কৃষিনির্ভর মেহেরপুরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দেশের অন্য জেলার চেয়ে একটু আগেই লিচুর মুকুল আসে। ফলনও আসে বেশ কিছুটা আগেভাগে। আগাম বাজারে আগাম লিচু ওঠায় দামও ভালো পাওয়া যাওয়ায় জেলার মানুষ ক্রমশ লিচু চাষে ঝুঁকছে।
কৃষি বিভাগও মৌসুমের শুরুতে আভাস দিয়েছিল, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারও লিচুর ভালো ফলন হবে।
তবে কুষ্টিয়ায় এবার তাপপ্রবাহের মাত্রা দেশের অন্য সব এলাকাকে ছাড়িয়ে গেছে। টানা রেকর্ড তাপমাত্র্রার পর তা বাড়তে বাড়তে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই করছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে অনাবৃষ্টি।
আর এই বৈরী আবহাওয়ার কারণে মেহেরপুরে গাছেই লিচু ফেটে গিয়ে ঝরে পড়ছে। এ অবস্থায় কৃষকরা লিচুর ফলন ও দাম নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা দুঃস্বপ্নে পরিণত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিভাগ চাষিদের গাছের গোড়াই পর্যাপ্ত পানি দেয়া ও গাছে পানি স্প্রের পাশাপাশি কীটনাশক ও বালাইনাশক দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
তবে চাষিরা বলছেন, এসব পরামর্শ মেনে চলার পরেও গাছে লিচু ফেটে গিয়ে মাটিতে ঝরে পড়ছে। এগুলো করেও তারা তেমন কোনো ফল পাচ্ছেন না।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৭৫০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল আনুমানিক ৭ হাজার ৫শ টন।
গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামের লিচু চাষি দুলাল বলেন, ‘এবার আমাদের শতাধিক গাছে লিচুর মুকুল আসার পর প্রচুর পরিমাণে লিচুর গুটি দাঁড়িয়েছিল। মাসখানেক আগে একবার বৃষ্টি হওয়ায় গাছে থাকা লিচু দ্রুত বাড়তে থাকে। হঠাৎ টানা দশদিনের প্রচণ্ড গরমে সব শেষ হয়ে গেল। আর হয়তো দশ থেকে পনের দিনের মধ্যে লিচু খাওয়ার উপযোগী হয়ে যাবে। এমন সময় গাছে লিচু শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে। আবার অধিকাংশ লিচু ঝরে পড়ছে মাটিতে।’
একই উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের লিচু বাগান মালিক সৈকত মেম্বার বলেন, ‘আমার প্রায় পাঁচ বিঘা লিচুর বাগান রয়েছে। প্রতিটি গাছের বয়স চৌদ্দ/পনের বছর করে হবে। শুরুতে গাছ ভর্তি মুকুল এসেছিল। সেই মুকুলের পরিচর্যা করার এক পর্যায়ে এসে এখন বিপাকে পড়ে গেছি। সব ফল গাছে ফেটে যাচ্ছে। এখন বৃষ্টি না হলে তেমন ফল পাওয়া যাবে না। ফলে লোকসানে পড়তে হবে।’
বামন্দী গ্রামের লিচু বাগান মালিক আরিফুল বলেন, ‘আমাদের গাছের লিচু আর কিছুদিন পর বাজারজাত করা যাবে। এমন সময় লিচু গাছেই ফেটে গিয়ে ঝরে পড়া রোধ করা যাচ্ছে না।’
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, ‘এ অঙ্কলের ওপর দিয়ে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। পশুপাখি, ফল-ফলারি ও জনজীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ থেকে ফল ও ফসল রক্ষায় কৃষি বিভাগ অবশ্য সার্বক্ষণিক চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।’
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, দ্রুতই বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টিপাত হলেই এ সমস্যা অনে কেটে যাবে। তাছাড়া বতর্মান সময়ে গাছের গোড়া ও গাছে পর্যাপ্ত পানি দিতে হবে। জেলায় চলতি মৌসুমে ৭৫০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল আনুমানিক ৭ হাজার ৫শ টন।
ছবি ক্যাপশনঃ মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দী গ্রামের আরিফুল ইসলামের বাগান থেকে তোলা।