বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স। ঈদ ও পবিত্র রমজানকে উপলক্ষ করে মার্চ মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়লেও রপ্তানি আয়ে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আয় কমে ৪ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। মার্চেও সেই নেতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রোববার এমন তথ্য প্রকাশ করেছে।
মার্চে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার। এই লক্ষ্যমাত্রা গত বছর ছিল ৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে- এমন আভাষ বেশ জোরেশোরেই পাওয়া যাচ্ছিল। এর আগে নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন ছিল। ওই তিন মাসেই গড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে আসে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে সেই গতি হোঁচট খায়। ওই মাসে তা কমে ৪ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। মার্চেও সেই নেতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল।
চলতি অর্থবছরে ফেব্রুয়ারির পর মার্চ মাসেও রপ্তানি আয়ে ধীরগতি দেখা গেছে। ছবি: নিউজবাংলা
ইপিবির পরিসংখ্যান বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৪ হাজার ১৭২ কোটি ১৬ লাখ ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ০৭ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে একক মাস হিসেবে সবশেষ মার্চ মাসে ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
জুলাই-মার্চ সময়ে প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতের রপ্তানি আয় বেশ ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। আলোচ্য সময়ে পোশাক খাতের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫২৫ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এই খাতে রপ্তানি আয় ছিল ৩ হাজার ১৪৩ কোটি ডলার।
জুলাই-মার্চ সময়ে নিট পণ্যের (সোয়েটার, টি-শার্ট জাতীয় পোশাক) রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯১৩ কোটি ৭৪ লাখ ডলার, যার প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এছাড়া ওভেন পণ্যের (শার্ট, প্যান্ট জাতীয় পোশাক) রপ্তানি আয় এসেছে ১ হাজার ৬১১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
এদিকে একক মাস হিসেবে গত মার্চ মাসে পোশাক থেকে ৩৮৯ কোটি ডলারের রপ্তানি অর্জিত হয়েছে।
এছাড়া জুলাই-মার্চ সময়ে অন্যান্য প্রধান রপ্তানি পণ্য কৃষিজাত পণ্য থেকে ৬৮ কোটি ডলার, প্লাস্টিক পণ্য ১৫ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ৯১ কোটি ৯৭ লাখ এবং পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে ৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের রপ্তানি আয় এসেছে।
পক্ষান্তরে মার্চ মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে উল্লম্ফন দেখা গেছে। এই মাসে বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী সোয়া কোটি প্রবাসী সব মিলে ২০১ কোটি ৭৭ লাখ (২ দশমিক ০২ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এই অঙ্ক গত সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের মার্চের চেয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালের মার্চে ১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে। পরের মাস আগস্টে তা কিছু কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার। এর পর গত ছয় মাসের কোনো মাসেই প্রবাসী আয় ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়নি।
আর মার্চ মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সবমিলিয়ে ১৬ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ বেশি।