করোনার কারণে দুই বছরের বিরতির পর আয়োজন করা মেলায় আশা করা হয়েছে, পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, সংকটের মধেও রপ্তানি বেড়েছে। অনেক মানুষ গুজব ছড়াচ্ছে, এসবে মন দেয়া ঠিক হবে না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাকরাইলের আইডিইবি ভবনে এক্সপোর আয়োজন করে অর্থ ও বাণিজ্যবিষয়ক নিউজ পোর্টাল অর্থসূচক ডট কম। এতে যোগ দিয়ে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
এক দশকের হতাশা শেষে ২০২০ সালের শেষ সময় থেকে টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজার চাঙা থাকলেও বর্তমানের পরিস্থিতি একেবারেই হতাশাজনক। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে টালমাটাল বিশ্ব পরিস্থিতিতে লেনদেন নেমেছে তলানিতে। শর্ত দিয়ে শেয়ারের দর ধরে রাখা হলেও সেই দরে শেয়ার কিনতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
এর মধ্যে বুধবার পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ডেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বলে বাজারকে ভালো করতে হবে। ফ্লোর প্রাইস উঠবে না।
তবে পরদিন এর কোনো প্রভাব পড়েনি বললেই চলে। যতগুলো কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে, কমেছে তার ৪ গুণ। লেনদেন সামান্য বাড়লেও তা ধর্তব্যের মতো নয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী অবশ্য আশা করেন, এই পরিস্থিতি বেশিদিন থাকবে না। তিনি বলেন ‘ক্রাইসিসের মধ্যেও আমাদের রপ্তানি বেড়েছে। পুঁজিবাজার ঘুরে দাড়াবে, আমরা সেই আশা করি।’
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজার যখন খারাপ হয় তখন হতাশাগ্রস্ত হই। তবে যখন খারাপ হয় তখন সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই সময়ে এই আয়োজন বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার বিনিয়োগের জায়গা, প্রতিদিনের বিজনেসের জায়গা নয়। আমরা বুঝে বিনিয়োগ করলে লাভবান হব। শুধু বিএসইসির একার পক্ষে মার্কেট ভালো করা সম্ভব নয়। বাজারের উন্নয়নে পলিসি সাপোর্ট দরকার। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাজস্ব বোর্ডের সমন্বয়ে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করা সম্ভব।’
এক্সপোতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী-রুবাইয়াত উল ইসলামও। তিনি জোর দেন বিনিয়োগ শিক্ষা ও গুজবে কান না দেয়ার বিষয়টিতে বলেন, ‘পুঁজিবাজার শিক্ষার গুরুত্ব অনেক। একটি পূর্ণাঙ্গ বাজার গড়তে কাজ করতে চাই। এই খাতের পত্রিকাগুলো আমাদের কাজ করতে অনেক সহযোগিতা করছে।’
মেলার উদ্যোক্তা অর্থসূচক সব সময় নতুন দিকনির্দেশনা দিয়ে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের পাশে ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গুজব ছড়ানোয় অনেকে কাজ করছে। তাই জেনেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে। গুজবে কান দেওয়া যাবে না।’
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘এক্সপোর প্রতিপাদ্যটি আশাবাদের কথা। ইউক্রেনে যুদ্ধের নেগেটিভ প্রভাব কাটিয়ে উঠেছি। তাহলে কেন পুঁজিবাজারে এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারব না?’
চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম বলেন, ‘ফেসবুকে অনেক গুজব ছড়ানো হয়। অনেকেই প্রভাবিত হয়ে থাকেন। সেখানে থেকে সরে আসতে হবে।
‘২ লাখের বেশি কোম্পানি কিন্তু পুঁজিবাজারে অনেক কম কোম্পানি। বিভিন্ন সেক্টরে ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস ব্যাংক হতে পারে না। অবশ্যই তা পুঁজিবাজার হতে হবে।’
বাংলাদেশ পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন প্রেসিডেন্ট আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর বেশি। তারা না বুঝেই অনেক সময় মার্কেট ভোলাটিলিটি তৈরি করে। জেনে বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে।’
সামাজিক মাধ্যমে অসমর্থিত তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে অসমর্থিত কোনো তথ্য নিয়ে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেবেন না। যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেবেন। বিনিয়োগের জন্য বুঝেশুনে ও ধৈর্য ধরে বিনিয়োগ করতে হবে।’
অর্থসূচক সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘২০১০ সালের ধসের পর বাজারের প্রতি মানুষের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। তাদের সেই চিন্তাভাবনা দূর করতে এই আয়োজন করা হয়। বর্তমানে অনেকে গুজব ছড়ায়। এতে কান দেয়া উচিত না। একটু ধাক্কা খেলেও বাংলাদেশ সব সংকট কাটিয়ে ভালো দিকে যাচ্ছে। তাই কোনো গুজবে কান দেয়া উচিত না।’
পঞ্চমবারের মতো এই এক্সপো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিনিয়োগ শিক্ষার প্রসার এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে অর্থসূচকের উদ্যোগে এই এক্সপো শুরু হয়। মাঝখানে জাতীয় নির্বাচন এবং করোনাভাইরাসের কারণে তিন বছর এই এক্সপো হয়নি।
এক্সপোতে বিএসইসি, সিডিবিএল, বিআইসিএম, বিএএসএম, আইসিএবি, আইসিএমএবি, আইসিএসবি, ব্রোকার হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, লিস্টেড কোম্পানি, সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানসহ ৩৫টির বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে।
তিন দিনের এক্সপোতে উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের বাইরে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর চারটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এসব সেমিনারে বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসইর শীর্ষ কর্মকর্তা, খ্যাতনামা স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংকার, অ্যাসেট ম্যানেজার, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট প্রমুখ অংশ নেবেন।