বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেশের ৩০ শতাংশ এভিয়েশন বাজার ধরতে চায় ইউনাইটেড এয়ার  

  •    
  • ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ২২:৩৭

ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ফান্ড ক্রিয়েট করতে পারলে আমরা ছোট করে পুনরায় যাত্রা শুরু করতে পারি। আন্তির্জাতিক বাজারের ৪ শতাংশ আর দেশের ৩০ শতাংশ ধরতে পারলে এই এয়ারলাইন্স দাঁড়িয়ে যাবে।’

বেসরকারি ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স পুনরায় চালু করে দেশের এভিয়েশন বাজারের ৩০ শতাংশ দখলের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম নজরুল ইসলাম।

মঙ্গলবার ইউনাইটেড এয়ারের সাধারণ সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারসহ এই খাত নিয়ে আমরা সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করে দেখেছি। সারা বিশ্বে এভিয়েশন খাত খুব ভাল করছে। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর আধুনিক হচ্ছে। সে সুবাদে এর সক্ষমতা অনেক বাড়বে। অনেক দেশের ফ্লাইটই তখন এই বিমানবন্দরে আসবে।

‘দেশি এয়ারলাইন্স না এলে আমরা আন্তর্জাতিক বাজার হারিয়ে ফেলব। আমাদের দেশি এয়ারলাইন্স বাড়াতে হবে। আমি মনে করি দেশে একটি এয়ারলাইন্স বাড়ানো উচিত। এ ধরনের চিন্তা থেকেই আমরা ব্যবসা পরিকল্পনা সাজিয়েছি। ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সকে রিভাইভ করতে চাই।

‘ফান্ড ক্রিয়েট করতে পারলে আমরা ছোট করে শুরু করতে পারি। দেশে ও বিদেশে আমরা কার্গো দিয়ে শুরু করতে চাই। দ্বিতীয় ধাপে আমরা আরও ফান্ড যোগাড়ের চেষ্টা করব। তা সম্ভব হলে আমরা দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে যাত্রী পরিবহন শুরু করব। একইসঙ্গে কার্গো পরিবহনের পরিসর আরও বিস্তৃত করব।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের কমপ্লায়েন্স কিছু সমস্যা ছিল। সেটার জন্য বিদেশিরা আসতে চাচ্ছিল না। প্রথম সমস্যা ছিল আমাদের বিমানগুলো সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা। সেটা আমরা করিয়েছি। ইউনাইটেডের সব উড়োজাহাজ সম্পর্কে আমরা এখন জানি। আরেকটি সমস্যা ছিল বার্ষিক সভা না হওয়া। সেটাও আমরা আজ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত পেলে আমরা এখন এগুতে পারব। পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুতে পারলে পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের এভিয়েশন খাতে আমরা বড় পরিবর্তন আনতে পারব।

‘ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স এক সময় দেশের সবচেয়ে বড় এয়ারলাইন্স ছিল। বাংলাদেশ বিমানের চেয়েও বেশি উড়োজাহাজ ছিল এই এয়ারলাইন্সের বহরে। পুনরায় যাত্রা শুরু করে আমরা যদি আন্তির্জাতিক বাজারের ৪ শতাংশ আর দেশের বাজারের ৩০ শতাংশ নিতে পারলে এই এয়ারলাইন্স দাঁড়িয়ে যাবে।’

ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া-আসা মিলে বর্তমানে আকাশপথে যাত্রী সংখ্যা বছরে ৮০ থেকে ৯০ লাখ। এর ২২ থেকে ২৫ শতাংশ বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর হাতে আছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল হয়ে গেলে এই সংখ্যা দাঁড়াবে দুই কোটি। তখন আমাদের এয়ারলাইন্সগুলোর স্বক্ষমতা বাড়াতে না পারলে সেই সেই বাজার হাতছাড়া হয়ে যাবে।’

ইউনাইটেড এয়ারের বার্ষিক সাধারণ সভাটি অনলাইন মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৬০ জনের মতো শেয়ার হোল্ডার যোগ দেন। ভোট পড়েছে মোট শেয়ারের ১০ শতাংশের মতো।

সাধারণ সভায় ২০১৫-২০১৬ থেকে ২০২১-২০২২ মোট সাত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন নেয়া হয়। একইসঙ্গে ক্যাপিট্যাল রিস্ট্রাকচারিং ও অ্যাসেট রিস্ট্রাকচারিং-এর অনুমোদন নেয়া হয়েছে।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ২০০৭ সালে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে তারা দেশের অভ্যন্তরে সেবা দেয়া শুরু করে। পরে দেশের বাইরের রুটেও সেবা দিচ্ছিল। ২০১০ সালে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি।

কোম্পানির পরিচালকদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো ইউনাইটেড এয়ায়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর চালু হলেও ২০১৬ সালে এর কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

২০২১ সালে ইউনাইটেড এয়ারকে বাংলাদেশের মূল পুঁজিবাজার থেকে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এতে তাদের শেয়ার দর নামতে নামতে ২ টাকার নিচে চলে আসে।

ওটিসি মার্কেটে শেয়ার লেনদেন জটিল ও সময়সাপেক্ষ বলে লেনদেনও হচ্ছে না। এতে ৭২ কোটি শেয়ারের মালিকদের টাকা কার্যত শূন্য হয়ে গেছে।

এর মধ্যে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ইউনাইটেড এয়ারের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ২০১০ সালে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের প্রধান তাসবিরুল আলম চৌধুরীকে বাদ দিয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয় কাজী ওয়াহিদুল আলমকে।

২০১৬ সালের পর কোম্পানিটির কোনো এজিএম হয়নি। প্রায় ৭ বছর পরে মঙ্গলবার এজিএম অনুষ্ঠিত হয়।

সাধারন সভায় আরও বক্তব্য দেন ইউনাইটেড এয়ারের নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি কঠিন সময়ে ইউনাইটেড এয়ার নিয়ে কাজ শুরু করি। বেশিরভাগ দরকারি কাগজপত্র হাতে পাইনি। এজন্য অনেক কাজ এগিয়ে নেয়া যায়নি। আমরা যখন দায়িত্ব নেই তখন ইউনাইটেড এয়ারের ব্যাংক হিসাবে একটি টাকাও ছিল না। কোথাও থেকে টাকা না পেয়ে আমরা নিজেদের পকেট থেকে টাকা দিয়ে কাজ করেছি।

‘বেশ কিছুদিন চালানোর পর বিএসইসি-এর মধ্যস্থাতায় আমরা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে কিছু ঋণ পাই। সেই টাকা দিয়ে আমরা অডিট রিপোর্ট করেছি, ট্যাকনিক্যাল রিপোর্টগুলো করেছি। এখনও আমরা আমাদের খরচগুলো নিজেদের অর্থায়নে করতে বাধ্য হচ্ছি।’

‘আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো- একটি এয়ারলাইন্সের কাজ নির্ভর করে তার লাইসেন্সের ওপর। কিন্তু ইউনাইডেট এয়ারের এখন কোনো এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট (এওসি) নেই। এই সার্টিফিকেটের জন্য সিভিল এভিয়েশন অথরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে এলছি। কিন্তু এই সার্টিফিকেট পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। কারণ সিভিল এভিয়েশেন আমাদের কাছে বেশকিছু টাকা পায়।’

তিনি বলেন, ‘এই পাওনার বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয় ও বিএসইসি-কে বলেছি যে আমাদের দায় অনেক বড়, ৪০০ কোটি টাকা। আমাদের অ্যাকচুয়াল ডিউ যা আছে তা আমরা দিয়ে দেব। আর সারচার্জ যেটা আছে তা মওকুফ করার জন্য আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি।

‘আমরা জানতে পেরেছি যে প্রধানমন্ত্রী একটি মতামত ব্যক্ত করেছেন। তিনি আমাদের বিষয়ে ইতিবাচক। আশা করছি এ বিষয়ে একটি সমাধান পাবো।’

‘আরেকটি সমস্যা হলো, বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা আইনি বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। আমাদের দুটি এয়ারক্রাফট দেশের বাইরে রয়েছে। একটি ভারতে, অন্যটি পাকিস্তানে। সেখানে এগুলো থাকায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের যে দেনা রয়েছে সেগুলো দেয়ায় আমরা আইনি ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছি। আেও অনেক আইনি ঝুঁকি রয়েছে।’, বলেন ওয়াহিদুল আলম।

তিনি বলেন, ‘আমরা ট্যাকনিক্যাল ইভ্যালুয়েশন করতে সক্ষম হয়েছি। এই মূল্যায়ন থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করছি যে আমরা ইউনাইটেড এয়ার পুনরায় চালু করতে পারব।

‘আমরা একটি নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা করেছি। বাইরে থেকে বিনিয়োগ আনার চেষ্টা করছি। প্রতিষ্ঠান চালু হলে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা আমানত ফিরে পাবেন।’

এ বিভাগের আরো খবর