মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এক মাসের ব্যবধানে দেশে গ্রাহক বেড়েছে ২৬ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪জন। ফেব্রুয়ারি শেষে মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) নিবন্ধিত হিসাব দাঁড়িয়েছে ১৯ কোটি ৬৭ লাখ ৫৯ হাজার ১৭১টি। ডিসেম্বরে তা ছিল ১৯ কোটি ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭৩টি।
রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এমন তথ্য মিলেছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে এমএফএস-এর মাধ্যমে ৯৭ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন হয়েছিল ৭৮ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারির চেয়ে ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ কমেছে। জানুয়ারিতে এমএফএসে লেনদেন হয় ১ লাখ ৫৯৩ কোটি টাকা, যা ৯ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ৯ মাস আগে ২০২২ সালের এপ্রিলে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা।
বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়, নগদসহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান এই আর্থিক সেবা দিচ্ছে। শহর থেকে গ্রামে বা গ্রাম থেকে শহরে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ডিসেম্বরে এমএফএসে লেনদেন হয় ৯৬ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। নভেম্বর, অক্টোবর ও সেপ্টেম্বরে লেনদেন হয় যথাক্রমে ৯২ হাজার ১২৫ কোটি, ৯৩ হাজার ১৩ কোটি ও ৮৭ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা।
২০২২ সালের এপ্রিলে একক মাস হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয় ১ লাখ ৭ হাজার ৪৬০ টাকা। মে মাসে তা ৭৬ হাজার ৩১২ কোটি টাকায় নেমে আসে। গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি লেনদেন হয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে লেনদেন হয় ৮৪ হাজার ৭৮ কোটি টাকা।
এমএফএসের কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদ সামনে রেখে লেনদেন আরও অনেকটা বাড়বে। কেননা এ সময় সব ধরনের পণ্যের বেচাকেনা বেড়ে যায়। তার প্রভাবে এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেনও বাড়ে।
গ্রাহকদের উৎসাহিত করতে সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের সীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন এই মাধ্যম ব্যবহার করে গ্রাহকরা দিনে এজেন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং ব্যাংক হিসাব বা কার্ড থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা করতে পারেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালুর অনুমতি দেয়। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্য দিয়ে দেশে এই সেবার যাত্রা শুরু হয়। এর পরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।
এমএফএস লেনদেন বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘বিকাশে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সেবা যুক্ত করছি। এর ফলে আমাদের গ্রাহক বাড়ছে। গ্রাহকদের আরও কীভাবে সহজে সেবা দেয়া যায়, বিকাশ তা নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘এমএফএস চালুর ফলে শুধু কম আয়ের মানুষের সুবিধা হয়েছে বিষয়টি তেমন নয়। বড় করপোরেট ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পমালিকরাও এর সুবিধা পাচ্ছেন। এখন দেশের সব বড় ভোগ্যপণ্য প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বিক্রির টাকা এই সেবার মাধ্যমে সংগ্রহ করছে। এটাকে কালেকশন সেবা বলছে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো।
‘আবার অনেক বড় শিল্প গ্রুপ তাদের শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন দিচ্ছে এমএফএসের মাধ্যমে। সরকারি ভাতা, বৃত্তি, কেনাকাটা, পরিষেবা বিল পরিশোধ- সবই করা যাচ্ছে। আবার এসব সেবার মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ ও আদায় এবং বিদেশি সংস্থার তহবিল বিতরণ কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে।’