‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চেয়ে বাংলাদেশে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ বিনিয়োগ পরিবেশ রয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন ও ইকনোমিক জোনসহ নানা খাতে সুবিধা রয়েছে। এখানে বিনিয়োগ করলে নানা দিক দিয়ে কেবলই সাশ্রয় আর সাশ্রয়।’
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান রোববার আন্তর্জাতিক বিজনেস সামিটে এসব কথা বলেন।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলমান সামিটের দ্বিতীয় দিনে এই সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বক্তব্য দেন তিনি।
ব্যবসায়িক ধারণা আদান-প্রদান ও পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে এই সামিটের আয়োজন করেছে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
সালমান এফ রহমান তার বক্তব্যে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, ইকনোমিক জোন ও বিনিয়োগকারীদের সু্যোগ-সুবিধার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে বিনিয়োগ করলে ৪৭ থেকে ৮৪ শতাংশ শ্রমিক খাতে সাশ্রয় হবে। ম্যানেজারস স্যালারিতে সাশ্রয় হবে ৪১ থেকে ৬৯ শতাংশ। এছাড়া ৬ থেকে ৮৯ শতাংশ সাশ্রয় হবে পানিতে, বিদ্যুতে সাশ্রয় হবে ১০ থেকে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত।’
সালমান রহমান বলেন, ‘সরকার দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। কোনো ধরনের অনিয়মকে আমরা ছাড় দেই না। আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা খাতে সুবিধা রয়েছে। সব দিক বিবেচনায় বলতে পারি- আমাদের দেশে আপনার বিনিয়োগ হবে নিরাপদ, সাশ্রয়ী।’
সামিটে অন্য বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশ উৎপাদন ব্যবস্থায় দক্ষতা আনার চেষ্টা করছে। ৬০ বিলিয়ন থেকে ২০৩১ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকার।
‘সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে বর্তমানে ভালো বিনিয়োগ পরিবেশ রয়েছে। পাওয়ার সেক্টরের জন্য আমরা ইতোমধ্যে কাতার ও সৌদি আরবের সঙ্গে কাজ করছি। গ্যাসের সমস্যা সমাধানে অভ্যন্তরীণ উৎসকেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’
সামিটের প্রথম সেশনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘আমাদের ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। বিডা ইতোমধ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছে। ডিসিপ্লিন এসেছে ই-কমার্স খাতে। ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে কাজ করছে দেশ। এ বিনিয়োগে আমাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছে এফবিসিসিআই।’
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ বলেন, ‘বিশ্বে ম্যানমেইড ফাইবারের চাহিদা বাড়ছে। শ্রমবাজার ক্রেতারা তাদের ম্যানমেইড ফাইবার পণ্য চায়। এ খাতে বিনিয়োগের সু্যোগ রয়েছে। এফবিসিসিআইর এমন সংলাপ থাকলে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আরও সহজ হবে।
‘আমাদের দেশে ভালো জব মার্কেট আছে, যেটা অন্য দেশের চেয়ে সাশ্রয়ী। ইকনোমিক জোনে ননস্টপ সার্ভিস শুরু হয়েছে। অতএব, বিদেশিরা এখানে নিরাপদে বিনিয়োগ করতে পারেন।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমাদের মেগা প্রজেক্টকে ঘিরে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। পদ্মা সেতু, টানেল, পায়রা সেতুসহ আরও অনেক উন্নয়ন হয়েছে বিনিয়োগ-ব্যবসাকে সহজ করতে। বিশ্বের মধ্যে সবুজ কারখানা সবচেয়ে বেশি আমাদের দেশে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্লিন সবুজ কারখানাটিও আমাদের দেশে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ রয়েছে আমাদের।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন, এখানে সব সুবিধা গ্রহণ করে বিনিয়োগ করুন।’
তিন দিনব্যাপী এই সামিটে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশের মন্ত্রী, ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ১৭টি দেশের দুই শতাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে এই সামিটের আয়োজন করেছে এফবিসিসিআই।
৫০ বছরে অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অর্জন এবং রপ্তানি ও স্থানীয় ভোক্তা বাজারের পাশাপাশি বিনিয়োগ সক্ষমতা বিদেশিদের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছে এফবিসিসিআই।
এই আয়োজনে এফবিসিসিআই-এর অংশীদার হিসেবে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। বিভিন্ন কৌশলগত বিষয়ে তিনটি প্লেনারি সেশন, ১৪টি প্যারালাল সেশন, বিজনেস টু বিজনেস মিট, নেটওয়ার্কিং সেশন, একটি ওপেন হাউস রিসেপশন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের জন্য গাইডেড ট্যুর রয়েছে এই সামিটে।