বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মন্দার শঙ্কায় জ্বালানি তেলের দামে বড় পতন

  •    
  • ৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:৫৪

‘গত তিন মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দরে এমন পতন হয়নি’ জানিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব অর্থনীতির বেহাল অবস্থা থেকে উদ্বেগের কারণে তেলের দাম কমেছে। শুরু হওয়া নতুন বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর যদি সেটা হয়, তাহলে তেলের চাহিদা কমে যাবে। সে কারণেই দর পড়ছে।’

বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কায় জ্বালানি তেলের বড় দরপতন হয়েছে। বিশ্ববাজারে দুই ধরনের অপরিশোধিত তেলের দামই ৪ শতাংশের বেশি কমেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ১২টায় প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৩ ডলার ৫০ সেন্ট বা ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ৭৮ ডলার ৬১ সেন্টে নেমে এসেছে। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের প্রতি ব্যারেলের দাম নেমে এসেছে ৭৩ ডলার ৬৫ সেন্টে; কমেছে ৩ ডলার ২৮ সেন্ট বা ৪ দশমিক ২৬ শতাংশ।

‘গত তিন মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দরে এমন পতন হয়নি’ জানিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব অর্থনীতির বেহাল অবস্থা থেকে উদ্বেগের কারণে তেলের দাম কমেছে। শুরু হওয়া নতুন বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর যদি সেটা হয়, তাহলে তেলের চাহিদা কমে যাবে। সে কারণেই দর পড়ছে।’

‘আবার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে নতুন করে কোভিড ছড়িয়ে পড়ায় সে দেশটিতেও তেলের চাহিদা কমে যাবে। সব মিলিয়ে তেলের বাজারে তার প্রভাব পড়েছে এবং দামে পতন হয়েছে।’

নতুন বছরের প্রথম দিনেই বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অশনি এক বার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলেছে, নতুন বছরেই মন্দার কবলে পড়বে বিশ্বের এক–তৃতীয়াংশ দেশ। যার প্রভাব পড়বে সারা বিশ্বে।

আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা মন্দার এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতেই বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, যা উদ্বেগ ছড়াচ্ছে বিশ্বের দেশে দেশে।

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, ‘নতুন বছর তথা ২০২৩ সালের বিশ্ব অর্থনীতি গত বছরের তুলনায় কঠিন সময় পার করবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থনীতির গতি এরই মধ্যে মন্থর হয়ে গেছে।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুদ হার বেড়ে যাওয়া ও চীনে নতুন করে করোনা ভাইরাসের বিস্তার বিশ্ব অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এতে বিশ্বের এক–তৃতীয়াংশ দেশের অর্থনীতি চলতি বছর মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সিবিএস নিউজের এক অনুষ্ঠানে আইএমএফের প্রধান এ আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন। এর আগে গত অক্টোবরে প্রকাশিত আইএমএফের অথনৈতিক আউটলুকে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমানো হয়েছে।

আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, ‘চলতি বছর যেসব দেশ মন্দার কবলে পড়বে না, সেসব দেশের মানুষও মন্দার ধাক্কা অনুভব করবে। ইউরোপ কোনোভাবেই মন্দা এড়াতে পারবে না। আর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি মন্দার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।’

বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে আইএমএফ-প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার ‘এমন উদ্বেগজনক’ মন্তব্যের কারণেই জ্বালানি তেলের দরে বড় পতন হয়েছে বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

সপ্তাহ দুয়েক আগে দুই ধরনের অপরিশোধিত তেলের দামই ৮০ ডলারের নিচে নেমে এসেছিল। গত কয়েক দিনে তা আবার বেড়ে ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। বুধবার বড় পতনে তা আবার ৮০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে।

করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় বড় দেশ ঋণের সুদের হার বাড়িয়েই চলেছে। অন্য বড় অর্থনীতির দেশগুলোও সেই একই পথ অনুসরণ করছে। আর এটিই বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে বেশ কিছুদিন ধরে বলে আসছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ।

ডলার প্রাইস ইনডেক্সের তথ্যানুসারে গত বছর ডলারের দর ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডলারের দর বাড়লে আমদানি মূল্য বেড়ে যায়, যা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করে। সে জন্য ডলারের দর বাড়লে উন্নয়নশীল দেশগুলো জ্বালানি তেল আমদানি হ্রাস করে, বাংলাদেশও যা করেছে। ডলার বাঁচাতে দেশে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম গড়ে প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের কাছাকাছি ওঠানামা করছিল, ঠিক তখন বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। গত ৫ আগস্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতি লিটারের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা আর অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই দিন মধ্যরাত থেকে নতুন দর কার্যকর করা হয়। এরপর থেকেই বাস, ট্রাক, অ্যাপের প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, লঞ্চ ও হিউম্যান হলারের ভাড়া বেড়ে যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগে থেকেই বাড়তি ছিল, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে তা আরও একদফা বাড়ে।

সরকারের মন্ত্রীরা অবশ্য বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশেও জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা কমলে দেশের বাজারে লিটারে মাত্র পাঁচ টাকা কমানো হয়।

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়। গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দর ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তেলের দাম। একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেল ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। এরপর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগে ওঠানামার মধ্যেই তেলের দর ১১০ থেকে ১১৫ ডলারের মধ্যে ছিল। গত মে মাসের শেষের দিকে তেলের দাম বেড়ে ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

২০২০ সালের করোনা মহামারির শুরুতে সারা বিশ্বে যখন লকডাউন চলছিল, তখন জ্বালানি তেলের দাম মাইনাস ৩৭ ডলারে নেমে এসেছিল। অর্থাৎ এক ব্যারেল তেল কিনলে ক্রেতাকে উল্টো ৩৭ ডলার দেয়া হয়েছে। এরপর ওপেক ও রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে তেল সরবরাহ কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪৯ ডলার। এরপর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে-তে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার। অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে। সে সময়ই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানো হয়।

এরপর অবশ্য তেলের দাম খানিকটা কমে আসে। যুদ্ধের কারণে ফের তা বাড়তে থাকে। ইউক্রেনে রুশ হামলার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

এ বিভাগের আরো খবর