বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মন্ত্রী ও প্রতিনিধিদের কাছে বাংলাদেশের সক্ষমতা তুলে ধরা হয়েছে। তারা এ দেশে বিনিয়োগ করতে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশে বড় অংকের বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ফেডারেশন অফ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এসব কথা বলেছেন।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এফবিসিসিআই আয়োজিত বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের শেষ দিনে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের এমন বিজনেস সামিট আয়োজন করতে পেরে এফবিসিসিআই গর্ব অনুভব করছে। যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশের মন্ত্রী এবং ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী, ১৭টি দেশের দুই শতাধিক বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ী নেতা এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
সামিটে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সৌদি আরবের প্রতিনিধি আমাকে জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহেই তারা আমাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে কোন কোন খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা যায় তা ১৫ দিনের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা করে নির্ধারণ করা হবে।’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের একশ’ ইকোনমিক জোন হয়েছে। এগুলো কিন্তু এখনও উৎপাদনে যায়নি। কোরিয়া ইতোমধ্যে এদেশে বিশাল বিনিয়োগ করেছে। তারা বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে অনেক বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে।
‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিভিন্ন দেশের এই যে আগ্রহ, তা কিন্তু এমনই এমনই হয়নি। তারা বাংলাদেশের সক্ষমতা সম্পর্কে জেনেছে বলেই এখানে বিনিয়োগে তাদের এতোটা আগ্রহ।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ যে বিশ্বের বুকে নবম কনজ্যুমার মার্কেট হবে এটা কি মিথ্যা? যে এখানে আসবে বিনিয়োগ করতে তাকে আমার ডেকে আনতে হবে? ১৭ কোটি মানুষের এতো বড় মার্কেট, সে তো তার প্রয়োজনেই এখানে দৌড়ে আসবে। এখন অনেক উদ্যোক্তা যারা বিদেশে পণ্য রপ্তানি করেন, তারা অনেকেই এখন এদেশের বাজারে তা বিক্রি করতে চান। কারণ আমাদের নিজেদেরই সক্ষমতা হয়েছে।’
সামিটের সফলতা কী- এমন প্রশ্নের জবাবে মো. জসিম বলেন, ‘এতো বড় একটা সামিটে আমাদের অনেক সফলতা রয়েছে। পাশাপাশি কিছু জায়গায় অব্যবস্থাপনাও হয়েছে। তবে সফলতার পাল্লাই ভারী।
‘এর থেকে যদি তিনটি বিশেষ সফলতার কথা বলি তাহলে সেগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশে এই প্রথম ২০০, ৩০০ ও ৫০০ ডলার দিয়ে ৮৯৬ জন মানুষ রেজিস্ট্রেশন করে এই সামিটে এসেছেন। এটা বাংলাদেশে কখনও হয়নি। এই সামিটে ৩০০ জন ডেলিগেট এসেছেন, এটাও বাংলাদেশে প্রথম। আরেকটি সফলতা হচ্ছে, এই যে আমরা সাহস করে এটা করলাম, এতোগুলো প্যারালাল সেশন হচ্ছে, এরকম কিন্তু আগে হয়নি। তাই বলা যেতে পারে, আমাদের সফলতার পাল্লাই ভারী।’
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘এই সামিটের সব খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন প্রচার করছে। এটা তারা আগামী ৬ মাস ধারাবাহিকভাবে প্রচার করে যাবে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন আন্তার্জাতিক বিনিয়োগ আসবে। আশা করছি এই সামিট আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের সক্ষমতা তুলে ধরতে বিশাল ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’
শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এফবিসিসিআইয়ের সুবর্ণজয়ন্তী এবং ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩’ এর উদ্বোধন করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সহযোগিতায় এফবিসিসিআই এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশের মন্ত্রী এবং ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী, বিশ্বের ১৭টি দেশের দুই শতাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ী নেতারা এই সম্মেলনে অংশ নেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সৌদি আরবের বাণিজ্যমন্ত্রী ড. মজিদ বিন আবদুল্লাহ আলকুসাইবি, ভুটানের শিল্প, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী কার্মা দর্জি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) উপ-মহাপরিচালক ঝিয়াংচেন ঝাং সামিটে বক্তব্য দেন।
সামিটে উদ্বোধনীতে স্বাগত বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন।
এফবিসিসিআই দেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিদেশিদের কাছে তুলে ধরার অংশ হিসেবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে আগত বিভন্ন দেশের মন্ত্রী, প্রতিনিধিদের কাছে বাংলাদেশের টেকসই প্রবৃদ্ধির যে ভিত্তি তৈরি হয়েছে তার সাফল্যের চিত্র তুলে ধরা হয়।