সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেটে দেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সেটা অর্জন করা অসম্ভব। আর দেশে পণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি দুর্বল বাজার ব্যবস্থাপনাও দায়ী।
শনিবার এক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর।
‘বাংলাদেশে ডলারের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে, দাম বেড়ে যাচ্ছে: করণীয় কী’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইডিআরও) নামের একটি সংস্থা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সরকার এখনও মনে করে যে এ বছরের প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৭ শতাংশ। অসম্ভব, এটা হতেই পারে না।’
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিপিডি প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি বলেছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশে যে হারে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে সেটা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। আমাদের নীতিগুলোর মধ্যে এখনও অনেক দুর্বলতা রয়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় দাম কমার কারণে সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু সরকারের যে নীতি সেখানে বড় রকমের কোনো পরিবর্তন আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে কাঁচামালের আমদানি কমে গেছে ৩৩ শতাংশ, যেখানে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ, যেখানে মানুষের সেভিংস কম, যেখানে ব্যাংকে ডিপোজিট কমে গেছে, সাড়ে ১৬ শতাংশ থেকে কমে সাড়ে ৬ শতাংশে নেমে এসেছে...।
‘বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ অনেক কমে গেছে, আরও কমে যাবে বলে আমার ধারণা। এই অবস্থায় সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
‘এখনই আমাদের নীতিগুলোতে বড় ধরনের পরিবর্তন না আনলে এই সমস্যা চলতে থাকবে। নইলে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ অনেক বেশি থাকবে। এতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমাদের বিক্রয় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অনেকের বিক্রি কমে গেছে, মুনাফা কমে গেছে। রাজস্ব আহরণ কমে গেছে। বছরের প্রথমে রাজস্ব আহরণ ছিল ১৪ শতাংশ, পরে কমে হয়েছে ৩ শতাংশ। এটা আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে, গড়ে এটা ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
‘সরকার মনে করে আগামী ৩ মাসে তারা ১৪ শতাংশে যেতে পারবে, কিন্তু তা হবে না। কাজেই আমাদের বাস্তবসম্মত পলিসি প্যাকেজে যেতে হবে।’
পিআরআই নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘মার্কেটের সিগন্যালগুলো বুঝতে হবে। রাজস্বে কেন পতন হচ্ছে। কেন ডিপোজিট ৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনোদিন ছিল না? এগুলোকে বুঝতে হবে। আর এগুলোকে অ্যাড্রেস (মোকাবিলা) করার জন্য আমাদের পলিসি রেসপন্স নিতে হবে।’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘সুদের হার ধরে রাখা, ডলারের দাম ধরে রাখা, পুঁজিবাজারকে ফ্লোর দিয়ে পতন আটকে রাখা- এগুলো থেকে আমরা বের হতে না পারলে বাজার ব্যবস্থা কাজ করবে না। অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো থেকেও আমরা অতিসত্বর বেরিয়ে আসতে পারব না।’
আয়োজক সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক মো. তানজিল হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।