অর্ধেক কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার হলেও বাকিগুলোর এই সুবিধা উঠবে না জানিয়ে বাজার ভালো করতে বাজার সংশ্লিষ্টদের ডেকে নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির আলোচনার পরদিন আরও হতাশ করল পুঁজিবাজার।
আগের দুই সূচকের পাশাপাশি লেনদেন কিছুটা বাড়লেও বৈঠকের পরদিন লেনদেন বাড়লেও কমেছে সূচক। যতগুলো কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে কমেছে হার তিন গুণ। ফ্লোর প্রাইস ভেঙে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা দেখা যায়নি।
সদ্য সমাপ্ত বছরের শেষ মাসে পুঁজিবাজারের লেনদেনে খরা দেখা দেয়ার পর নতুন বছরে তা ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু বছরের প্রথম তিন দিন লেনদেন আরও তলানিতে নেমে দুই শ কোটির নিচে চলে আসে। এরপর পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ডেকে বুধবার বৈঠক করে বিএসইসি।
বৈঠকে ডিএসই ও সিএসই চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ কোম্পানি আইসিবি ও সংস্থাটির সব সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বিএমবিএ, ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিবিএ, সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
শীর্ষস্থানীয় কিছু ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদেরও বৈঠকে ডাকা হয় এতে। ব্র্যাক ব্যাংক, ইউসিবি, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদেরও ডাকে বিএসইসি।
সব মিলিয়ে আসা দেড় শ জনকে ডেকে বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সবাইকে বাজার ভালো করতে নামতে হবে। আর যত দিন পুঁজিবাজারের স্বাস্থ্য ভালো না হলে ফ্লোর প্রাইস পুরোপুরি উঠবে না।
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সবাইকে বলেছি দেশের পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক রোল প্লে করতে। গত দুদিন ধরে করছি। সেটা কাজে দিচ্ছে। আমরা সবাইকে নামতে বাজার ভালো করতে বলেছি। আশা করি সামনে দেশের পুঁজিবাজার ভালো হবে।
‘আরেকটি বিষয় খুব স্পষ্ট করে দিয়েছি দেশের পুঁজিবাজার থেকে এখন ফ্লোর প্রাইস উঠছে না।’
তবে এই বৈঠকের প্রভাব অন্তত প্রথম দিন পড়তে দেখা যায়নি। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন নতুন বছরে প্রথমবারের মতো তিন শ কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করলেও সূচক কমেছে ৮ পয়েন্ট। ৩৬টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৩২টির। ১৭০টি কোম্পানি লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে। ৫১টি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি।
সারা দিনে হাতবদল হয়েছে ৩১৮ কোটি ১ লাখ ৫৪ হাজার টাকার শেয়ার, যা আগের দিন ছিল ২৯১ কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অর্থাৎ পুঁজিবাজার ভালো করতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরদের তৎপরতা এমন কিছু দেখা যায়নি।
ফ্লোর প্রাইস তোলার দাবিতে অনড় তারা
ফ্লোর প্রাইস না তোলা পর্যন্ত পুঁজিবাজারের এই দশা কাটবে না বলে মনে করেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, 'বাজারে সব আইটেম বেচাকেনা হচ্ছে না বলেই গতি পাচ্ছে না। ওই সব আইটেম ডাউন হলেই বাজার ডাউন হয়ে যাচ্ছে। ১ শতাংশ ডাউনে যখন বাজার শুরু হচ্ছে, তখন সেটা আর প্লাস হচ্ছে না। বাজারকে আটকে রাখলে এ রকমই হবে।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০
দর বাড়ার শীর্ষে রয়েছে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স। শেয়ারটির দর ১২ টাকা ১০ পয়সা বা ৯.৯৮ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ ১৩৩ টাকা ৪০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।
তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। ৪ টাকা বা ৯.৭৮ শতাংশ বেড়ে শেয়ারটি সর্বশেষ ৪৪ টাকা ৯০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।
তৃতীয় স্থানে থাকা প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের দর শেয়ার ৪ টাকা ৩০ পয়সা বা ৮.২২ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ হাতবদল হয়েছে ৫৬ টাকা ৬০ পয়সায়।
তালিকায় পরের স্থানে রয়েছে পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সী পার্ল বীচ, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
দরপতনের শীর্ষ ১০
দরপতনের শীর্ষে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড। শেয়ারটির দর ৩৩ টাকা ৭০ পয়সা বা ৭.৩৯ শতাংশ কমে সর্বশেষ ৪২২ টাকা ৪০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।
বিডি মনোস্পুল পেপার লুজার তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ১৬ টাকা ৩০ পয়সা বা ৬.১০ শতাংশ কমেছে। ২৫০ টাকা ৯০ পয়সা দরে সর্বশেষ শেয়ার লেনদেন হয়।
তৃতীয় স্থানে থাকা কোহিনূর কেমিক্যালের দর ১৯ টাকা ৫০ পয়সা বা ৪.২৭ শতাংশ কমে ৪৩৬ টাকা ৯০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।
তালিকায় পরের স্থানে রয়েছে মুন্নু সিরামিকস, জেমিনি সী ফুড, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, বিডি থাই ফুড, আমরা টেকনোলজিস, অ্যাডভেন্ট ফার্মা ও লুব-রেফ বিডি লিমিটেড।