শহর থেকে গ্রামে বা গ্রাম থেকে শহরে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে একক মাস হিসেবে গত বছরের নভেম্বরে লেনদেন কিছুটা কম হয়েছে।
নভেম্বরে এমএফএসের মাধ্যমে টাকা পাঠানো, উত্তোলন, বেতন-ভাতা সবকিছু মিলিয়ে লেনদেনে হয়েছে ৯২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। অক্টোবরে যা ছিল ৯৩ হাজার ১৩ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৮৮৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা (এমএফএস) দিচ্ছে। ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’ একই ধরনের সেবা দিচ্ছে। তবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এই হিসাবে এতদিন অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদন থেকে নগদ-এর মাধ্যমে করা লেনদেনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয় ৮৭ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। আগস্টে লেনদেনে ছিল ৮৭ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। জুলাই মাসে ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়। জুনে লেনদেন ৯৪ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।
২০২২ সালের এপ্রিলে একক মাস হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন লাখ কোটি টাকা ছাড়িযে যায়। লেনদেন হয় ১ লাখ ৭ হাজার ৪৬০ টাকা।
নিবন্ধিত গ্রাহক বেড়েছে
নভেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনে কমলেও নিবন্ধিত গ্রাহক বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, নভেম্বরে নিবন্ধিত হিসাব ১৮ কোটি ৮৫ লাখ ৫৯ হাজার ৭৩৬টি। এর আগে অক্টোবর মাস শেষে নিবন্ধিত হিসাব ছিল ১৮ কোটি ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৫৯৩টি। এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হিসাব বেড়েছে ১০ লাখ ৩৬ হাজার ১৪৩টি।
এসব হিসাবের মধ্যে পুরুষ গ্রাহক ১০ কোটি ৯০ লাখ ৩৬ হাজার ৭৭৪ জন এবং নারী গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৯০ লাখ ৮৯ হাজার ৩৫০ জনে। অক্টোবরে সারাদেশে পুরুষ গ্রাহক ছিল ১০ কোটি ৮৬ লাখ ২১ হাজার ৮২৪ জন এবং নারী সাত কোটি ৮৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১৬ জন।
এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৩১ হাজার ৪০৫টি। অক্টোবরে এজেন্ট ছিল ১৫ লাখ ২১ হাজার ৮০৩টি।
অন্যান্য সেবা
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন আর শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ নেই বরং এর মাধ্যমে দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও মোবাইলে রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে।
রাজধানী ও জেলা শহরে গাড়িচালক ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। শ্রমজীবীরাও এখন এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন।
নভেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠানো হয়েছে ২৯ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা। আর উত্তোলন করা হয়েছে ২৬ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা।
এমএফএস সেবায় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে ২৫ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় দুই হাজার ৭২০ কোটি টাকা।
বিভিন্ন পরিষেবার দুই হাজার ৭২ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় এবং কেনাকাটার তিন হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
লেনদেন উৎসাহিত করতে সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনের সীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকরা দিনে এজেন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং ব্যাংক হিসাব বা কার্ড থেকে ৫০ টাকা জমা করতে পারেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।