বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘শীতে জমাট’ পুঁজিবাজারের চাকা ঘুরল কিছুটা

  •    
  • ৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৪:৫০

বছরের প্রথম দিন ডিএসইতে হাতবদল হয় কেবল ১৭৮ কোটি ৪২ লাখ ৫৯ হাজার টাকায়। দ্বিতীয় দিন আরও কমে দাঁড়ায় হয় ১৪৬ কোটি ৫১ লাখ ৯ হাজার। তৃতীয় দিনও তা থাকে দুই শ কোটির নিচে। চতুর্থ দিনে এসে তা কিছুটা বেড়ে হলো ২৯১ কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তবে এতদিন একেবারেই চাহিদা না থাকা কিছু কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল শেয়ারের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইউনিট বদল হতে দেখা গেছে।

নতুন বছরে চূড়ান্ত হতাশা কাটিয়ে চতুর্থ দিনে এসে অবশেষে পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনায় কিছুটা আগ্রহ দেখা গেল। তবে গত বছরের মাঝামাঝি বা সেপ্টেম্বরের সঙ্গে তুলনায় তা এখনও তলানিতেই। তার পরেও আগের তিন দিন দুই শ কোটি টাকার কমে লেনদেন হওয়ায় বুধবার তিন শ কোটির কাছাকাছি পৌঁছাটা কিছুটা হলেও স্বস্তির।

শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব, ইউক্রেনে রুশ হামলার পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি আর পণ্যমূল্যে লাফের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে গিয়ে রিজার্ভে চাপ, নতুন বছরে বিশ্বে মন্দার শঙ্কা, ইত্যাদি নানা ঘটনায় পুঁজিবাজার্ এখন নিষ্প্রাণ।

অর্ধেক কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস, বাকি অর্ধেকের শেয়ারের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা এক শতাংশ ইত্যাদি বাধায় বড় পতন ঠেকিয়ে রাখা গেছে। তবে যেসব শেয়ারের দাম কমা সম্ভব, সেগুলোর সিংহভাগের দর কমতে থাকায় সূচক কমছিল ক্রমাগত। সেই সঙ্গে লেনদেন কমতে কমতে করোনাকালের করুণ দশা ফিরে আসে।

নতুন বছরে নতুন যাত্রা- এমন আশার মধ্যে প্রথম দিন পুঁজিবাজারে দেখা যায় উল্টো দৌড়। সূচক হারায় কমই, কিন্তু লেনদেন নামে প্রায় আড়াই বছরের সর্বনিম্ন অবস্থানে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইতে হাতবদল হয় কেবল ১৭৮ কোটি ৪২ লাখ ৫৯ হাজার টাকায়।

দ্বিতীয় দিন তা আরও কমে। সেদিন হাতবদল হয় ১৪৬ কোটি ৫১ লাখ ৯ হাজার টাকা। তৃতীয় দিনে কিছুটা বেড়েও তা থাকে দুই শ কোটির নিচে। লেনদেন হয় ১৯৮ কোটি ৯০ লাখ ৩২ হাজার টাকা। গত সেপ্টেম্বরে যখন কিছু কোম্পানির শেয়ারদরের অস্বাভাবিক উত্থান দেখা যায়, সে সময় প্রতিদিনই শীর্ষে থাকা একটি কোম্পানিতেই এর চেয়ে বেশি লেনদেন দেখা গেছে।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর আতঙ্গে লেনদেন একেবারে তলানিতে নেমে আসার পর এই চিত্র আর দেখা যায়নি।

বুধবারও লেনদেনের খরা কাটেনি, তবে থমকে কিছু কিছু কোম্পানির চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। এমনকি অনাগ্রহের চূড়ান্তে থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ডেরও কিছু ইউনিট চলতে শুরু করেছে।

দিন শেষে হাতবদল হয়েছে ২৯১ কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকার শেয়ার। সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স বাড়ে ১৭ পয়েন্ট।

লেনদেন কিছুটা বাড়লে কমেনি ভারসাম্যহীনতা। ১৭৩ কোটি ৩৭ রাখ ৩৬ হাজার টাকা হাতবদল হয়েছে কেবল ২০টি কোম্পানিতে। বাকি ৩৩৫ কোম্পানিতে লেনদেন হয় কেবল ১১৭ কোটি ৭৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।

আগের দিনের মতোই সূচক বাড়লেও দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির চেয়ে দরপতন হওয়া কোম্পানির সংখ্যা বেশি। তবে বেঁধে দেয়া সর্বনিম্ন দরে লেনদেন হয়েছে সবচেয়ে বেশি কোম্পানির শেয়ার।

এদিন বেড়েছে ৭৭ কোম্পানির শেয়ারদর, কমেছে ৯০টির আর আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ১৮৮টি কোম্পানি। ৩৪টি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি।

তবে বন্ধ চাকা খোলার চেষ্টায় কিছু কোম্পানি। এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে এফবিএফআইএফের ইউনিটের। হাতবদল হয়েছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৯টি ইউনিট। যদিও অভিহিত মূল্যের ৫০ শতাংশ কমে হাতবদল হয়েছে ৫ টাকায়।

গত ৭ সেপ্টেম্বরের পর প্রথমবারের মতো আগ্রহ দেখা গেল রিলায়েন্স ওয়ান মিউচ্যুয়াল ফান্ডে। গত চার মাসে কোনো দিন একটি, কোনোদিন একটিও না, কোনোদিন ১০টি ইউনিট হাতবদল হতে দেখা গিয়েছিল। এই ফান্ডের ২ লাখ ১৯ হাাজর ৬৬৭টি ইউনিট হাতবদল হলো এক দিনেই।

ফান্ডটির ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার কারণে এখন এক শতাংশ দাম কমা সম্ভব। আর আগের দিন ইউনিট দর ছিল ১০ টাকা, ফলে ১০ পয়সা দাম কমতে পারত। শুরুতে কমেওছিল তা। তবে শেয়ার লেনদেন হতে থাকায় চাহিদা বেড়ে দিন শেষ করে ১০ পয়সা বেড়ে।

ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর ১০ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে ১০ টাকায় নামার পর এই প্রথম বাড়ল এর ইউনিট দর।

বছরের চতুর্থ কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র

পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘কুলিং পিরিয়ড’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের শীর্ষ নির্বাহী (সিইও) খন্দকার সাফফাত রেজা। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘লিকুইডিটি ক্রাইসিস, অর্থনৈতিক যেসব প্রেসার তৈরি হয়েছে সেটা আগেও আমরা দেখেছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিত ধরতে পারেন একটা কুলিং পিরিয়ড। ব্যাংকের ইন্টারেস্ট লো, তার মানে কী? লোনের ডিমান্ড নাই।

‘এখন ৯ শতাংশ সুদে লোন দিচ্ছে, এক সময় ব্যবসায়ীরা তো ১৮ শতাংশ সুদেও লোন নিয়ে ব্যবসা করেছে। সো, ইটস অল অ্যাবাউট ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই। আমাদের মার্কেটের এখন কুলিং পিরিয়ড যাচ্ছে।’

বাজার পরিস্থিতি উত্তরণের ব্যাপারেও আশাবাদ প্রকাশ করেন এই ব্রোকার। তিনি বলেন, ‘আশা করা যায়, এরকম এক, দেড় মাস যেতে যেতে আবার লিকুইডিটি ফিরবে আসবে। সুনির্দিষ্ট সময় তো কেউ বলতে পারে না। আমরা রাইট টাইম প্রেডিক্ট করতে পারি না। সুতরাং ধৈর্য ধরতে হবে এই সময়টা।’

সূচকে প্রভাব যাদের

সবচেয়ে বেশি ৩ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে সি-পার্ল। এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।

অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট।

ইউনিক হোটেল সূচকে যোগ করেছে ১ দশমিক ২১ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ।

এর বাইরে সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে বসুন্ধরা পেপার, বিকন ফার্মা, ওরিয়ন ফার্মা, নাভানা ফার্মা, কোহিনূর কেমিক্যাল, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ও জেনেক্স ইনফোসিস।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ১১ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট।

বিপরীতে কোনো কোম্পানিই ১ পয়েন্ট সূচক কমাতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি শূন্য দশমিক ৭৫ পয়েন্ট সূচক কমিয়েছে প্রাইম ব্যাংক। কোম্পানির দর কমেছে ২ দশমিক ০৫ শতাংশ।

বেক্সিমকো সুকুকের দর শূন্য দশমিক ৫৮ শতাংশ হ্রাসে সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ২৫ পয়েন্ট।

দেশ গার্মেন্টসের কারণে সূচক হারিয়েছে শূন্য দশমিক ১৭ পয়েন্ট। এদিন কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

এ ছাড়াও আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, অ্যাপেক্স ট্যানারি, প্রাণ, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, ডমিনেজ স্টিল, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স ও ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের দরপতনে সূচক কমেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ১ দশমিক ৪১ পয়েন্ট।

দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০

সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ দর বেড়েছে নতুন তালিকাভুক্ত ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের। শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৪০ টাকা ৯০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ৩৭ টাকা ২০ পয়সা।

এরপরেই ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ দর বেড়ে সি-পার্লের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২০২ টাকা ৮০ পয়সায়, যা আগের দিন ছিল ১৮৪ টাকা ৫০ পয়সা।

তালিকার তৃতীয় স্থানে ছিল আরএসআরএম স্টিল। ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে ১৭ টাকা ৯০ পয়সায়। আগের দিনে শেয়ার লেনদেন হয়েছিল ১৬ টাকা ৩০ পয়সায়।

এ ছাড়া তালিকার চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে থাকা নাভানা ফার্মা ও সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি।

এ ছাড়া বসুন্ধরা পেপার, ইউনিক হোটেল, এডিএন টেলিকম, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও আমরা টেকনোলজিসের দর বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি।

দরপতনের শীর্ষ ১০

সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ দর কমেছে দেশ গার্মেন্টসের। প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২৬ টাকা ৫০ পয়সায়, যা আগের দিন ছিল ১৪০ টাকা ৫০ পয়সা।

এর পরেই ২ দশমিক ০৫ শতাংশ দর কমে প্রাইম ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৯ টাকা ১০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ১৯ টাকা ৫০ পয়সা।

তৃতীয় স্থানে থাকা লিবরা ইনফিউশনের শেয়ারদর শূন্য দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে লেনদেন হয়েছে ৮৩২ টাকা ২০ পয়সায়। আগের দিন দর ছিল ৮৪০ টাকা ৬০ পয়সা।

এ ছাড়া তালিকায় পরের স্থানে রয়েছে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, অ্যাপেক্স স্পিনিং, রেনউইক যজ্ঞেশর, জুট স্পিনার্স, শ্যামপুর সুগার মিল, নিটল ইন্স্যুরেন্স ও রহিম টেক্সটাইল।

এ বিভাগের আরো খবর