পাঁচ লাখ টাকার মন্দ মানের খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলো মামলা না করে অবলোপন করে ব্যালান্স শিট বা স্থিতিপত্র থেকে বাদ দিতে পারবে। এতোদিন দুই লাখ টাকার ঋণে মামলা না করে অবলোপনের সুযোগ ছিল।
ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমাতে ঋণ অবলোপন (রাইট অফ) নীতিমালায় এই শিথিলতা এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়।
সার্কুলারে বলা হয়, এখন থেকে কৃষি এবং অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পসহ ক্ষুদ্র অঙ্কের ঋণের মামলার খরচ যদি ঋণের অঙ্কের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপন করতে মামলা করতে হবে না।
ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোও তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে; যা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন করে আসছে।
ক্ষুদ্র ঋণে মামলার খরচের চেয়ে অনেকাংশে বকেয়া ঋণের পরিমাণ কম হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০১৩ সালে মামলা না করেই ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সেই নীতিমালায় সংশোধনী আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে বলা হয়, দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপনে মামলা করতে হবে না।
বৃহস্পতিবার নতুন সার্কুলারে এই অঙ্ক বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা হয়েছে। এতে খেলাপি ঋণ আদায় না হলেও তা কাগজ-কলমে কমবে।
বছরের পর বছর ধরে ব্যাংক ব্যবস্থায় মন্দ মানে শ্রেণিকৃত খেলাপি ঋণ স্থিতিপত্র (ব্যালান্স শিট) থেকে বাদ দেয়াকে ঋণ অবলোপন বা রাইট অফ বলে। যদিও এ ধরনের ঋণগ্রহীতা পুরো টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ চলতি বছরের জুন শেষে এ খাতের মোট বিতরণ করা ঋণ ছিল ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
অর্থাৎ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে নয় হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ঋণ অবলোপন হয়েছিল ৫২৯ কোটি টাকা। সে সময় অবলোপনের মোট স্থিতি ছিল ৫৯ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। একই সময়ে আদায় হয় ১৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা।
এরপর এপ্রিল থেকে জুন প্রান্তিকে মাত্র তিন মাসে ঋণ অবলোপন বেড়েছে ৫৪৪ কোটি টাকার বেশি। জুন প্রান্তিকের হিসাবসহ ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ অবলোপনের স্থিতি ছিল ৬০ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকগুলো বিভিন্নভাবে ১৭ হাজার ৪১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা আদায় করতে পেরেছে। ফলে খেলাপি ঋণ অবলোপনের নিট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। অবলোপনের কারণে উল্লিখিত অঙ্ক ঋণ আর ব্যাংকের মূল হিসাবে দেখাতে হচ্ছে না।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণ ছিল ১৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অবলোপনকৃত ঋণ বিবেচনায় নিলে ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণ এখন আরও বেশি।