বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ক্যাশলেস সোসাইটি: কাজ শেষে সরাসরি অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে টাকা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ২৩:৫২

পাল্টে গেছে লেনদেন ব্যবস্থা। ক্যাশলেস দুনিয়ায় জায়গা দখল করে নিচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু মুচিই নয়, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ লেনদেনে করছে ক্যাশলেস মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে সেবা দিচ্ছে মোবাইল ফাইন্যানসিয়াল কোম্পানি ও ব্যাংক।

মতিঝিল গোল চত্বরের ঠিক পূর্ব দিকে ২০ বছর ধরে জুতা তৈরি এবং মেরামতের কাজ করেন জগদিস দাস। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এক থেকে দেড় হাজার টাকার কাজ করেন। এ ক্ষেত্রে তার ১০ থেকে ৫০ টাকার নোটই জমা হয় বেশি। সংসারের ব্যয় শেষে ঘরেই টাকা জমিয়ে রাখেন তিনি।

তবে জগদিসের নিত্যদিনের লেনদেনে এসেছে পরিববর্তন। এখন ক্যাশ টাকার লেনদেন না করলেও চলে। কাজ করিয়ে বাংলা কিউআর কোডে যুক্ত হয়ে টাকা পরিশোধ করছেন ক্রেতারা। সেই টাকা সরাসরি জমা হচ্ছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। চাহিদামতো টাকা তুলে নিয়ে বাকিটা ব্যাংকেই জমা রাখা যাচ্ছে।

জগদিস বলেন, ‘মানুষ নগদ টাকা দেয়া কমিয়ে দিচ্ছে। মোবাইলেই টাকা দেয়। এইটাই সুবিধা। কারণ টাকা হাত দিয়ে ধরতে হয় না। ব্যাংকে টাকা থাকলে নিরাপদ।’

হ্যাঁ, পাল্টে গেছে লেনদেন ব্যবস্থা। ক্যাশলেস দুনিয়ায় জায়গা দখল করে নিচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু মুচিই নয়, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ লেনদেনে করছে ক্যাশলেস মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে সেবা দিচ্ছে মোবাইল ফাইন্যানসিয়াল কোম্পানি ও ব্যাংক। বুধবার রাজধানীর বাংলাদেশ ব্যাংক ও মতিঝিলের সেনা কল্যাণ ভবনের সামনের ফুটপাতে এমন চিত্র দেখা যায়।

‘সর্বজনীন পরিশোধ সেবায় নিশ্চিত হবে স্মার্ট বাংলাদেশ’স্লোগানকে সামনে রেখে বুধবার থেকে ক্যাশলেস বা নগদবিহীন সেবা চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সেবা নিতে বা পেতে শুধুমাত্র একটা ব্যাংকের অ্যাপ থাকলেই চলবে।

অ্যাপে বাংলা কিউআর কোডের মাধ্যমে সব ব্যাংকের গ্রাহক পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। এ ছাড়া বিকাশ, এমক্যাশ, রকেটের মতো মোবাইল ফিন্যানসিয়াল সার্ভিসের অ্যাপ দিয়েও পণ্যের মূল্য পরিশোধ করা যাবে। কার্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড, ভিসা ও অ্যামেক্স এ সেবায় যুক্ত হয়েছে।

অর্থাৎ বাংলা কিউআর কোডে অংশগ্রহণকারী যে কোনো ব্যাংক বা এমএফএস অ্যাকাউন্টধারী গ্রাহক যে কোনো ব্যাংক বা এমএফএস অ্যাকাউন্টধারী মার্চেন্টকে পণ্য বা সেবা মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।

বাংলা কিউআর কোড-ভিত্তিক লেনদেনকে উৎসাহিত করতে প্রাথমিকভাবে ডাচ-বাংলা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এবি, ইস্টার্ণ, ইসলামী, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, দি সিটি, ব্যাংক এশিয়া, পূবালী ও ওয়ান ব্যাংক যুক্ত হয়েছে। প্রায় ১২০০ মার্চেন্ট নিয়ে মতিঝিলে ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ উদ্যোগটির যাত্রা শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে সারা বাংলাদেশে এই উদ্যোগটির প্রচারণা ও কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

সুফলভোগী কারা?

মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে জুতা বিক্রি করেন সবুজ মিয়া। ভ্যানের ওপরে বিভিন্ন রকমের জুতার পসরা সাজিয়েছেন তিনি। জুতাগুলোর একপাশে বাক্সের ওপর রাখা মোবাইল ব্যাংকিং রকেটের কিউআর কোড। জুতা কিনে এই কিউআর কোডের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করছেন ভোক্তারা।

চা দোকানি বাবুল মিয়া। প্রায় ছয় মাস ধরে ডাচ-বাংলার রকেটে অ্যাপসের মাধ্যমে কিউআর কোডে দোকানের বিল নেন তিনি। বলেন, ‘এতদিন শুধু রকেটের মাধ্যমে অনেকে চা-বিস্কুট খেয়ে টাকা পরিশোধ করতো। জমা হযে যেতো আমার ডাচ-বাংলার ব্যাংক হিসাবে। কিন্তু এখন অন্য সবাইও এ সুবিধা পাবেন।’

এটা ব্যবহারে কি উপকার হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সারাদিনে কিছু কিছু জমা হয়। প্রতিদিন টাকা তোলার প্রয়োজন হয় না। ব্যাংকে টাকা জমতে থাকে। মাঝে মাঝে এক হাজার টাকার ওপরেও জমা হয়। এ টাকা জমা করার চেষ্টা করি। কখনো দরকার হলে তখন টাকা তুলি। মাসে একবারে ২০ হাজার টাকাও তুলেছি। সংসারে বিপদ, প্রয়োজনে এ টাকা খুব কাজে লাগে।’

সেন্যা কল্যাণ ভবনের সামনে জুতা পালিস করেন বিজন সরকার। তিনি বলেন, ‘আগে রোদের কাজ করতাম। আজকে একটা বড় ছাতা দিয়ে গেছে। তার নিচে বসে কাজ করছি। ডাচ-বাংলা ব্যাংক আজ হিসাব খুলে দিয়েছে। তিনজন জুতা ঠিক করে ৪০ টাকা করে ১২০ টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। যা আয় করি জমাতে তো পারি না, এভাবে একটু একটু করে যা জমবে তাই লাভ।’

মতিঝিলে ফল কিনতে আসা নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘ক্যাশলেস হলে খুব সুবিধা। নগদ টাকা বহন করা ঝুঁকি। অ্যাপের মাধ্যমেই করা যাচ্ছে লেনদেন। খুচরা টাকা নিয়েও কোনো ঝামেলা নেই। বিল যেটা সেটাই পেমেন্ট হচ্ছে।’

যেভাবে কাজ করে

কিউআর-এর পূর্ণরূপ কুইক রেসপন্স। এটি একটি কন্টাক্টলেস পেমেন্ট পদ্ধতি, যেখানে কিউআর কোডটি মোবাইল অ্যাপে স্ক্যান করে দ্রুত লেনদেন করা যাবে। এর জন্য প্রথমে মোবাইলে ব্যাংক বা এমএফএস বা পিএসপির অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। অ্যাপে পিন টাইপ করে লগ ইন করে যে দোকান বা মার্চেন্ট থেকে কিনতে হবে সেখানে আউটলেট প্রদর্শিত কিউআর কোড স্ক্যান করতে হবে।

এরপর পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধ করার জন্য টাকার পরিমাণ লিখলে একটি ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) আসবে। সেই ওটিপি টাইপ করে লেনদেন সম্পন্ন করা যাবে। লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার পর পেমেন্টের কনফার্মেশন ও ডিজিটাল রিসিট পাওয়া যাবে।

কি বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘এখন এক ব্যাংকের কিউআর কোড থাকলে যে কোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন করা যাবে। এতদিন একটি ব্যাংকের কিউআর কোডে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের গ্রাহক পেমেন্ট করতে পারত।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ধরেন চা দোকানির ডাচ-বাংলা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে। এখন আপনি চা বিস্কুট খেয়ে বিল দেবেন। কিন্তু আপনার অ্যাকাউন্ট মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে বা বিকাশে। এখন কীভাবে বিল দেবেন? এটার সমাধান দেবে সর্বজনীন বাংলা কিউআর কোড। এখান থেকে যে কোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন করতে পারবেন। অর্থাৎ দোকানদারকে তার চায়ের বিল ডাচ-বাংলা কিউআর কোডে সরাসরি পরিশোধ করতে পারবেন।’

১৯৯০ সালের পরে বিশ্বে কিউআর কোডের প্রচলন শুরু হয়। বাংলাদেশে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ বাংলা কিউআর স্ট্যান্ডার্ড ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলা কিউআর কোড দিয়ে নির্দিষ্ট যেকোনো ব্যাংকের অ্যাপ ব্যবহার করে কিউআর কোড স্ক্যানের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করা যাবে। ফলে ব্যাংকের গ্রাহকদের বিভিন্ন নেটওয়ার্কের একাধিক কিউআর কোড ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না।

এ বিভাগের আরো খবর