ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানের মালিকানাধীন বন্ধ প্রতিষ্ঠান ‘সাকিব ৭৫ রেস্টুরেন্ট’ অবশেষে মূল্য বকেয়া সংযোজন কর বা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে।
বকেয়া পরিশোধ না করলে ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ব্যাংককে চিঠি দেয়ার ২৭ দিন পর প্রায় চার লাখ টাকা বকেয়া জমা ভ্যাট জমা পড়ে।
প্রতিষ্ঠানটি সে সময় ছিল রাজধানীর মিরপুর এলাকাতে। তবে সেটি ২০২০ সালেই বন্ধ করে দেয়া হয়। এখন একই নামে ধানমন্ডিতে আরও একটি রেস্টুরেন্ট খোলা হয়েছে।
তবে এই টাকা কে জমা দিয়েছে, সেটি এখন এক প্রশ্ন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জানিয়েছে, তারা টাকা পেয়েছে। কিন্তু রেস্টুরেন্টের বর্তমান মালিকানায় থাকা একজন বলেছেন, তারা টাকা দেননি। আর তাদের এখন কোনো বকেয়া নেই।
বকেয়া পরিশোধ এনবিআরের অধীন ঢাকা পশ্চিমের ভ্যাট কমিশনারেট থেকে গত ৫ ডিসেম্বর বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠিয়ে মেসার্স সাকিব ৭৫ রেস্টুরেন্ট এর নামে থাকা অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দেয়।
ব্যাংকের পাশাপাশি চিঠির একটি অনুলিপি মিরপুরের সাকিবের রেস্টুরেন্টে ঠিকানায় পাঠানো হয়। যদিও এ ঠিকানায় সাকিবের রেস্টুরেন্টটি এখন আর নেই।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআরের সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা জানান, চিঠি দেয়ার ২৭ দিন পর মঙ্গলবার সাকিবের সেই রেস্টুরেন্টের পক্ষ থেকে বকেয়া পরিশোধ করা হয়। ফলে রেস্টুরেন্টটির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হবে না।
যোগাযোগ করা হলে ঢাকা পশ্চিমের ভ্যাট কমিশনার মোবারা খানম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বকেয়া ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য নোটিশ করা হয়। বকেয়া ভ্যাট পরিশোধের জন্য নিয়ম মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার পরই পরিশোধ হয়েছে। ফলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ আর কার্যকর হবে না।’
ঘটনাটি দিকে ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরুর দিকের। রেস্টুরেন্টের অবস্থান রাজধানীর মিরপুরের রবিউল প্লাজায়।
সেটি ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনার কার্যালয়ের অধীনে। তখন কমিশনার ছিলেন মইনুল খান, যিনি বর্তমানে এনবিআরের সদস্য।
মইনুল খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাকিবের রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে তখন আলোচনা হয়েছিল। তারা পাওনা ভ্যাট দিতে রাজি ও হয়েছিল। কিন্তু পরে আর দেয়নি।’
মিরপুরে সেই রেস্টুরেন্টটি বন্ধ করে শাখা খোলা হয়েছে ধানমন্ডিতে। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় সাকিবের সঙ্গে আরও কয়েকজন অংশীদার যোগ হয়েছে। আগের কয়েকজন বাদও গেছেন।
সাকিব ৭৫ রেস্টুরেন্ট এর বর্তমান পরিচালক নাজমুল সায়াদাত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধানমন্ডি শাখায় ব্যবসা শুরু করার পর থেকে আমরা নিয়মিত সরকারকে ভ্যাট দিচ্ছি। সকল দেনা-পাওনা শোধ করেই মিরপুর শাখাটি বন্ধ করে দিয়েছি। তবে ভ্যাট কর্তৃপক্ষ হিসাব জব্দ করার যে চিঠি দিয়েছে তা আমরা পাইনি।’
তাহলে কে এই ভ্যাট জমা দিয়েছে, এই প্রশ্নে নাজমুল জানালেন, এটা তারা জানেন না।
আইন অনুযায়ী, হোটেল- রেস্তঁরার উপর ভ্যাট প্রযোজ্য। মোট বিক্রির উপর এটি আদায় করা হয়। রেস্টুরেন্ট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলে এর হার হয় ১৫ শতাংশ আর সাধারণ হলে ১০ শতাংশ ।
মিরপুরের থাকার সময় রেস্টুরেন্টের বিক্রির ওপর ৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা ভ্যাট জমা দেয়া হয়নি। সময় মতো পরিশোধ না করলে জরিমানাসহ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। তা না দিলে ব্যাংক অ্যাকউন্ট জব্দ করতে পারে কমিশনার। তবে এ জন্য রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদন লাগে।
ভ্যাট কমিশনার মোবারা খানম বলেন, ‘যখন আমরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছি তার ২৭ দিন পর পরিশোধ করেছে। তার আগে করেনি। বকেয়া হয়েছে অনেক আগের। আমরা তাদের নাম-ধাম জানতাম না। টিআইএন শনাক্ত করে তার পর ব্যবস্থা নিয়েছি। যখন ফ্রিজ করার নির্দেশ এলো, তখন জানা গেল প্রতিষ্ঠানটি সাকিব আল হাসানের।’
তিনি আরও বলেন, ‘বকেয়া ভ্যাট ২০২০ সালের। নতুন করে হয়নি। বকেয়া। ওনাদের (সাকিবের প্রতিষ্ঠান) দেয়ার কথা। না দিয়ে বন্ধ করে চলে গেছে। সেই বকেয়াই এখন আদায় করা হয়েছে।’