ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বুধবার চালু হচ্ছে বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা বা অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি)। প্রথম দিনে এটিবি-তে লেনদেন হবে ব্রোকারেজ হাউজ লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের শেয়ার।
সোমবার ডিএসইর ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে ব্যবসায় মূলধন প্রাপ্তি ও শেয়ারের মালিকানা পরিবর্তন সহজ করতে এটিবি চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত বছরের ২৯ আগস্ট এ-সংক্রান্ত আইন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড) রেগুলেশন, ২০২২ অনুমোদন দেয়। ২০ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য পাঠায় ডিএসই।
ডিএসই-এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, চলতি মাসের ৪ তারিখ সকাল ১০টায় এটিবিতে লেনদেন শুরু হবে। আর প্রথম দিনে লেনদেন হবে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের শেয়ার।
লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের ট্রেডিং কোড হবে ‘LBSL’ আর কোম্পানি কোড হবে ‘50091’।
লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের শেয়ারের তালিকাভুক্তির তারিখ হবে নভেম্বরের ২৪ তারিখ।
লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ তাদের ২৪ কোটি ৮৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩২৬টি শেয়ারের মধ্যে ২ কোটি ৬৯ লাখ ৩ হাজার ৩৩টি শেয়ার এটিবিতে লেনদেনের জন্য তালিকাভুক্ত করেছে।
পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা যেকোনো কোম্পানি এটিবিতে সরাসরি তালিকাভুক্ত হয়ে শেয়ার লেনদেন করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে কোম্পানিটিকে অবশ্যই প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তিত হতে হবে।
বর্তমানে পুঁজিবাজারের বাইরে দুই হাজারের বেশি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানি চাইলে সরাসরি এটিবিতে নিজেদের শেয়ার লেনদেনের সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে।
এটিবি চালু হলে পুঁজিবাজারের বাইরের কোম্পানির উদ্যোক্তারা খুব সহজে মালিকানা পরিবর্তন বা শেয়ার হস্তান্তর করতে পারবেন। আগে এ কাজটি করতে অনেক ব্যয় হতো। এখন তা কম খরচেই করা যাবে।
এছাড়া কোম্পানিগুলো সরাসরি শেয়ার লেনদেনের সুযোগ পাওয়ায় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল জোগানদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের মূলধন দিতে উৎসাহিত হবে। কেননা এটিবিতে ভেঞ্চার ক্যাপিটালগুলোর বিনিয়োগ করা শেয়ার হস্তান্তরের অবারিত সুযোগ তৈরি হবে।
এছাড়া এটিবি চালু হলে মার্কেটের গভীরতা বাড়বে। অনেক ভালো কোম্পানি আছে যারা বিভিন্ন কারণে সরাসরি তালিকাভুক্ত হতে চাচ্ছে না, তারা এখানে তালিকাভুক্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা ভালো শেয়ার পাবে। এটা কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের একটা লিকুইডিটি দেবে। শেয়ার বিক্রি করে তারা নগদ টাকাও তুলতে পারবে।
এটিবিতে কারা লেনদেন করতে পারবে
বর্তমানে যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) দুই লাখ ৬৩ হাজার ৮৮৮টি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত আছে। এর মধ্যে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি এক লাখ ৯৫ হাজার ৪৫, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি দুই হাজার ৫২৩ এবং একক মালিকানা কোম্পানি ১৬৫টি।
বাকিগুলো হচ্ছে ট্রেড অর্গানাইজেশন, বিদেশি কোম্পানি, সোসাইটি আর অংশীদারী কোম্পানি।
পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির মধ্যে পুঁজিবাজারে আছে ৩৫০টি। সে হিসাবে ২ হাজার ১৭৩টি কোম্পানি এখন স্টক এক্সচেঞ্জের বাইরে। এই কোম্পানিগুলো এটিবি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের শেয়ার লেনদেনের সুযোগ নিতে পারবে। আর বাকিগুলোকে আগে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে তালিকাচ্যুত বা তালিকাবহির্ভূত যে সিকিউরিটিজগুলো আছে সেগুলো এটিবিতে লেনদেন করা যাবে। এছাড়া ডেবিট সিকিউরিটিজ এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডও লেনদেন হবে।
‘এটিবি চালু হলে বাজারে শেয়ারের সরবরাহ বাড়বে। সামগ্রিকভাবে তা বাজারে গভীরতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিনিয়োগের বিকল্প সুযোগ তৈরি করবে।’
এটিবি-তে কী সুবিধা
বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাবহির্ভূত যেকোনো কোম্পানি তাদের শেয়ার হস্তান্তর করতে গেলে ট্রান্সফার ফি ও মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটসহ বড় ধরনের খরচের বোঝা বহন করতে হয়। এছাড়া ১১৭ ফরম পূরণ করতে আরজেএসসিতে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয়।
এটিবিতে এলে কোনো ধরনের ঝুটঝামেলা ছাড়া সামান্য কমিশনেই শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে। বাড়তি কোনো ফি দিতে হবে না। উদ্যোক্তারা তাদের কোম্পানির বাজার মূল্য সম্পর্কে ধারণা পাবে। এছাড়া কোম্পানির পরিচিতি, সুনাম বা ব্র্যান্ড ভেল্যুও বাড়বে।
এমনকি কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতে এখান থেকে রাইট শেয়ার কিংবা প্রাইভেট প্লেসমেন্ট শেয়ার ছেড়ে তাদের মূলধন বাড়াতে পারবে।
বিএসইসির মুখপাত্রের আশা, এতে অনেক কোম্পানি এখানে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে। ফলে বাজার মূলধন ও লেনদেন বাড়বে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজিবাজারের গুরুত্বও বেড়ে যাবে।
এটিবিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মতো কর সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। এনবিআরের সম্মতি পেলে সাড়ে ৭ শতাংশ কর ছাড় পাবে কোম্পানিগুলো।
পুঁজিবাজারে এলে কোম্পানি পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আগের চেয়ে বাড়ে, যা প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিতকরণে বড় ভূমিকা রাখে।
কীভাবে তালিকাভুক্তি
এটিবিতে তালিকাভুক্তি অনেকটা সরাসরি বা ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের মতো। নতুন শেয়ার না ছেড়ে উদ্যোক্তার হাতে থাকা শেয়ার বিক্রির উদ্দেশ্যে তালিকাভুক্তি নেয়া যাবে। শেয়ারের মূল্যও হবে বাজারভিত্তিক।