বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বঙ্গবাজারে আগুন: ৮ দিন পর ব্যবসা শুরু

  • প্রতিবেদক, ঢাকা ও প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়   
  • ১২ এপ্রিল, ২০২৩ ১৩:৪৩

বঙ্গমার্কেটে সিটি করপোরেশনের আগের সিরিয়াল নম্বর অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের দোকান বসানোর নির্দেশনা দিচ্ছেন মালিক সমিতির নেতারা। যাদের এক থেকে তিনটি পর্যন্ত দোকান ছিল, তাদের দেয়া হচ্ছে একটা চৌকি, যেটার আয়তন সাড়ে তিন ফুট বাই পাঁচ ফুট। আর যাদের এর বেশি দোকান, তাদের সে অনুযায়ী চৌকি দেয়া হচ্ছে।

আগুনে পুড়ে যাওয়া রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে চৌকি পেতে জামাকাপড় বিক্রি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।

গত ৪ এপ্রিল মার্কেটে আগুন ধরার আট দিন পর বুধবার বেলা ১১টার দিকে নতুন করে ব্যবসা শুরু করেন তারা।

অগ্নিকাণ্ডের স্থলে ইট ও বালি বিছিয়ে নিচের অংশ মার্কেটের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে, তবে ওপরে নেই কোনো ছাউনি। বিদ্যুৎ কিংবা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও নেই। এমন বাস্তবতায় তপ্ত রোদেই চৌকি বসিয়ে এক হাতে ছাতা ধরে, অন্য হাতে মাল বিক্রি করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

এই অবস্থায় কেউ কেউ ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও কয়েকজন হতাশা প্রকাশ করেছেন।

বঙ্গমার্কেটে সিটি করপোরেশনের আগের সিরিয়াল নম্বর অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের দোকান বসানোর নির্দেশনা দিচ্ছেন মালিক সমিতির নেতারা। যাদের একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত দোকান ছিল, তাদের দেয়া হচ্ছে একটা চৌকি। যেটার আয়তন সাড়ে তিন ফুট বাই পাঁচ ফুট। আর যাদের এর বেশি দোকান, তাদের সেই অনুযায়ী চৌকি দেয়া হচ্ছে।

এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার তিনটা দোকান। তাই আমি যদি তিনটা দোকান নিয়ে বসি, তাহলে তো বাকি ভাইয়েরা বিপদে পড়ে যাবে। এই দুর্যোগ মুহূর্তে নিজে কম নিয়ে হলেও সবাইকে সহযোগিতা করতে চাই আমরা।’

এদিকে খোলা মার্কেটে তপ্ত রোদের নিচে অনেকেই ছাতা হাতে তাদের চৌকিতে মালামাল উঠালেও অনেক চৌকি খালি পড়ে আছে। আবার অনেকে চৌকি বানাতে পাশের ফুলবাড়িয়া মার্কেটে ভিড় জমিয়েছেন।

ঈদের আগেই সহায়তা তহবিলের টাকা চান ব্যবসায়ীরা

খোলা মার্কেটের এক পাশে খালি চৌকিতে ছাতা হাতে নিয়ে বসে আছেন ‘তৃষা গার্মেন্টস’ নামের দোকানমালিক আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, ‘অনুদানের টাকাটা ঈদের আগে পেলে আমাদের জন্য ভালো হতো। আমরা কিছু মালামাল কিনতে পারতাম। আমাদেরকে বলেছিল ওপরে ছাউনি দিয়ে দেবে, কিন্তু এখন তো এ রকম কিছু দেখতে পাচ্ছি না। কবে কী হয় আল্লাহ ভালো জানে।

‘এই রোদের মধ্যে বসাও যাবে না, কাস্টমারও আসবে না। ওপরে টিন বা ছাউনি অথবা তেরপাল যাই দিক, একটা ব্যবস্থা করে দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে আসলে আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব না। কারণ আমাদের হোলসেল মার্কেট। এখানে রোজার শেষে এসে বেচাবিক্রি হয় না, যা হয় রোজার শুরুতে। এখন কিছু খুচরা ক্রেতা পেলে হয়তো কিছুটা আমরা চলতে পারব। মালও তো নেই। কী দিয়ে চলব? আমাদের জন্য আসা সহযোগিতাটা যদি আমরা ঈদের আগে পাই, আমাদের জন্য ভালো হবে।’

পলক কালেকশনের মালিক তোহা ফারুকী বলেন, ‘আমাদের সব শেষ। আমাদের জন্য আসা সহযোগিতাটা আমরা ঈদের আগে পেলে অনেক ভালো হতো। আমরা পুঁজি করে মালামাল কিনে ব্যবসা করতে পারতাম। এই রোদের মধ্যে বসা অনেক কষ্ট হবে। ব্যবসা তেমন হবে না। তারপরও মানুষ একটু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি মালামাল এখনও নিয়ে আসিনি। এনে কী করব? এখন কোনো ছাউনি বসায়নি। হঠাৎ যদি বৃষ্টি চলে আসে! তখন তো সব মাল ভিজে যাবে।’

মালিয়া গার্মেন্টসের মালিক মোহাম্মদ আফরুজ বলেন, ‘এই রোদের মধ্যে কষ্ট হবে। ছাতা লাগিয়ে বসতে হবে। এর মধ্যে টুকটাক যা কাস্টমার পাওয়া যায়, তাতেই চলতে হবে। সময় প্রায় শেষ। এই সময়ে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না।’

‘মিথ্যা আশ্বাস’

সুমনা গার্মেন্টস নামের দোকানের মালিক মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘এটা মিথ্যা আশ্বাস। এটা আশ্বাসের কোন কাতারে পড়ে না। আছে আর দশ দিন। কীভাবে ব্যবসা করব? পাইকারি ব্যবসা তো আর এতদিন চলবে না। ঈদের পরে এখানে বেড়া দেবে। এরপরে বহুতল ভবন হবে। আমাদের চৌকি কেনা, এটাই ব্যর্থ।

‘এই যে নিচে বালি বসিয়েছে, এই বালির মধ্যে যদি একটু পানি ছিটিয়ে দিত, তখন পানি ইটের নিচে চলে গেলে আমরা একটু ঠান্ডা আভাস পেতাম। সেটা মিথ্যা আশ্বাস ছাড়া আর কি। মানুষের শুধু শুধু হয়রানি।’

তিনি বলেন, ‘চান্দিনা সিস্টেম করা গেলে আমরা একটু বসতে পারতাম। কোনো প্রকার ছাউনি ছাড়া এখানে কীভাবে বসবে মানুষ? এই রোদের মধ্যে রোজা রেখে কীভাবে সম্ভব? আর মাল আনলে রোদের কারণে মালের অবস্থা কী হবে বোঝেন!’

পরিচিত ব্যবসায়ী চাচাকে খুঁজছেন আনোয়ারা

ছেলের জন্য ফুল প্যান্ট কিনতে বেগম বাজার থেকে বঙ্গবাজারের পুড়ে যাওয়া মার্কেটে আসেন আনোয়ারা বেগম।

তিনি বলেন, ‘২০ বছর ধরে আমি এখান থেকে ছেলেদের জন্য কাপড় কিনি। একটা দোকান থেকে কাপড় নিতাম। সেই চাচার সাথে মহব্বত হয়ে গেছে, কিন্তু যেই চাচার দোকান থেকে কাপড় কিনি ওই চাচার দোকান পুড়ে গেছে। উনি কই বসছে সেটাও খুঁজে পাচ্ছি না। চিনতেও পারছি না।

‘এখানে আসছি ওনাকে খুঁজতে। উনাকে পেলে উনার দোকান থেকে আমার ছেলের জন্য কিছু কাপড় কিনব।

আজকে না পেলে কালকে আবার আসব। তারপরও চাচাকে খুঁজব।’

ছাউনির বিষয়ে দোকান মালিক সমিতির সেক্রেটারি নাজমুল হুদা বলেন, ‘আপাতত আমরা চৌকি বসানোর দিকে নজর দিচ্ছি। এখানে অনেক সমস্যা। পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই, ইলেকট্রিসিটি নেই, ছাউনি নেই। মেয়র মহোদয় আসবেন। উনি বিষয়টা দেখবেন।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদের তত্ত্বাবধানে, করপোরেশন গঠিত তদন্ত কমিটির সার্বিক সহযোগিতায় অঞ্চল-১-এর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীলের নেতৃত্বে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডস্থল ব্যবসায়ীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়।

বঙ্গবাজারের ১.৭৯ একর জায়গাজুড়ে বালি ও ইট বিছানো হয়।

এ বিভাগের আরো খবর