শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন বা বিএসসির শেয়ারের প্রতি গত দুই দিন থেকে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। বাড়ছে লেনদেন ও শেয়ার দর।
গুঞ্জন রয়েছে, নতুন কয়েকটি জাহাজ কেনার উদ্যোগের খবরেই আগ্রহ বাড়ছে। তবে জাহাজ কেনার সিদ্ধান্তের খবরটি এক বছরের পুরনো। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে ৬টি জাহাজ কেনার খবর জানিয়েছিল বিএসসি। এর মধ্যে চারটি জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে সম্প্রতি।
তবে জাহাজ কেনার খবরটিই যে শেয়ারটির কদর বাড়িয়েছে, তা মনে করেন না বিশ্লেষক ও বাজার-সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, পুরনো খবরকে পুঁজি করে কারসাজি করছে জুয়াড়িরা।
ডিএসইতে বুধবার শেয়ারটি টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। কোম্পানির ৩৩ লাখ ১৯ হাজার ৪৩৬টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৪১ কোটি ৩০ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। এদিন ৪ টাকা ৩০ পয়সা বা ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ শেয়ারটির দর দাঁড়ায় ১২৪ টাকা ৪০ পয়সা, যা আগের দিন ১২০ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল।
মঙ্গলবারও লেনদেনের শীর্ষে ছিল শেয়ারটি। ওইদিন ৫ টাকা বা প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ দর বাড়ে। দিন শেষে ৩২ কোটি টাকার সমপরিমাণ শেয়ারের হাতবদল হয়।
করোনাকালে জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিটির আয়ও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তাতে বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৪৭ টাকা। বুধবার দিন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৪ টাকা ৪০ পয়সা। অবশ্য সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ১৬৮ টাকা ৯০ পয়সায় উঠেছিল।
নতুন করে আগ্রহ বাড়ার বিষয়ে জাহাজ কেনার উদ্যোগের খবরটি কতটুকু যৌক্তিক জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছু না পেলে যা হয়। কিছু লোক এটার পেছনে ছুটেছে। আবার কিছুদিন পরে মরীচীকা হয়ে যাবে।
‘ওই খবরটাই আবার নতুন করে আসছে। এটাও তেমন কোনো খবর না। জাহাজ কিনে লাভ করে তারপর না মানুষকে দেবে। কিছু লোক আছে, যারা এগুলো নিয়ে জুয়া খেলে। জুয়া খেলা এসব খবর-টবর কিছু মানে না। আর কিছু লোক আছে, বাড়বে শুনেই এটার পেছনে দৌড়ায়।’
তবে কোম্পানির আয় বৃদ্ধির বিষয়টি কদর বাড়িয়ে থাকতে পারে বলেও মনে করেন অনেকে। ডলার সংকট ও করোনার কারণে শেয়ারবাজারের বেশির ভাগ কোম্পানির আয় কমলেও বিএসসির আয় বাড়ে কয়েক গুণ।
২০২১ সালে কোম্পানির বার্ষিক মুনাফা হয়েছিল ৭২ কোটি ২ লাখ ১০ হাজার। কিন্তু ২০২২ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে সেটি দাঁড়ায় ২২৫ কোটি ৮০ লাখ ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় মুনাফা বেড়েছে ৩ গুণের বেশি।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, উল্লিখিত তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস ছিল ৩ টাকা ৯৮ পয়সা। ২০২১ সালের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪ টাকা ৩৪ পয়সা।
ওই সময়ে কোম্পানিটির আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বাড়লেও খরচ বেড়ে যাওয়ায় মুনাফা কম হয়েছে। এ কারণে ইপিএস কমেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত বছর যে ৬টি জাহাজ কেনার ঘোষণা দিয়েছিল বিএসইসি, তার মধ্যে চারটি জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কোম্পানির পর্ষদে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়েছে। সরকারের দিক থেকেও নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে চূড়ান্তভাবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে এ সংক্রান্ত প্রকল্প সরকারের একনেক সভায় অনুমোদনের পর।
এ বিষয়ে বিএসসির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগের বছরে যে ৬টি জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেটারই চারটি জাহাজ কেনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন এ সংক্রান্ত প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। যেহেতু জিটুজি ভিত্তিতে এসব জাহাজ কেনা হবে, তাই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একনেকে অনুমোদনের পরই জাহাজ কেনার উদ্যোগটি কার্যকর করা হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জিটুজি বা সরকারের সঙ্গে সরকারের ঋণ চুক্তির আওতায় এ জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চীন সরকার এ বাবদ বাংলাদেশকে ঋণসহায়তা দেবে। তাই সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের পরই জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। যে চারটি জাহাজ কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে, সব কটিই তেল বহনকারী ট্যাংকার। চীনেই এসব জাহাজ তৈরি হবে।
বর্তমানে বিএসসির বহরে আটটি জাহাজ রয়েছে। তার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে একটি জাহাজ ইউক্রেন বন্দরে হামলার শিকার হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় ইউক্রেনের সমুদ্রসীমায় পড়ে আছে। বাকি সাতটি জাহাজে পরিবহন কার্যক্রম চলমান। এ সাতটি জাহাজের মধ্যে তিনটি ট্যাংকার।
তবে নতুন করে যেসব ট্যাংকার জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলোর পরিবহন সক্ষমতা আগেরগুলোর দ্বিগুণেরও বেশি। নতুন জাহাজগুলোর একেকটির পরিবহন সক্ষমতা হবে সর্বনিম্ন ৮৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ১০ হাজার টন।