সদ্য বিদায়ী ২০২২ সালে সারা বিশ্বের অর্থনীতি দুঃসময়ের মধ্যদিয়ে গেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এমন পরিস্থিতিতে, গত বছরে দেশের অর্থনীতি সংকটময় পথ পাড়ি দিলেও নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়াবে।
খ্রিষ্টীয় ২০২৩ সালের প্রথম দিন রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, ‘সারাবিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিই খারাপ। তার মধ্যেও আশা করছি আমাদের অর্থনীতি এ বছর ভালো যাবে। দ্রব্যমূল্য কমে আসবে। রেমিট্যান্স বাড়বে। রপ্তানি আয়ও ভালো হবে। বৈদেশিক উৎস থেকে আরও বেশি অর্থ পাওয়া যাবে।
‘এসবের সুবাদে আমাদের রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ভালো হবে। সামগ্রিকভাবে আশা করছি, আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।’
২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিডের প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধারের পথে ছিল। গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর সবকিছু পাল্টে যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে তেল, গ্যাস, শিল্পের কাঁচামালসহ সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে অস্বাভাবিক হারে। আশঙ্কা তৈরি হয় বিশ্বমন্দার। যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিও ফের অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন বছর নিয়ে ইতিবাচক আশাবাদ ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি, মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকটসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
নববর্ষ উপলক্ষে অর্থবিভাগ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিয়ম করেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সারা বিশ্বের জন্য নতুন সংকট। ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশে এখন মন্দার পদধ্বনি। এ কারণে পণ্য রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় কিছুটা চাপের মুখে রয়েছে। তবে এ দুই খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বেশকিছু কৌশল ও পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এতে চলমান ডলার সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। অর্থনীতিতে আরও যা সমস্যা রয়েছে, সেগুলো প্রশমনে গেল বছরই সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।
নতুন বছরে মূল্যস্ফীতির চাপ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয় তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৮ শতাংশের মতো। জিনিসপত্রের দাম মানুষের নাগালের বাইরে ছিল। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরই সাফল্যের সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। এরপর থেকে গত কয়েক বছর ধরে সেটি ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিবিএসের সবশেষ তথ্যানুযায়ী, নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাড়ায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বর্তমানে যে ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে তা মূলত বৈশ্বিক কারণে। তবে এবারও সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে মূল্যস্ফীতি। এটা আরও কমতির দিকে যাবে। তারপরও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার থাকবে সেটি হয়তো বিগত বছরগুলোর চেয়ে কিছুটা বেশিই থাকবে।
‘মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নতুন বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় উপকারভোগী বাড়ানো, দারিদ্র্য নিরসন এবং নতুন কর্মসংস্থানমুখী প্রকল্প গ্রহণে জোর দেয়া হচ্ছে।’
মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের বাজেটে আমাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে আমরা সঠিক পথেই হাঁটছিলাম। কিন্তু বৈশ্বিক সংকটের কারণে দেশে দেশে প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী হওয়ার আভাস মিলেছে। আমাদের অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়েছে। ফলে আমরা বৈশ্বিক বাস্তবতার মুখে সংশোধিত বাজেটে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ পুনঃনির্ধারণ করেছি। তবে আশা করছি, সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রবৃদ্ধি আরও বেশি হবে।’
অর্থনীতিতে চলমান সমস্যার উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মন্দা মোকাবিলার অভিজ্ঞতা বর্তমান সরকারের আছে। ২০০৮ সালে উদ্ভূত অর্থনৈতিক মন্দা আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। এরপর মহামারি করোনা মোকাবিলা করে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন ছিল যুগান্তকারী পদক্ষেপ। অর্থনীতিতে সৃষ্ট চলমান সমস্যা ও আগামীতে বিশ্বমন্দার শঙ্কাও সরকার সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।’