বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বছর ঘুরলেও গত অর্থবছরের জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব নেই

  •    
  • ৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ১০:৫১

চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করতে দেরির কারণ জানতে চাইলে পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মতিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব তৈরির কাজ চলছে। আশা করছি চলতি জানুয়ারির মধ্যেই প্রকাশ করতে পারব।’

২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হয়েছে গত বছরের ৩০ জুন। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ৬ মাস। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরেরও অর্ধেক শেষ। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব এখনো অজানা!

প্রতিবার বছর শেষ হওয়ার দুই-তিন মাস আগেই সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বিগত অর্থবছরের চূড়ান্ত জিডিপির হিসাব প্রকাশ করে। তবে এবার ডিসেম্বর শেষেও তা করা হয়নি। কবে প্রকাশ হবে তাও সুনির্দিষ্টভাবে বলছেন না সংস্থার মহাপরিচালক মতিউর রহমান।

গত ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হওয়ার ২০ দিন আগে ১০ মে ওই অর্থবছরের সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছিল পরিসংখ্যান ব্যুরো। তাতে ৯ মাসের (২০২১ সালে জুলাই থেকে ২০২২ সালের মার্চ) অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক হিসাব করে বলা হয়, দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।

প্রথা অনুযায়ী, জিডিপির সাময়িক বা প্রাথমিক হিসাব প্রকাশ করার তিন-চার মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত হিসাব জানায় বিবিএস। তবে এবার ৮ মাস শেষেও সে হিসাব প্রকাশ করা হয়নি।

চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করতে দেরির কারণ জানতে চাইলে পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মতিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব তৈরির কাজ চলছে। আশা করছি চলতি জানুয়ারির মধ্যেই প্রকাশ করতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণত ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়। তবে নানা কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। আমিও কিছুদিন আগে বিবিএসে এসেছি। পরিকল্পনামন্ত্রী অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি আছেন। স্যার সুস্থ হলে সব হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত করে হিসাব প্রকাশ করা হবে।’

জিডিপির সাময়িক হিসাব প্রকাশের সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘প্রাথমিক হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। করোনা মহামারির এই কঠিন পরিস্থিতিতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি এই হার অনেক ভালো। মার্চ পর্যন্ত ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ হলে জুন শেষে এটি আরও বাড়তে পারে, ৭ দশমিক ৫ শতাংশও হতে পারে। আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যাবে।’

অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। অর্থবছর শেষ হয়ে গেছে ৬ মাসেরও বেশি সময়। অথচ আমরা জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব পাইনি। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬ মাস পার হয়ে গেল। পরের অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেট তৈরির কাজ শুরু করেছে সরকার, কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রকৃত জিডিপি কত তা আমরা জানি না।’

তিনি বলেন, ‘যেকোনো দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য হালনাগাদ তথ্য জানা খুবই জরুরি। এই কঠিন সময়ে সেটি আরও বেশি প্রয়োজন, কিন্তু কেন দেরি হচ্ছে বুঝতে পারছি না।’

২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিল সরকার।

আর করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে থমকে থাকা অর্থনীতির মধ্যেও ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জনের লক্ষ্য ধরা হয়।

বিবিএসের সাময়িক হিসাব দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে চলতি মূল্যে জিডিপির আকার দাঁড়ায় ৩৯ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা বা ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় বেড়ে হয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার।

২০২০-২১ অর্থবছরে চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপির আকার ছিল ৩৫ লাখ ৩০ হাজার ২০০ কোটি টাকা বা ৪১৬ বিলিয়ন ডলার। ওই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৫৯১ ডলার।

করোনা মহামারির কারণে এর আগের বছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার নেমেছিল ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে। মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৩২৬ ডলার।

তার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় দেশে, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয় ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

২০১৫-১৬, ২০১৪-১৫ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ১১, ৬ দশমিক ৫৫ এবং ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

করোনাভাইরাস মহামারির আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ধারাবাহিক অগ্রগতির পথ ধরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ (ভিত্তি বছর পরিবর্তনের পর ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ) প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশ, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি।

গত এক দশকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আর চার বছরে এই হার ছিল ৭ শতাংশের ওপরে।

তবে ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও তছনছ হয়ে যায়; পাল্টে যায় সব হিসাব-নিকাশ। তার পরও ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে আগের বারের (২০১৯-২০) মতো ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির বড় লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। কিন্তু করোনার ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমে আসে, যা ছিল তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।

মহামারির কারণে বিশ্বের প্রায় সব দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে। কোনো কোনো দেশে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হলেও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল বাংলাদেশ।

এ বিভাগের আরো খবর