করোনা মহামারি শেষে তিন বছর পর রাজধানী ঢাকায় শুরু হয়েছে প্লাস্টিক পণ্যের চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মেলা। এবারের আসরটি নিয়ে ১৫ বারের মতো এবা খাতে প্রদর্শনী মেলা করে আসছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিপিজিএমইএ)। আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) এই মেলা চলবে শনিবার পর্যন্ত।
বিপিজিএমইএ ও বিসিক যৌথভাবে ১৯৮৯ সাল থেকে প্লাস্টিক মেলার আয়োজন করে আসছে। সবশেষ ১৪তম আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে।
বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের কারণে তিন বছর মেলার আয়োজন হয়নি। দীর্ঘ বিরতি শেষে এবারের মেলা নিয়ে আশাবাদী উদ্যোক্তারা। এবারের আয়োজনকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলছেন বিপিজিএমইএ’র অনেক ব্যবসায়ী নেতা।
বিপিজিএমইএ’র ভাইস চেয়ারম্যান ও ডিলাক্স প্লাস্টিকের চেয়ারম্যান কে এম ইকবাল হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিন বছর পর হলেও এই মেলার আয়োজন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। অন্য সব বারের চেয়ে এবারের মেলা অনেক গুরুত্ব বহন করছে। আমরা আশা করছি এবারের মেলায় অনেক বেশি ক্রেতা সমাগম হবে।
মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, তাইওয়ান, ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক কোম্পানি অংশ নিয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কোম্পানি রয়েছে চীনের। আর দেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৮০টি।
বিভিন্ন দেশ থেকে অংশ নেয়া এক্সিবিটররাও বেশ খুশি। ২১টি দেশের ৫৭৪টি কোম্পানি এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছে। এসব কোম্পানি ৭৪২টি স্টলে তাদের পণ্য প্রদর্শন করছে।
বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, ‘তিন বছর পর প্লাস্টিক পণ্যের অন্যতম এই মেলা শুরু হওয়ায় সবাই অনেক আনন্দিত। মেলার প্রথম দিন দর্শনার্থী ও ক্রেতা সমাগম একটু কম হবে এটাই স্বাভাবিক। আশা করা হচ্ছে এবারের এ মেলায় আগের সবগুলো আয়োজন থেকে অনেক বেশি জনসমাগম হবে। আগামী শুক্র ও শনিবার অংশগ্রহণকারীরা অনেক অর্ডার ও ক্রেতা পাবে।’
তিনি জানান, এবারের মেলায় মেশিনারিজ, মোল্ড, কাঁচামাল উৎপাদন ও সরবরাহকারী কোম্পানিসহ দেশে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্যের কোম্পানিও অংশ নিচ্ছে। কোম্পানিগুলোকে ১৫টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে।
মেলায় অংশগ্রহণকারী প্লাস্টিক ও টিন কন্টেইনার প্রস্তুতকারক কোম্পানি এক্সক্লুসিভ ক্যান-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসির বলেন, ‘এবারের মেলাটি আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তিন বছর পর এই খাতের ব্যবসায়ীরা মেলার আয়োজনে অংশ নিতে পারছেন। একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি মেলা অনেক গুরুত্ব বহন করে। কারণ এমন মেলার মাধ্যমেই একটি প্রতিষ্ঠানের সব পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ তৈরি হয়।
‘আমরা সবাই শুক্র ও শনিবারের অপেক্ষায় আছি। ছুটির দিন থাকায় ওই দুদিন অনেক ক্রেতা-দর্শনার্থী আসবে। আর মূলত ওই দু’দিনই আমাদের যা ব্যবসা হওয়ার হবে।’
জানা গেছে, বিশ্বে ৫৭০ বিলিয়ন ডলারের প্লাস্টিক-বাজার রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর এক বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের থাকা শূন্য দশমিক ১ শতাংশ শেয়ারকে ভবিষ্যতে ৩ শতাংশে উন্নীত করতে ব্যবসায়ীরা কাজ করছেন।
প্লাস্টিক খাতে বর্তমানে সারাদেশে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মাইক্রো, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অভ্যন্তরীণভাবে বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। এই খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৩ লাখ মানুষের। আর এই খাত থেকে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।