ঋণের অর্থ ব্যবহারের অগ্রগতি এবং অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের হালনাগাদ তথ্য জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বৈঠকে এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।
ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি আগামী নভেম্বর মাসে ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে অর্থনীতির সার্বিক অগ্রগতি মূল্যায়নের জন্য আইএমএফ প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে।
গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক দিয়ে শুরু হয় আইএমএফ প্রতিনিধি দলের দিনের সূচি।
পরে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ‘বাংলাদেশকে দেয়া আইএমএফ-এর ঋণের অর্থ ব্যবহারের অগ্রগতি সংক্রান্ত যে আলোচনা হওয়ার বিষয় রয়েছে, তার মধ্যে ডলারের বিনিময় হার একটিতে নিয়ে আসা, ঋণ সুদ হার বাজারমুখী করা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনার পদ্ধতি অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তবে ঋণ নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘সামষ্টিক অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য আইএমএফ প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কিছু কার্যক্রমকে আপডেট করা হবে।
‘ঋণ দেয়ার বিষয়ে আইএমএফের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা হয়নি। আসন্ন মুদ্রানীতিতে বেশ কিছু সংস্কার আসবে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে অন্যতম ব্যাংকের ঋণের সুদের হার বাজারভিত্তিক করতে হবে।
‘সিঙ্গেল রেটে ডলারের দর নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ১০৩ টাকা দরে ডলার বিক্রি করছে। আকু পেমেন্ট ছাড়া বড় ধরনের আউট ফ্লো নেই। ফলে ডলারের বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে না।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানির ক্ষেত্রে কোনোরকম কড়াকড়ি আরোপ করেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা ছিল সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর এলসি খোলার। অর্থনীতিতে যে ধরনের নীতি গ্রহণের প্রয়োজন হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে ধরনের নীতিই গ্রহণ করবে। এটিই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে মোতাবেক কাজ করছে।
‘এরকম পদক্ষেপকে কেউ খারাপ বলবে, আবার কেউ ভালো বলবে। তবে দেশের স্বার্থে যে ধরনের নীতি নেয়া দরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেরকম নীতি গ্রহণ করবে।’
মেজবাউল হক বলেন, ‘অনেকেই দাবি করেন যে রেমিট্যান্স বাড়লেও রিজার্ভ বাড়ে না। কারণ রেমিট্যান্স সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে আসে না। রিজার্ভ আসে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে।
‘রেমিট্যান্স বাড়লে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়বে- এ বিষয়টি এভাবে সরাসরি বলা যাবে না। কারণ রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো। রেমিট্যান্স বাড়লে মার্কেটে লিকুইডিটি বাড়ে। ব্যাংকগুলোর কাছে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কোভিডের সময় অনেক ব্যবসায়ী নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারণ সে সময় ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হচ্ছেন। ব্যাংক খাতে এ সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে।’
আইএমএফ ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর মধ্যে এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) বা বর্ধিত ঋণ সুবিধা ও এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএএফএফ) বা বর্ধিত তহবিল সুবিধার আওতায় ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৩৩০ কোটি ডলার এবং নতুন গঠিত তহবিল রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় আরও ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১৪০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে।
ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের তিন দিন পরই প্রথম কিস্তিতে আইএমএফ ছাড় করে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ দেবে আইএমএম।