দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ও জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান বলেছেন, নানা বাধাবিপত্তি ও চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ২০২২ সালে প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হয়েছে রপ্তানি। বিশেষ করে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে রপ্তানিতে উল্লম্ফন সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। এই রপ্তানি আয়ের ওপর ভর করে ঘুরে দাঁড়িয়ে করোনাভাইরাস মহামারির আগের অবস্থায় ফিরে যাবে দেশের অর্থনীতি। গত বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ আশার কথা শুনিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিউজবাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে পণ্য রপ্তানিতে চমকের পর চমক দেখিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। নভেম্বরের পর ডিসেম্বরেও পণ্য রপ্তানি থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে। আগামী দিনগুলো কেমন যাবে?
এটা খুশির খবর যে, দুই-আড়াই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতিতেও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা আমরা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫২ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকেই এসেছিল ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। শতাংশ হিসাবে মোট রপ্তানির ৮২ শতাংশই এসেছিল পোশাক খাত থেকে। আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এই ছয় মাসে মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশের বেশি এসেছে পোশাক থেকে।
বিস্ময়কর হলো এই কঠিন বিশ্ব পরিস্থিতিতে শেষ দুই মাসে, অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বর দুই মাসেই ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। নভেম্বর মাসে এসেছে ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। আর ডিসেম্বরে এসেছে আরও বেশি ৫ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে এর আগে কখনোই কোনো একক মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় আসেনি। সামগ্রিকভাবে বলা যায়, নানা বাধাবিপত্তি ও চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বিদায়ী ২০২২ সালে রপ্তানি ভালো হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হয়েছে।
নভেম্বর মাসে আমাদের রপ্তানি আয়ে রেকর্ড হয়। ডিসেম্বর মাসে সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড হয়। গত বছর (২০২২ সাল) তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার, যেটা আগের বছর ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলারের মতো। ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি বেড়েছে এক বছরে। এর কারণ আমরা করোনা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অনেক কাজ করেছি; বিভিন্ন বাজারে গিয়েছি। আমাদের বড় বাজারগুলোতে গিয়েছি। এমার্জিং মার্কেটেও গিয়েছি।
রপ্তানি ধরে রাখতে পেরেছি, এর বড় কারণ হচ্ছে আমাদের কাঁচামালের দাম কিন্তু বেড়ে গেছে। তুলা, কাপড়, কেমিক্যাল সবকিছুর দাম বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ফ্রেইট কস্ট বা কনটেইনার কস্ট কিন্তু অনেক বেড়েছে। ফলে আমাদের গার্মেন্টেসে ইউনিট প্রাইস অনেক বেড়েছে। পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। এ ছাড়া ভ্যালু অ্যাডেড অনেক প্রোডাক্টের অর্ডার নিতে পেরেছি। বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করতে পেরেছি। ফলে বাংলাদেশ এখন দামি পণ্যের অর্ডারও পাচ্ছে। আগে বাংলাদেশে ১৫ ডলারের জ্যাকেট হতো। এখন বায়াররা আমাদের এখানে ৩০-৪০ ডলারের জ্যাকেট অর্ডার করছে। আমরা নতুন মার্কেটগুলোতে ঢুকতে পেরেছি; বেশি দামি পণ্য রপ্তানি করতে পেরেছি। আবার পণ্যের দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে রপ্তানি বেড়েছে।
তাহলে কী আশা করা যায়, রপ্তানি আয়ের ওপর ভর করেই ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশের অর্থনীতি?
২০২৩ সালে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। আমাদের পোশাকের প্রধান দুই বাজার আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে ঋণের সুদের হার অনেক বেড়েছে; মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমেছে। এখন শীত চলছে। এ সময় জ্বালানি খরচ অনেক বেশি। খাদ্যের খরচ বেড়েছে। ঋণের টাকা ফেরত দেয়ার পর তাদের কাছে আর টাকা থাকছে না, যেটা দিয়ে তারা কাপড় কিনবে। তাই আগামী দিনগুলো ভালো যাবে, এটা বলা যাচ্ছে না।
গত নভেম্বর-ডিসেম্বরের রপ্তানি আয়ের উল্লম্ফনের তথ্যে সার্বিকভাবে রপ্তানি বাণিজ্যে রমরমা অবস্থা চলছে, এটা বিচার করলে কিন্তু ঠিক হবে না। গত কয়েক মাস ধরে আমাদের অর্ডার কমছে। পণ্যের দাম বেড়েছে, কিন্তু পরিমাণ কমেছে। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে কমেছে। চলতি জানুয়ারি মাস, আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে আমাদের রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আমাদের কারখানায় অর্ডার কম আছে এখন। ক্রেতারা এখন অনেক অর্ডার হোল্ড করছে। কারণ তারা সন্দিহান যে, সামনে কী হয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কিছুদিন আগে বলেছে, ২০২৩ সালে পুরো বিশ্বের ৩ ভাগের এক ভাগ মন্দায় চলে যাবে। এটা খুবই বিপজ্জনক, সেটার লক্ষণ আমরা ইতোমধ্যেই দেখতে পাচ্ছি। সুতরাং আমাদের এখন যে জিনিসটা করতে হবে, সেটা হলো বাজারটা ধরে রাখা। ২০২১ থেকে ২২ সালে বাজার বড় হয়েছে; আমরা মার্কেটের দখল বাড়াতে পেরেছি। ২০২৩ সালে বাজার কিন্তু আর বড় হবে না; উল্টো ছোট হয়ে যাবে। আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের শেয়ারটাকে ধরে রাখার জন্য, কিন্তু যেহেতু পুরো বাজার ছোট হয়ে যাবে, সেহেতু আমাদের বাজার ছোট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চেষ্টা করছি বাজার বাড়াতে।
আমাদের এখন সবার সাপোর্ট দরকার। আমরা যে চাকরিগুলো তৈরি করেছি বিগত বছরগুলোতে, এমনকি সংকটের মধ্যে ২০২২ সালেও কিন্তু আমরা নতুন অনেক মানুষকে চাকরি দিয়েছি। এই চাকরিগুলোকে ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছি, কিন্তু এটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন চাকরি তৈরি করা অসম্ভব; বরং বর্তমান চাকরিগুলো ধরে রাখার জন্য আমাদের সব ধরনের কাজ করতে হবে। আর এর জন্য সবার সহযোগিতা দরকার।
সরকারের করছাড়, ক্রেতাদের সাপোর্ট, একই সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের সহযোগিতা দরকার। এই কঠিন সময়ে কীভাবে এই খাতকে টিকিয়ে রাখা যায়, কীভাবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারি, সেই কাজটা করে যাচ্ছি। ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাস ভালো যাবে না। এরপর যুদ্ধের ওপর ডিপেন্ড করছে কী হবে। আগামী কয়েকটি মাস পর বোঝা যাবে, কী হবে, তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, এই সমস্যা কিন্তু শুধু আমাদের নয়, সারা পৃথিবীতেই একই সমস্যা।
এ ছাড়া এটা নির্বাচনের বছর। ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথমেই দেশে জাতীয় নির্বাচন হবে। সে জন্য ২০২৩ সালটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমিকদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি এখন কোনো সমস্যা হয়, দেশে যদি রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়, হরতাল-অবরোধ-জ্বালাও-পোড়াও শুরু হয়, তাহলে কিন্তু এখান থেকে আমাদের বায়াররা চলে যাবে; রপ্তানি খাত ধাক্কা খাবে।
২০২২ সালটা বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের জন্য ভালো বছর ছিল না। বৈদেশিক মুদ্রার ওপরে চাপ আছে। ২০২৩ সালেও এই চাপ থাকবে। চাপ কমাতে হলে আমাদের প্রচুর সাপোর্ট দরকার। মনে রাখতে হবে, রপ্তানি আয় থেকে বিদেশি মুদ্রা দেশে না আসলে রিজার্ভ আরও কমে যাবে; অর্থনীতি আরও চাপের মধ্যে পড়বে। রাজনৈতিক নেতাদের এই বিষয়টি খুব ভালোভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।
গত এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ২৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এতে রপ্তানিকারকরা কতটা লাভবান হয়েছেন?
এ কথা আমি অকপটে স্বীকার করছি, ডলারের দাম বাড়াতে আমাদের লাভ হচ্ছে। দেরিতে হলেও এটা হয়েছে। অন্যান্য দেশে কিন্তু আরও আগেই তাদের মুদ্রা ডিভ্যালুয়েশন করেছিল। আমাদের প্রধান প্রতিযোগী চীন, ভারত, ভিয়েতনামও করেছিল, কিন্তু আমরা অনেক দেরিতে এই কাজটা করেছি। এই যে রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফনের কথা বলা হচ্ছে, তাতে ডলারের দাম বৃদ্ধির অবশ্যই অবদান আছে। বিশ্ব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখেই সবকিছু তুলনা করতে হবে।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল চালু হয়েছে বিদায়ী বছরে। এ দুটি মেগা প্রকল্প দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে?
অবশ্যই বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। খুশির খবর হচ্ছে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এরই মধ্যে অবদান রাখা শুরু করেছে। মেট্রোরেলও কাজ করবে এখানে। একদিকে এই দুটি বড় প্রকল্প বিশ্ব অঙ্গনে আমাদের ভাবমূর্তি বা ইমেজ অনেক ইমপ্রুভ করেছে। অন্যদিকে অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে, তবে তাড়াতাড়ি আমাদের অন্যান্য মেগা প্রকল্পগুলো শেষ করতে হবে। যেমন: বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে হবে। এটা অনেক দিন ধরে আটকে আছে। এ প্রকল্পের কাজ ঠিকমতো না হওয়ার কারণে অর্থনীতিতে উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে।
আমি সরাসরি প্রতিদিন যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি এটা জুনের মধ্যে শেষ হবে। এরপর ঢাকা-চিটাগাং রোডের কাজগুলো করতে হবে। ঢাকা এয়ারপোর্টের থার্ড টার্মিনালের কাজগুলো চলতি বছরের অক্টোবরে শেষ হবে বলে আশা করছি। কর্ণফুলীতে বঙ্গবন্ধু ট্যানেল আগামী কয়েক মাসের মধ্যে চালু হওয়ার কথা। এগুলোর সব ইতিবাচক বলে মনে করি। প্রকল্পগুলোতে সারা বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি আরও ভালো হবে। পাশাপাশি বস্ত্র খাত এটার দ্বারা উপকৃত হবে।
বাজারে এখনও ডলার সংকট চলছে। অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করছেন, তারা পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে প্রয়োজনীয় ডলার পাচ্ছেন না। পোশাক শিল্প মালিকরা কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন?
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমরা চাপে আছি। সেই কারণে সরকার একটু কড়াকড়ি করেছে। গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে যেহেতু আমরা কাঁচামাল আমদানি করি, এর ভিত্তিতে কিন্তু রপ্তানি করছি। ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলছি, ইমপোর্ট করছি। কাঁচামাল আমদানিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশও চাপের মধ্যে পড়েছে। এতে সরকার বা অন্য কারও কোনো দোষ নেই। আমরা তো চোখের সামনে দেখছি, সরকার সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে কৃচ্ছসাধন করছে; নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে আমরা ভালো আছি। শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের কথা না হয় বাদই দিলাম। ইউরোপের অনেক বড় বড় দেশের চেয়েও ভালো আছি আমরা। ২০২৩ সালে যে চ্যালেঞ্জগুলো সামনে আছে, সেগুলো যদি সবাই মিলে মোকাবিলা করতে পারি, তাহলে করোনার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারব। আর এতে অবশ্য তৈরি পোশাকশিল্প বড় অবদান রাখবে বলে মনে করি।
মূল্যস্ফীতির চাপে পোশাক শ্রমিকরা কষ্টে আছেন। তারা যে বেতন পাচ্ছেন, এই চড়া বাজারে তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি বা অন্য কোনো সহায়তার বিষয়ে ভাবছেন কী?
আমাদের শ্রমিকদের বছরে মিনিমাম একবার করে ইনক্রিমেন্ট হচ্ছে। কারও কারও দুবার বেতন বাড়ছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন কারখানায় কম দামে পণ্য দেয়ার চেষ্টা করছি। অনেক কারখানার পাশে টিসিবির ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। সেখান থেকে কম দামে পণ্য কিনতে পারছেন শ্রমিকরা। অনেক কারখানার মালিক নিজ উদ্যোগে কম দামে প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি প্রতিটা কারখানায় এটা চালু করতে।
রেশনের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি। টিসিবি আমাদের কারখানার কাছে চাল-ডাল বিক্রি করছে কম দামে। আমরা চাচ্ছি রেশনিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিকদের পণ্য দিতে। আশা করি সরকার সেটা করবেন। কারখানাগুলোকে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য বলছি।
শোনা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং চীনে নতুন করে কোভিড পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এ দেশ থেকে অনেক অর্ডার বাংলাদেশে আসছে। ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকেও কিছু অর্ডার আসছে। সব মিলিয়ে আগামী দিন কেমন যাবে?
বলা খুব কঠিন। এ কথা ঠিক যে, চীন-ভিয়েতনাম থেকে কিছু অর্ডার আগেও এসেছিল, এখনও আসছে, কিন্তু বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে অর্ডার ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আর আমরা আমাদের দক্ষতা কতটা বাড়াতে পারি সেটা দেখার বিষয়। এ সময় কী কাজ করছি সেটার ওপর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ইউনিয়ন লিডার এগুলোর ওপর অর্ডার নির্ভর করে। গত দুই বছরে যেভাবে বিনিয়োগ করেছি, শ্রমিকদের নিরাপত্তা বাড়িয়েছি, নতুন যন্ত্র কিনেছি, কমপ্লায়েন্সে বিনিয়োগ করেছি, এগুলোর ফলাফল ইতিবাচকভাবে ক্রেতাদের কাছে পাব আশা করি। সব স্টেকহেল্ডার, ট্রেড ইউনিয়ন লিডাররা এ সময় আমাদের সঙ্গে থাকবেন বলে আশা করছি।
কিছুদিন আগে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আপনি ঘোষণা দিয়েছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের মাইলফলক অর্জিত হবে? বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই লক্ষ্য কী অর্জিত হবে?
আমরা নতুন পণ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্জন করা সম্ভব হবে যদি সবার সহযোগিতা পাই। ২০২৩ সালের কয়েক মাস যুদ্ধের কারণে, অন্যান্য কারণে এই মুহূর্তে অর্জন করা কঠিন মনে হচ্ছে। আশা করি সমস্যা কেটে যাবে। এখান থেকে বের হয়ে আসব। পৃথিবী বের হয়ে আসবে। যে চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েছি, সেগুলোকে সুযোগে রূপান্তর করব। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ১০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য পূরণ করব।