চট্টগ্রামে ভুয়া ঋণপত্র (এলসি) খুলে ৮৮২ মেট্রিক টন তৈরি পোষাকজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ২২ কোটি টাকার অধিক বিদেশে পাচার করেছে সাবিহা সাইকি ফ্যাশন নামের একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। তবে পণ্যগুলো নিজেদের নয় বলে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরকে জানিয়েছে ঢাকার মোল্লার টেক এলাকার এ প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি এরকম ১১৮ মেট্রিক টন রপ্তানিমুখী পণ্য জব্দের পর বিষয়টি কাস্টম গোয়েন্দাদের নজরে আসে। জব্দ করা এসব পণ্যের মূল্য ৩ কোটি টাকার বেশি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাকিল খন্দকার।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, রপ্তানি দলিলাদি জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকার মোল্লার টেকের সাবিহা সাইকি ফ্যাশন নামের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান পণ্য রপ্তানির নামে বিদেশে অর্থপাচার করার সংবাদ পায় কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এর ভিত্তিতে ৩১ শে জানুয়ারি পতেঙ্গার এসএপিএল কন্টেইনার ডিপোতে অভিযান পরিচালনা করে গোয়েন্দারা। অভিযানে সাবিহা সাইকি ফ্যাশনের ১৫ টি পণ্যচালানের রপ্তানি দলিলাদি জালিয়াতির বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। পণ্য চালানগুলোর বিপরীতে নথিপত্রে উল্লেখ করা ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে ভুয়া এলসির বিষয়েও নিশ্চিত হন গোয়েন্দারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি করা এসব পণ্যের বিনিময়ে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসবে না। তাছাড়া ঘোষণা অনুযায়ী, এসব পণ্য চালানে টি শার্ট এবং লেডিস ড্রেস রপ্তানির কথা থাকলেও কায়িক পরীক্ষায় বেবি ড্রেস, জিন্স প্যান্ট, শার্ট, শালসহ ঘোষণা বহির্ভূত অসংখ্য পণ্য পাওয়া যায়। তবে ১৫ টি চালানের মধ্যে নয়টি ডিপোতে পাওয়া গেলেও বাকী ছয়টি রপ্তানি সম্পন্ন হয়ে গেছে।
এরমধ্যে অভিযানের পর এসব পণ্যচালান নিজেদের নয় দাবি করে সাবিহা সাইকি ফ্যাশন নামের ওই রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করে প্রতিষ্ঠানটি।
এ নিয়ে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাকিল খন্দকার বলেন, ‘সাবিহা সাইকি ফ্যাশনের নামে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৯৪ টি পণ্য চালান রপ্তানি করা হয়। এরমধ্যে এবার ৯ টি পণ্য চালানে ১১৮ মেট্রিক টন পণ্য জব্দ করা হলেও বাকি ৮৫ টি চালানে ৮৮২ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি সম্পন্ন হয়ে গেছে। যার মাধ্যমে ২২ কোটি টাকার বেশি অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এরকম আরও কিছু রপ্তানিকারকের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’
তাছাড়া অনিয়মের বিষয়টি তদন্তে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক মো. সাইফুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা।