বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাজধানীর নিউমার্কেটে ঈদবাজারের উল্টো চিত্র

  •    
  • ১৮ এপ্রিল, ২০২৩ ১৯:১৩

‘আগুন লাগছে নিউ সুপার মার্কেটে। আর মানুষ ভাবছে পুরো নিউমার্কেটে আগুন লাগছে। তাই কাস্টমাররা এবার নিউ মার্কেটে আসছে না। তবে রাতে কিছুটা বেচা-বিক্রি হয়।’

ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। করোনা মহামারির সময়টা বাদ দিলে ঈদের আগের এই সময়টাতে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা থাকে লোকারণ্য। মানুষের চাপে পা ফেলাই দায় হয়ে পড়ে। সেখানে এখন অনেকটাই সুনসান নীরবতা।

ভিড়ে-ভিড়াক্কার পরিস্থিতিতে ক্রেতার চাপ সামলানোর ব্যস্ততা নেই। একরকম অলস সময় কাটাচ্ছেন দোকানের মালিক-কর্মচারীরা। রাতে কিছুটা বেচা-বিক্রি হলেও দিনে দেখা মিলছে না ক্রেতার। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিলো না।

সম্প্রতি নিউমার্কেট লাগোয়া ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড আর তীব্র তাপদাহের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন দোকানিরা।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় নিউমার্কেটের ২ নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে হাতের বাম দিকে একটু এগুতেই দেখা গেল সুনসান নীরবতা। সারি সারি দোকানগুলোর সামনে চেয়ার ফেলে বসে আছেন দোকান কর্মচারীরা।

ঈদবাজারে যেখানে ক্রেতারা বার বার জিজ্ঞাসা করেও বিক্রেতার মনোযোগ আকর্ষণে হিমশিম খান সেখানে উল্টো চিত্র। সামনে দিয়ে দুই-একজন হেঁটে যেতে দেখলেই চেয়ারে বসে থাকা কর্মচারীরা বলে উঠছেন- ‘কী লাগবে ভাই, আমাদের দোকানে আসেন, এখানে সব আছে।’ নিউবাংলার প্রতিবেদক ললিতা শাড়ীজ নামের একটি দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া সময় দোকান কর্মচারী হাত উঁচু করে বলতে থাকেন- আমাদের দোকানে আসেন ভাই। এখানে সব আছে। কাছে গিয়ে জানা গেলো তার নাম মোহাম্মদ সোহেল।

সাংবাদিক পরিচয়ে কথা হলো সোহেলের সঙ্গে। বেচা-বিক্রি কেমন হচ্ছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এবারে একদমই বেচাকেনা নেই ভাই। ঈদের বাজার। অথচ সারা দিনে যা বেচাবিক্রি হয় তা দিয়ে আমাদের ইফতারির খরচও ওঠে না। এই গরমে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তার ওপর আছে আতঙ্ক।

‘আগুন লাগছে নিউ সুপার মার্কেটে। আর মানুষ ভাবছে পুরো নিউমার্কেটে আগুন লাগছে। তাই কাস্টমাররা এবার নিউ মার্কেটে আসছে না। তবে রাতে কিছুটা বেচা-বিক্রি হয়।’

কাপড়ের দোকান শাহি স্টোরের কর্মচারী রিপনের কণ্ঠেও হতাশার সুর। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে এখনও কিছু বেচাবিক্রি হয়নি। কখন হবে তাও জানি না। অথচ আগে এইরকম সময় আপনার সাথে কথা বলারও আমাদের সময় ছিলো না। কথা তো দূরে থাক, দোকানে ভীড়ের কারণে দাঁড়াতেই পারতেন না। অথচ আজ দেখেন পুরো দোকান ফাঁকা। শুধু আমার দোকানই না, আশপাশের সব দোকানেই কাস্টমার নেই। যা কাস্টমার আছে সেগুলো এই ফুটপাত থেকেই কিনে চলে যাবে। দোকানে ঢুকবে না।’

কথা হয় নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা তরিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বাসা মোহাম্মাদপুরে। এবার ঈদের কেনাকাটা প্রায় সবটাই আমি টোকি স্কয়ার আর কৃষি মার্কেট থেকে করে ফেলেছি। আজকে আমার আজিমপুরে একটু কাজ ছিলো। এইদিক দিয়ে যাওয়ার সময় এখান থেকে একটু ঘুরে যাচ্ছি। যদি মনমতো কিছু পাই কিনবো না হলে কিনব না।’

ঢাকা নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের সময় আমাদের অন্যরকম প্রত্যাশা থাকে। বিশেষ করে রোজার মাসের শেষ দুই সপ্তাহ এই প্রত্যাশা থাকে কয়েক গুণ বেশি। আগে এই সময়ে বিক্রিও হতো অনেক বেশি। কিন্তু গত কয়েক বছর নানা কারণে বেচা-বিক্রি একেবারেই কমে গেছে। কয়েক বছর গেলো করোনা। তারপর গত বছর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের কর্মাচারীদের মারামারিতে কমে যায় বেচাকেনা। আর এবার আবহাওয়া গরম আর আগুন সবকিছু থমকে দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গরম আর আগুন আতঙ্কে মানুষ এই মার্কেটে কম আসছে। তাছাড়া এখন প্রায় প্রতিটি এলাকায়ই ছোট-বড় মার্কেট হয়ে গেছে। মানুষ সেখান থেকেও কেনাকাটা করছে। তবে দিনে মানুষ কম এলেও রাতে কিছুটা বেচাবিক্রি হচ্ছে।

শুধু নিউমার্কেট নয়, ঈদের সময় চরম ব্যস্ততায় সময় কাটানো গাউসিয়া মার্কেটেও এবার ক্রেতা অনেক কম। বেশিরভাগ দোকানই ফাঁকা। দোকান মালিক-কর্মচারী আড্ডা মেরে সময় কাটাতে দেখা গেছে।

মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত পাঠান বাজার নামের শাড়ির দোকানের রাব্বি নামে এক কর্মচারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর যদি আমরা সারাদিনে দেড় লাখ টাকা বেচাবিক্রি করতাম এখন সেখানে মাত্র ১০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করছি।’

বাতায়ন শাড়ি নামের দোকানের কর্মচারী সানা দেওয়ান বলেন, ‘এখন আমরা আপনারে ডেকে গল্প করছি আর আগে আপনি ডাকলেও আমরা শুনতাম না কাস্টমারের চাপে। এখন আমরা দর-দাম করি। আর আগে কাস্টমারকে বলতাম- এই দামে বেচবো; আপনি নিলে নেন না নিলে চলে যান। আরেক কাস্টমারকে এখানে আসার সুযোগ দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বুঝতেছি না কাস্টমাররা কই যাইতাছে। কেউ তো আর কেনাকাটা বন্ধ করে দেয় নাই। কেনাকাটা তো ঠিকই চলতাছে। আমার ধারণা মানুষ অনলাইন আর নিজের এলাকাতেই কেনাকাটা শেষ করে ফেলছে। তাই এখানে কাস্টমার কম।’

একইরকম হতাশার কথা বললেন হর্কাস মার্কেট আর চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের ব্যাবসায়ীরা। তাদেরও একই কথা- ‘বেচাবিক্রি নাই।’

চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের নিচতলার বিসমিল্লাহ গার্মেন্টসের দোকানি মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এখনো বউনি করিনি ভাই। গতকালও মাত্র কয়েক হাজার টাকা বেচাবিক্রি করছি। এ রকম চললে এবার চালানও উঠবে না।’

আর হর্কাস মার্কেটের সুমাইয়া বিতানের মালিক ফয়সাল আলম বলেন, ‘এই নিউমার্কেট অঞ্চল নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যার কারণে মানুষ এই এলাকায় কম আসছে। তাই আমাদের বিক্রিও কমে গেছে।’

আর হকার্স মার্কেটে আসা ক্রেতারা বলছেন, এবারে কাপড়ের দাম তুলনামূলক বেশি মনে হচ্ছে। দামে বনিবনা না হওয়ায় ফিরেও যাচ্ছেন কেউ কেউ।

জাকিয়া সুলতানা নামে একজন গৃহিণী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানকার প্রতিটি দোকানেই যেটা পছন্দ হচ্ছে সেটার দাম বেশি চাচ্ছে। অথচ অনলাইনে এই একই কাপড় কম দামে দেখেছি। তাই না কিনেই ফিরে যাচ্ছি। সন্ধ্যায় মিরপুরে গিয়ে কিনবো।’

কারও সর্বনাশ আবার কারও পৌষ মাস

নিউমার্কেট এলাকার প্রায় সব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বেচাবিক্রি নিয়ে হাতাশ হলেও উল্টো সুর দেখা গেছে ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থিত নুরজাহান সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মুখে। সকাল বেলায়ও এই মার্কেটে মোটামুটি ভিড় দেখা গেছে। সন্ধ্যার পর সেটা আরও কয়েকগুণ বাড়বে বলে জানান এখানকার ব্যবসায়ীরা।

নুরজাহান মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত ট্রাস্ট পয়েট দোকানের কর্মচারী মোহাম্মাদ রাসেল বলেন, ‘বেচাকেনা ভালই হচ্ছে। এমনকি গতবারের চেয়েও এবার বেচাকেনা বেশি।’

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আগুন লাগা নিউ সুপার মার্কেটের বেশিরভাগ দোকানই ছিলো ছেলেদের প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জির দোকান। যেগুলো পুড়ে গেছে। আর আগুন লাগার কারণে এখন ওই মার্কেট পুরোটাই বন্ধ রয়েছে। আর আমাদের এই দ্বিতীয় তলায় সব দোকানেই ছেলেদের আইটেম। তাই আমাদের কাস্টমাররা তো আসছেই, তার ওপর আবার নিউ সুপার মার্কেটের কাস্টমাররা এখানে আসছে। তাই আমাদের এবারের বেচাবিক্রিও ভালো।’

দ্বিতীয় তলার ব্লু ফ্যাশন নামে আরেক দোকানের মালিক তানভীর আহম্মেদ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার অনেক বেচাকেনা বাড়ছে। সকালের দিকে একটু কম কাস্টমার হলেও বিকাল থেকে রাত ১টা পর্যন্ত এখই মার্কেটে পা ফেলার জায়গা থাকে না। আশা করছি গত বারের চেয়ে এবার দ্বিগুণ বিক্রি হবে।’

পাইকারি মার্কেট বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড আপনাদের ব্যবসায় কোনো প্রভাব ফেলেছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তানভীর বলেন, ‘না, বঙ্গবাজারে আগুনের কোনো প্রভাবই এখানে পড়েনি। কারণ আমাদের এখানকার বেশিরভাগ ব্যাবসায়ী আরো এক মাস আগেই দোকানে মালামাল তুলে ফেলেছিলেন। তাছাড়া আমাদের এখানকার ব্যবসায়ীরা মিরপুর, কেরানীগঞ্জসহ অন্যান্য জায়গা থেকে মোকাম করে।’

একই মার্কেটের নিচতলায় বাচ্চাদের কাপড় বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান পিয়া ফ্যাশনের মালিক মুন্না বলেন, ‘ঈদের আগে যে কয়দিন গেছে সেটা তো ভালই গেছে। কাল থেকে আরও ভালো যাবে মনে করছি। কারণ কাল থেকে সরকারি ছুটি। যেভাবে বেচাকেনা হচ্ছে আর সামনে আমাদের ধারণা অনুযায়ী বেচাকেনা হলে গতবারের চেয়েও ভালো ব্যবসা হবে প্রত্যাশা করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর