যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির মামলা বাতিলের দুটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছে নিউ ইয়র্কের আদালত। মামলায় অভিযুক্তদের ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে মধ্যস্থতারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এর মাধ্যমে রিজার্ভের চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘রিজার্ভের অর্থ উদ্ধারে আমরা নিউ ইয়র্কে একটা মামলা করেছিলাম। বিপরীত পক্ষ মামলা বাতিলে আমাদের বিরুদ্ধে একটা মামলা করেছিল। তারা মোশন টু ডিসমিস চেয়েছিল।
‘নিউ ইয়র্ক প্রথম কোর্ট সেটা ডিসমিস করে আমাদের স্টেট কোর্টে মামলা করার নির্দেশ দেয়ার পর আমরা সেটা করি। এরপর আবার তারা মোশন টু ডিসমিস মামলা করে। ১৩ জানুয়ারি আমরা সেটার রায় পেয়েছি। সেখানে তাদের মোশন টু ডিসমিস মামলা খারিজ করে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, নিউ ইয়র্কেই মামলা পরিচালিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘স্টেট কোর্ট, আরসিবিসি ও অন্য বিবাদীদের ২০ দিনের মধ্যে তাদের জবাব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিবাদীদের মধ্যস্থতার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে মামলার সব কাজ নিউ ইয়র্কে পরিচালিত হওয়া আমাদের জন্য বড় অ্যাডভানটেজ। কারণ বিষয়টি সেখানেই হয়েছে। আমরা চাইছিলাম ওখানেই যেন বিচারটা হয়।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিউ ইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট বা স্টেট কোর্ট ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন বা আরসিবিসি ও ছয় আসামির করা মামলা বাতিলের আবেদন ১৩ জানুয়ারি খারিজ করে দিয়েছে। পাশাপাশি এ মামলার অভিযুক্ত অপর আসামি কিম অংয়ের মামলা বাতিলের আবেদনও খারিজ করে দেয়া হয়েছে।
নিউ ইয়র্কের আদালতের এ রায়ের ফলে বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির মামলার অভিযুক্ত ফিলিপাইনের আরসিবিসি, কিম অংসহ ১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা চলার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা নেই।
বিএফআইইউ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অফ নিউ ইয়র্ক বা ফেডারেল আদালতে ফিলিপাইনের বেসরকারি খাতের ব্যাংক আরসিবিসিসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। চুরি হওয়া রিজার্ভের অর্থ উদ্ধারে এ মামলা করা হয়। পরে ওই মামলা বাতিলে সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন করে আরসিবিসিসহ ছয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ফেডারেল আদালত ২০২০ সালের ২০ মার্চ মামলা বাতিলের ওই আবেদন খারিজ করে মামলাটি ফেডারেল আদালতের বদলে স্টেট কোর্টে পরিচালনার নির্দেশ দেয়।
ফেডারেল আদালতের ওই নির্দেশনার পর ২০২০ সালের ২৭ মে নিউ ইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট তথা ডিস্ট্রিক্ট আদালতে নতুন করে মামলা করে বাংলাদেশ। নতুন আদালতেও মামলা বাতিলের আবেদন করে আরসিবিসিসহ ছয় আসামি। তাদের এ আবেদনের ওপর একাধিক দফা শুনানি হয়।
এদিকে সবশেষ ১৩ জানুয়ারি নিউ ইয়র্ক ডিস্ট্রিক্ট আদালত যে রায় দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, নিউ ইয়র্কের ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ক্ষেত্রে আরসিবিসির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যোগসাজশ ছিল।
আরসিবিসির নিউ ইয়র্কের হিসাব এবং আরসিবিসির ফিলিপাইনের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সহযোগিতা না থাকলে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে এ অর্থ অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ ছিল না। নিউ ইয়র্কের আদালত আরসিবিসিসহ অভিযুক্ত আসামিদের ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের জবাব দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে মধ্যস্থতারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে নিউ ইয়র্কের ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ১ হাজার ৬২৩ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১০ কোটি টাকা) চুরির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দুই কোটি ডলার শ্রীলঙ্কা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি আট কোটি ডলারের বেশি ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক হয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যায়। ওই অর্থ এখনও ফেরত পায়নি বাংলাদেশ। সেই অর্থ উদ্ধারে মামলা চলছে নিউ ইয়র্কের আদালতে।