ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান হামিদ উল্লাহ্ ভূঁইঞা বলেছেন, ‘দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে আইপিও প্রক্রিয়ায় কোম্পানির তথ্য গোপনের প্রবণতা রয়েছে। অনেক কোম্পানি আইপিওতে মিস লিডিং ইনফরমেশন দেয়।
দেখা গেছে, আইপিওতে আসার আগে তাদের অনেক রেপুটেড অডিটর থাকে, কিন্তু আইপিওর সময় অন্য অডিটর নিয়োগ দেয়, যাতে তাদের রিপোর্টে সাইন করে দেয় এবং অনিয়মের ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি না তোলে।’
বৃহস্পতিবার অর্থসূচক ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো-২০২৩ এর ‘কোম্পানি সুশাসন ও মানসম্পন্ন নিরীক্ষা প্রতিবেদন’ বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি) ভবনে অর্থ ও বাণিজ্য বিষয়ক নিউজ পোর্টাল অর্থসূচক তিন দিনব্যাপী এই এক্সপোর আয়োজন করে। সকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি এক্সপোর উদ্বোধন করেন।
এফআরসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘পুঁজিবাজারে অনেক কোম্পানির মূলধনের তুলনায় বাজারে শেয়ার অফলোডের পরিমাণ খুবই কম। মার্কেট ক্যাপিটাল বেড়েছে, কিন্তু অনেক কোম্পানির সেই পরিমাণ সাপ্লাই নেই। যে কারণে শেয়ার দর অনেক বেড়ে যায়।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজারে ২০০৬ সালে করপোরেট সুশাসনের গাইডলাইন দেয়া হয়। অডিট নিশ্চিতে আইসিএসবিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
এর ফলে ধীর ধীরে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সুশাসন নিশ্চিত হবে। দেশের উন্নত দেশগুলোও অনেক পরিশ্রম করে আসছে। এছাড়া সব ক্ষেত্রে অটোমেশন চালুর ক্ষেত্রে কাজ করছি। এর মাধ্যমে সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করা যাবে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শফিকুল আলম। সেশন চেয়ার ছিলেন ইউনি লিভার কনজিউমার কেয়ারের চেয়ারম্যান মাসুদ খান।
সেমিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান, আইসিএসবির সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. সানাউল্লাহ ও আইসিএবির কাউন্সিল মেম্বার মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিন।
বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান বলেন, ‘একটি কোম্পানির জন্য অডিট পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অডিট করার পরেও অনেক অনিয়ম বের হয়। সেই অনিয়ম রোধে কোম্পানি সুশাসন দরকার। একটি কোম্পানি কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে তার একটি সঠিক পদ্ধতি হলো কোম্পানির সুশাসন।
আইন যারা পরিচালিত করছে তারা সৎ কিনা সেটাও দেখতে হবে। অধিকাংশ কোম্পানিতে এমডিরা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকেন। ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান থেকে তারা টাকা বের করে নিয়ে যান।’
এতকিছুর পরেও হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই উন্নতি করেছে বলেও জানান তিনি।
আইসিএবির কাউন্সিল মেম্বার মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিন বলেন, ‘কোম্পানি যারা চালান তাদের জন্য কোম্পানি সুশাসন। তাই প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতনদের দিকে নজর বাড়াতে হবে। কারণ তারাই এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকেন। এগুলো বন্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণ মানুষের সম্পদ নিয়ে কাউকে অবহেলা করতে দেওয়া উচিত না।’
সবকিছু অটোমেশন করার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এতে অর্থ লুটপাটের পরিমাণ কমে আসবে। সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসিসি সহ অন্যান্য সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করলে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’
এবারের এক্সপোতে বিএসইসি, সিডিবিএল, বিআইসিএম, বিএএসএম, আইসিএবি, আইসিএমএবি, আইসিএসবি, ব্রোকারহাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, লিস্টেড কোম্পানি, সম্পদ ব্যবস্থাপনাসহ ৩৫টির বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। তিন দিনের এক্সপোতে উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের বাইরে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর চারটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
এসব সেমিনারে বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসইর শীর্ষ কর্মকর্তা, খ্যাতনামা স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংকার, অ্যাসেট ম্যানেজার, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, চার্টার্ড ফিন্যান্সিয়াল এনালিস্টরা অংশ নেবেন।
ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা থাকবে। এক্সপোতে প্রবেশের জন্য কোনো টিকিট লাগবে না। উল্টো প্রবেশ কুপনের র্যাফেল ড্রতে থাকবে মূল্যবান সব পুরস্কার।
আগামী শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় এক্সপোর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।