বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পানির নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২০ মার্চ, ২০২৩ ১৯:২০

বক্তারা বলেন, পানি সংকটে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। গত ৪০ বছরে এখানকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২০ মিটার নিচে নেমে গেছে। কালুরঘাট শিল্প এলাকাতে তীব্র পানি ঘাটতির কারণে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে শিল্পকারখানা ও স্থানীয়রা। তাই পানির নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।

দেশে দ্রুত ও অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে, দূষিত হচ্ছে ভূপৃষ্ঠের পানি। এ অবস্থায় পানির নিরাপত্তা নিশ্চিতে শিল্পমালিকদের এলায়েন্স গঠন এবং ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের প্রভাব নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সমীক্ষা পরিচালনার আহবান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ শিল্পগ্রুপগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গবেষকরা।

বিশ্ব পানি দিবস-২০২৩ উপলক্ষে রেডিসন ব্লু-চট্টগ্রাম বে ভিউতে অনুষ্ঠিত 'এক্সিলারেটিং চেঞ্জ: ডিসেন্ট্রালাইজিং দ্য কনভারসেশন অন ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপ' শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ আহবান জানান। ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশ যৌথভাবে শনিবার এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

বক্তারা বলেন, পানি সংকটে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। গত ৪০ বছরে এখানকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২০ মিটার নিচে নেমে গেছে। কালুরঘাট শিল্প এলাকাতে তীব্র পানি ঘাটতির কারণে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে শিল্পকারখানা ও স্থানীয়রা। তাই পানির নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।

বক্তারা পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিল্পগ্রুপগুলোর মধ্যে সহযোগিতার সুযোগ তৈরি এবং শিল্পের বাইরে চিন্তা করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। বৈঠকে কালুরঘাট শিল্প এলাকার শীর্ষ স্টেকহোল্ডাররা জানান, তারা ইতোমধ্যেই পানি ব্যবস্থাপনায় সর্বোত্তম ব্যবস্থা অনুশীলন শুরু করছেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর আহমেদ, যেখানে চট্টগ্রাম ও কালুরঘাটের ভারী শিল্প এলাকার পরিস্থিতি মূল্যায়ন সূচক ফলাফল এবং সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।

প্রবন্ধে বলা হয়, চট্টগ্রামে শিল্প দূষণ বাড়ছে, যা ভূপৃষ্ঠের পানির উৎসের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। ড. তানভীর আহমেদ পরিবেশ অধিদপ্তরকে পানির উৎসগুলো সংরক্ষণে শিল্পগ্রুপগুলোর উপর নজরদারি বাড়ানোর সুপারিশ করেন।

ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, 'সবাই একটি কমন ইন্টারেস্টের দিকে যাচ্ছি। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি একটি এলায়েন্স গঠন করে একটি প্ল্যাটফর্মে আসতে পারে, তবে ভবিষ্যতে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে সহজ হবে। এজন্য শিল্পখাত, গৃহস্থালীতে ভূগর্ভস্থ ও উপরিস্থ পানি ব্যবহারের প্রভাব নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের এসেসমেন্টর প্রয়োজন রয়েছে।'

তিনি বলেন, 'কমবেশি সবাই ব্যাংকে টাকা রাখেন, যেন সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবন নিশ্চিত হয়। কিন্তু পানির মত গুরুত্ব সম্পদ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যাওয়ার কথা মাথায় রাখছিনা।'

এ অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতিতে কী পরিবর্তন হচ্ছে তা জানার তাগিদ দিয়ে হাসিন জাহান বলেন, 'প্রথমে আমাদের মাটির নিচের পানির কোয়ালিটি ও কোয়ানটিটির অবস্থা জানতে হবে। জানতে হবে এটার বিপর্যয় কখন হতে পারে। আরেকটি হচ্ছে, সার্ফেস ওয়াটারকে মনিটর করা। পানির অবস্থা বুঝে আমাদের অ্যাকশনে যেতে হবে। পজেটিভ বিষয় হলো শিল্পমালিকরা অনুভব করছেন, এটা নিয়ে সংলাপ হওয়া দরকার বলে মনে করছেন।'

ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার বলেন, 'পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য পানি অপরিহার্য এবং বিশুদ্ধ পানি পাওয়া একটি মৌলিক মানবাধিকার। পৃথিবীতে দুই বিলিয়নের বেশি মানুষ পানি নিয়ে সমস্যা পোহাচ্ছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়।'

তিনি বলেন, ‌‌‌‌'দেশে শিল্প ও গৃহস্থালী ব্যবহারের জন্য মানুষ ভূগর্ভস্থ পানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, যা অতিরিক্ত উত্তোলনের কারণে দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। উপরন্তু ভূপৃষ্ঠের পানির উৎসগুলো শিল্প এবং কৃষি বর্জ্য দ্বারা দূষিত হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের লক্ষাধিক মানুষ নিরাপদ পানীয় জলের অভাব এবং পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত। শিল্প, কৃষি, মৎস্য সম্পদ এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও পানি সংকটের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে।'

কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের (কেইপিজেড) চেয়ারম্যান এবং এফআইসিসিআই-এর পরিচালক জাহাঙ্গীর সাদাত বলেন, 'শিল্পায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের দ্রুত রূপান্তর ঘটছে। যা অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশের জন্য হুমকি তৈরী করছে। শিল্প কারখানাগুলো ভূগর্ভস্থ পানির উপর অনেক বেশি নির্ভশীল হয়ে পড়েছে, যা আগামীতে ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়বে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামেও পানির ওপর নির্ভরশীল বেশ কিছু শিল্পকারখানা রয়েছে। যে কারণে গত ৪০ বছরে শহরের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২০ মিটার পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। প্রতি বছর ২ দশমিক ২ থেকে ২ দশমিক ৬৫ মিটার পর্যন্ত পানির স্তর নেমে গেছে।'

তিনি বলেন, 'নগরীর কালুরঘাট শিল্পাঞ্চলে ১৩৪ হেক্টর জমিতে ১৩৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ক্রমবর্ধমানভাবে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি এই শিল্পাঞ্চলে পানির চাহিদা তীব্র হয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের সবার দায়িত্ব হচ্ছে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ বের করা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাষ করি এই সভা শিল্প মালিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করবে এবং শিল্পাঞ্চলে পানির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করবে।'

এ বিভাগের আরো খবর