অধিক লাভের আশায় পেঁয়াজ মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থিতিশীল করে তোলা হয়েছে। খুচরা বাজারে পেঁয়াজ এখন প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক মাস আগেও তা ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভোক্তাপর্যায়ে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেয়া হবে বলে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পেঁয়াজ আমদানির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, আরও দুই-তিন দিন বাজার পর্যবেক্ষণের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু বেশি মুনাফার আশায় অনেকে মজুত রেখে সংকট তৈরি করে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।’
রোববার রাজধানীর বাড্ডা আলাতুন্নেছা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া ও মেধা পুরস্কার এবং গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
টিপু মুনশি বলেন, ‘ভোক্তাপর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কয়েক দিনের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান বাজার বিবেচনায় আমরা পেঁয়াজ আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
‘ইমপোর্ট পারমিট বা আইপি যেহেতু কৃষি মন্ত্রণালয় দিয়ে থাকে তাই তাদেরকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। বাজার পর্যবেক্ষণ করে তারা এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমাদের জানিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য পান সে জন্য মূলত ইমপোর্ট পারমিট বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন যেহেতু ভোক্তাদের বাজারে পেঁয়াজ কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাই আমদানি করা ছাড়া উপায় নেই। আশা করছি পেঁয়াজ আমদানির পর বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।’
বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের দিয়ে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। নির্ধারিত দামে বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে কি না তা-ও মনিটরিং করা হচ্ছে।’
একই দিন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘১৫/২০ দিন ধরে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা চলছে। হঠাৎ করে দাম বেড়ে যায়, আবার কিছুটা কমে আসে। দু-এক দিনের ব্যবধানে বাজার ওঠানামা করছে।
‘এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চার-পাঁচ দিন ধরে বাজার মনিটরিংয়ের চেষ্টা করছি। বাজারে কী হচ্ছে তা দেখছি। ৮০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। সে তুলনায় প্রতিবেশী দেশ ভারতে দাম অনেক কম। সেখান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে আমরা বাজার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে পারি।’
মন্ত্রী রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে খবর নেয়ার চেষ্টা করেছি, কৃষকদের কাছে গিয়েছি। অধিকাংশ কৃষক বলেছেন, তাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ রয়েছে। দাম বৃদ্ধি হওয়ার আশায় তারা ধরে রেখেছেন।
‘বিষয়টি নিয়ে আমরা উচ্চপর্যায়ে কথা বলেছি। পেঁয়াজ আমদানি করা হবে কী না সে বিষয়ে দুই-তিন দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানা যাবে।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করছি। গতকাল পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কমেছে। যেহেতু কমার লক্ষণ দেখা দিয়েছে তাই আমরা দু-একদিন দেখব। জানি মধ্যম আয়ের ও সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। তারপরও আমরা শেষ পর্যন্ত চাষির স্বার্থটা দেখতে চাচ্ছি।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভেতরে ভেতরে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৪৫ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।
‘গত বছর পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছিল। মজুতও ভালো ছিল। পরে অনেক পেঁয়াজ পচে গেছে।’
‘পেঁয়াজের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় দুই লাখ টনের মতো কম হয়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বছরে আমাদের ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৪০ লাখ টনের মতো। চাষিরা এবার ভুট্টা ও সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। সে কারণে উৎপাদন কিছুটা কমে গেছে।’