামী কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানালেও তাদের জন্য নতুন কোনো আর্থিক সুবিধা ঘোষণা করেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
দক্ষতার ঘাটতির কারণে বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদের সংখ্যার অনুপাতে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি সন্তোষজনক নয় বলে সংসদে জানান অর্থমন্ত্রী। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিদেশ গমনের আগে প্রবাসে যেতে ইচ্ছুকদের অবহিতকরণ, কারিগরি ও বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা কোর্স এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশিক্ষণের গুণগতমান নিশ্চিতকরণ, দক্ষতার স্বীকৃতি, দক্ষ পেশায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, স্থানীয় প্রশিক্ষণ সনদের আন্তর্জাতিক সনদায়ন নিশ্চিত ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষায় দক্ষতা অর্জনসহ নানা কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রেখেছি। বিদেশগামী প্রত্যেক কর্মীকে মাইক্রোচিপ সম্বলিত স্মার্ট কার্ড/বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে।’
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বর্তমান সরকারের ১৪ বছরের শাসনামলে ১০ লাখ নারীসহ ৮১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪২ শ্রমিকের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে অদক্ষ ও আধা-দক্ষ ক্যাটাগরিতে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে উচ্চ আয়ের পেশায় প্রবেশের জন্য প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
নতুন শ্রমবাজারের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মূল গন্তব্যের বাইরেও পোল্যান্ড, সিসিলি, আলবেনিয়া, রোমনিয়া, স্লোভেনিয়া, উজবেকিস্তান, বসনিয়া হার্জেগোভিনিয়া ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের পাঠানো সম্ভব হয়েছে।’
হুন্ডি ঠেকিয়ে বৈধপথে দেশে রেমিট্যান্স আনতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে প্রবাসীদের দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয় সরকার। গত বছর তা বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়। এর ফলে কোনো প্রবাসী দেশে ১০০ টাকা পাঠালে, তার পরিবার ১০২ টাকা পায়। বাড়তি ২ টাকা সরকার উপহার বাবদ ভর্তুকি দেয়।
দেশে চলমান ডলার সংকটের অন্যতম কারণ রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যাওয়া। বৈধপথের তুলনায় হুন্ডি মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠালে বেশি টাকা পায় প্রবাসীদের পরিবার।
ধারণা করা হচ্ছে, এ কারণে ফের বাড়ছে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানো। রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা করে দিচ্ছে সরকার। কিন্তু হুন্ডিতে আরও বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
রেমিট্যান্সে তাই প্রণোদনা বৃদ্ধির দাবি থাকলেও, বাজেটে এ বিষয়ে কিছুই নেই।
বৃহস্পতিবার সংসদে উপস্থাপিত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য এক হাজার ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। চলতি অর্থবছরের চেয়ে যা ২৮ কোটি টাকা বেশি।
তবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৯৯০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব থাকলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমে হয় ৫৯৯ কোটি টাকা।