ব্যাংকের আমানতের ওপর সুদ হারে বেঁধে দেয়া সীমারেখা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমানতের সুদ হার নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারবে। অর্থাৎ গ্রাহককে ইচ্ছেমতো হারে সুদ দিতে পারবে প্রতিষ্ঠান।
রোববার চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে এ কথা বলা হয়েছে। মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
আমানতে সুদের সীমা পুরোপুরি তুলে নেয়া হয়েছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, ‘এখন থেকে ব্যাংকগুলো সামর্থ্য অনুযায়ী আমানতের সুদ দেবে।’
আমানত কমে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে গভর্নর বলেন, ‘আমানত কমেনি, আমানতের প্রবৃদ্ধি কমেছে। আগে আমানতের প্রবৃদ্ধি অনেক ছিল। এখন সেটা ৮ শতাংশে নেমে গেছে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ ব্যক্তি আমানত। এই আমানত ঠিকই আছে। কমেছে সরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানত।
ভোক্তা ঋণে সুদ হার ১২ শতাংশ
নতুন মুদ্রানীতিতে ভোক্তা ঋণের সুদ হার বাড়ানোরও ঘোষণা দেয়া হয়েছে মুদ্রা নীতিতে। ভোক্তা ঋণে সুদ হার ৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করা হয়েছে। তবে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদ আগের মতোই ৯ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে সুদ হার ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। বর্তমানে ব্যাংকের সব ধরনের ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশে বেঁধে রাখা হয়েছে। এখন সেখানে ভোক্তা ঋণের সুদ হার বাড়িয়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত করতে পারবে ব্যাংকগুলো।
তবে শিল্পঋণসহ অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রে সুদ হার বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, অন্যান্য ঋণের বেঁধে দেয়া সুদ হার তুলে নেয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন থাকবে।
ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ রেখে নীতি সুদ হার বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে গর্ভনর বলেন, ‘আমরা একটা ভালো সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি। যখন ইকোনমিক অবস্থা ভালো হবে তখন আস্তে আস্তে ঋণের সুদ হার তুলে নেয়া হবে। এখন ৯ শতাংশ সীমা তুলে দিলে ১৮ শতাংশ সুদে কে বিনিয়োগ করবে?’
২০২০ সালের এপ্রিল মাসে আমানত-ঋণের সুদ হার নিদির্ষ্ট করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন ঠিক হয় ক্রেডিট কার্ড ছাড়া যেকোনো ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার হবে ৯ শতাংশ, আর আমানতের সর্বোচ্চ সুদ হার হবে ৬ শতাংশ।
করোনা শুরুর আগে দেশের প্রায় সব বেসরকারি ব্যাংক আমানতের তীব্র সংকটে ছিল। তখন বেশি সুদের অফার দিয়ে অন্য ব্যাংকের গ্রাহককে নিজ প্রতিষ্ঠানের দখলে নেয়ার প্রতিযোগিতায় ছিলেন ব্যাংকাররা।
কিন্তু করোনোর প্রাদুর্ভাবের শুরুতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতি হারালে ঋণের চাহিদা যায় কমে। বিনিয়োগ-খরায় দেশের মুদ্রাবাজারে তৈরি হয় অলস তারল্যের পাহাড়।
এমন পরিস্থিতিতে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগী হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০২১ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার দিয়ে জানায়, ‘মেয়াদি আমানতে সুদ হার আগের তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির কম থাকা চলবে না।’
বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতি যেখানে উঠেছে, তাতে ব্যাংকগুলোকে আমানতের সুদ হারও বাড়াতে হয়। সবশেষ মূল্যস্ফীতির যে তথ্য পরিসংখ্যান ব্যুরো দিয়েছে সেখানে দেখা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। কিন্তু ঋণের সুদ নির্দিষ্ট থাকায় ঋণ ও আমানতের সুদের মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এ জন্য ব্যাংকগুলো ঋণ ও আমানতের সুদ হার তুলে নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল।