বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাংলাদেশে বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র: দূত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ১৫ মার্চ, ২০২৩ ১৩:২০

পিটার হাস বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে নাম্বার ওয়ান। আগামীতেও আমাদের বিনিয়োগের এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা এ দেশে বিদেশি বিনিয়োগে এক নম্বরই থাকব।’

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এক নম্বরে আছে এবং ভবিষ্যতেও এই স্থান ধরে রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে নম্বর ওয়ান। আগামীতেও আমাদের বিনিয়োগের এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা এ দেশে বিদেশি বিনিয়োগে এক নম্বরই থাকব।’

নারায়ণগঞ্জে বুধবার ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের (ইউএমপিএল) ৫৮৪ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেলের বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনকালে রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন।

সোনারগাঁওয়ের মেঘনাঘাটে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শনকালে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ছিলেন মার্কিন দূতাবাসের অর্থনৈতিক ইউনিটের প্রধান জোসেফ গিবলিন, ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, ইউএমপিএলের চেয়ারম্যান মো. নূর আলী, কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জহির উদ্দিন মোল্লা এবং জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) গ্যাস পাওয়ারের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) দীপেশ নন্দ।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বুধবার ইউএমপিএল ৫৮৪ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেলের বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বুধবার সকাল ৯টার দিকে হেলিকপ্টারে করে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে গিয়ে পৌঁছান পিটার হাস। সেখানে ইউএমপিএলের এমডি ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস হেলিকপ্টারে বুধবার সকালে ইউএমপিএল বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছালে ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানান ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, চেয়ারম্যান মো. নূর আলীসহ কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা

প্রকল্প অফিস প্রাঙ্গণে পৌঁছানোর পর পিটার হাস ও অন্যান্য অতিথিদের সেফটি ইন্ডাকশন দেয় প্রকল্পের ই.এইচ.এস টিম।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন (ইপিসি) প্রতিষ্ঠান জিই গ্যাস পাওয়ারের সাইট ম্যানেজার ক্যালাম ডেভিড কর্নফোর্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূত পিটার হাসকে প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থার বর্ণনা দেন।

২০১৮ সালের ২৫ জুন স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড এবং জিইর কনসোর্টিয়ামকে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানার মেঘনাঘাটে ৫৮৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সম্মতিপত্র (এলওআই) দেয় বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ। পরবর্তী পর্যায়ে নেব্রাস পাওয়ার কিউ.পি.এস.সির প্রতিষ্ঠান (নেব্রাস পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট বি.ভি.) ২৪ শতাংশ ইক্যুইটি অংশীদারত্ব নিয়ে ওই প্রকল্পে যুক্ত হয়।

প্রজেক্ট কোম্পানি (ইউএমপিএল) ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে প্রজেক্ট বাস্তবায়ন চুক্তি, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড-এর সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ চুক্তিতে সই করে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিকের (জিই) সঙ্গে টার্ন-কি ভিত্তিতে ইপিসি বা ঠিকাদারি চুক্তিতে সই করে প্রজেক্ট কোম্পানি। এ ছাড়াও জিই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোক্তাদের ওই প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ২৫ শতাংশ ইক্যুইটি বিনিয়োগ রয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের বাকি ৭৫ শতাংশ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (সুইস ECA-SERV কভার লেন্ডার), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB), জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (DEG) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (OFID) ঋণ হিসেবে অর্থায়ন করবে।

প্রকল্পের ৯২ শতাংশ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটিতে বাণিজ্যিক (কর্মাশিয়াল অপারেশন ডেট-সিওডি) উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

পরিদর্শনের সময় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে পিটার হাসকে প্রকল্পটির সর্বশেষ অবস্থা জানানো হয়। এরপর প্রকল্পটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন পিটার হাস। ওই সময় ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চেয়ারম্যান, সিইও এবং জিই গ্যাস পাওয়ারের দক্ষিণ এশিয়ার সিইও এবং জিই বাংলাদেশের কান্ট্রি লিডার উপস্থিত ছিলেন।

প্রকল্প পরিদর্শনকালে হাসকে জানানো হয় যে, ইউএমপিএলের মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সব আইন মেনে নির্মাণকাজ পরিচালনা করছে। প্রকল্পটি সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখছে।

প্রজেক্ট কোম্পানি প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে এবং প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ পুনর্বাসন এবং উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করার জন্য জীবিকা পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।

ইউএমপিএল বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনকালে বক্তব্য দেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূত পিটার হাস। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও চেয়ারম্যান মো. নূর আলী। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা

প্রজেক্ট কোম্পানি বেশ কিছু করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে সুবিধাবঞ্চিতদের মাসিক ভাতা, নদী ঘাট নির্মাণ এবং ঘাটের অ্যাপ্রোচ রাস্তা, দরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, গ্রামবাসীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা করা।

ইউএমপিএলের এমডি ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রণী ভূমিকার জন্য বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির গ্যাস টারবাইন প্রদান করায় জিইসহ যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর অবদানেরও প্রশংসা করেন।

ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি জিই ও নেব্রাসসহ বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতায় SERV, AIIB, DEG ও OPEC তহবিল থেকে বিনিয়োগ এসেছে ইউএমপিএলে। এই বিনিয়োগ বিশ্বমানের অবকাঠামো নির্মাণে সাহায্য করেছে, যা বাংলাদেশের জনগণকে পরিবেশসম্মত, নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যের বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।

তিনি আরও জানান, এটি পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ প্রকল্প। কেন্দ্রটি অন্যান্য বিদ্যমান কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের তুলনায় কম গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত করবে।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বুধবার ইউএমপিএল ৫৮৪ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেলের বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে হওয়া প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণ কমাতে বাংলাদেশ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই কেন্দ্রটি কার্বন নিঃসরণ কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে। এই কেন্দ্রে জিইর সর্বশেষ 9HA.01 গ্যাস টারবাইন ব্যবহার করা হয়েছে, যার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬২ শতাংশের চেয়েও বেশি। অন্যদিকে প্রচলিত গ্যাস টারবাইনের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।

জিইর 9HA.01 হেভি-ডিউটি গ্যাস টারবাইন জ্বালানিকে বিদ্যুতে পরিণত করতে সবচেয়ে সাশ্রয়ী হিসেবে এরই মধ্যে দুনিয়াজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছে। এ ধরনের

উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রযুক্তি অন্যান্য প্রচলিত প্রযুক্তির তুলনায় প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে, যা বাংলাদেশের গ্যাসের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতে সহায়তা করবে।

ইউএমপিএলের চেয়ারম্যান মো. নূর আলী বলেন, ‘এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের সক্ষমতার প্রতীক। এটি সর্বোচ্চ উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র। কম দামের বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে কেন্দ্রটি বিপিডিবির কাছে মেরিট অর্ডারে শীর্ষস্থান দখল করবে।’

তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা ও ভিশন ২০৪১-এর লক্ষ্য অর্জন এক ধাপ এগিয়ে যাবে।’

স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই প্রকল্পের মাধ্যমে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, তা দেখে খুশি বলেও জানান ইউএমপিএলের চেয়ারম্যান।

দীপেশ নন্দ বলেন, ‘জিই গ্যাস পাওয়ার বাংলাদেশে সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তি আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জিই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়নে বড় অবদান রেখে চলেছে।’

তিনি বলেন, ‘জিই এ প্রকল্পের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত। কেন্দ্রটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার কম হবে। জ্বালানি কম ব্যবহার হওয়ায় গ্যাস বেঁচেও যাবে। কেন্দ্রটিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রায় সাত লাখ বাসাবাড়িতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর