বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইউএফএস’র ১৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ, আইসিবির তদন্ত কমিটি গঠন

  •    
  • ১ জানুয়ারি, ২০২৩ ২১:৫৯

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী চার মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে ইউএফএস নামের অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। এই টাকা নিয়ে ১৩ অক্টোবর দুবাই পাড়ি জমিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হামজা আলমগীর।

সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনের (ইউএফএস) টাকা আত্মসাতে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) কোনো অবহেলা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

রোববার গণমাধ্যমে খবর আসে যে চার মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে ইউএফএস নামের অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি।

এই টাকা নিয়ে ১৩ অক্টোবর দুবাই পাড়ি জমিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হামজা আলমগীর। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরে রয়েছেন।

এক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রতিবেদন জালিয়াতি এবং ভুয়া এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিড রেট) দেখিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) অন্ধকারে রাখা হয়।গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘রহস্যজনক কারণে চার বছর নিষ্ক্রিয় ছিল ফান্ডের ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান (গ্যারান্টি দেওয়া প্রতিষ্ঠান) আইসিবি। পাশাপাশি অডিট কোম্পানিও ভুয়া রিপোর্টকে বৈধতা দিয়েছে। বিএসইসির প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে এসব তথ্য।’

অভিযোগ ওঠায় নিজেদের গাফিলতি ছিল কি-না তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করেছে চার ফান্ডের ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান আইসিবি।

আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসনে বলেন, ‘আজ আমি একটি তদন্ত কমিটি করেছি। কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। এই সম্পদ ব্যবস্থাপকের চারটি ফান্ডের ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান আমরা।

আমরাতো এগুলো ছাড়াও ৩০টি থেকে ৩৫টি ফান্ডের ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করছি। এটা কেন ঘটল, কী কারণে ঘটল সেটা তদন্ত করে দেখা হবে। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিএসইসি তদন্ত করছে। যেহেতু পত্রিকায় চলে এসেছে আমরা ভেবে দেখলাম আমাদেরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।’

এদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে এ নিয়ে তদন্ত চলমান বলে জানিয়েছেন বিএসইসির মুখপাত্র। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি। ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনের (ইউএফএস) বিষয়ে প্রাথমিক একটি তদন্ত হয়েছিল। সেখানে প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু সমস্যা পাওয়া যায়। ব্যবস্থা নিতে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তে হাত দিয়েছে বিএসইসি।’

সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশন (ইউএফএস) নিবন্ধন পায় ২০১০ সালের ২৬ অক্টোবর। তারা বর্তামানে পাঁচটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত। আরও দুটি ফান্ড অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

বিএসইসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ২০১৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি বিদেশে অর্থ পাচার করছে।

এক্ষেত্রে চারটি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের তথ্য মিলেছে। তদন্তকালে পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে আরও অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে কমিশন ধারণা করছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ চক্র।

ইউএফএসের পরিচালনা করা ফান্ডের আকার ৪৪০ কোটি টাকার মতো। এই ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান (গ্যারান্টি দেওয়া প্রতিষ্ঠান) হিসেবে রয়েছে সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।

বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এ পর্যন্ত ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা লুটে নেয়ার তথ্য মিলেছে। এক্ষেত্রে প্রতিবছর ইউএফএস তাদের যে রিপোর্ট দিয়েছে, তার অধিকাংশ ভুয়া। এরমধ্যে তহবিল থেকে সরাসরি নগদ নেয়া হয়েছে ১২৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এই টাকার সুদ আয় দেখানো হয়েছে ৩১ কোটি ৭৬ লাখ, ব্যবস্থাপনা ফি’র নামে অতিরিক্ত নেয়া হয়েছে সাত কোটি ৯০ লাখ এবং ট্রাস্টি ফি বাবদ অতিরিক্ত নেয়া হয়েছে ৫৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

এতে সবমিলিয়ে টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। তবে কোম্পানির সম্পদ ও বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে সাত কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর সম্পদ বাদ দিলে মোট হাতিয়ে নেয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির সম্পদ দেখানো হয়েছে, ২৮১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে ১২৫ কোটি ২৮ লাখ লুটে নিয়েছে এই চক্র। এক্ষেত্রে ভুয়া ব্যাংক ব্যালেন্স দেখিয়েছে ৭৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা এবং এফডিআর ৪৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। কিন্তু বাস্তবে কোনো এফডিআর খুঁজে পায়নি কমিশন। অর্থাৎ ব্যাংক ব্যালেন্সের যে তথ্য দিয়েছে, তার পুরোটাই অস্তিত্বহীন।

আবার গত বছরের ২১ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকে ব্যালেন্স দেখানো হয়, ১০৮ কোটি ২০ লাখ ৭৫ হাজার ৫২৩ টাকা। কিন্তু বাস্তবে ব্যালেন্স ছিল ২৭ লাখ ৯৩ হাজার ৯৮০ টাকা। অর্থাৎ ১০৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকার তথ্য ভুয়া। এক্ষেত্রে ব্যাংকের ভুয়া স্টেটমেন্ট করে কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। যে সব ফান্ডের অর্থ লুটে নেয়া হয়েছে সেগুলো হলো-আইবিবিএল শরিয়াহ ইউনিট ফান্ড, পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড, ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ড এবং পদ্মা লাইফ ইউনিট ফান্ড।’

ইতোমধ্যে কোম্পানিটির সঙ্গে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন না করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। বিএসইসি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। এর ফলে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে।

ইউএফএস একটি সম্পদ ব্যবস্থাপক (অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট) কোম্পানি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমতি নিয়ে এই কোম্পানি বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে।এই প্রক্রিয়াকে শেয়ারবাজারে পরিভাষায় মিউচ্যুয়াল ফান্ড বলা হয়। নিয়ম অনুসারে ফান্ডে বিনিয়োগে কোনো অনিয়ম হলে, ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে রিপোর্ট করতে হয়। কিন্তু ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ানের সামনেই এই জালিয়াতি করেছে ইউএফএস।

ভুয়া সম্পদ দেখানো এবং অস্তিত্বহীন ব্যাংক ব্যালেন্স দেখিয়েছে। এসব বিষয়ে অভিযোগ এলে ১৯ জুন তদন্ত কমিটি গঠন করে কমিশন। চার মাস ১০ দিন পর ৩০ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি।

এছাড়া ফান্ডের টাকা থেকে চারটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে হামজা আলমগীর। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আর আই এন্টারপ্রাইজ, নেত্রকোনা এক্সেসরিস লিমিটেড, ভ্যানগার্ড ট্রেডার্স লিমিটেড, তানজিল ফ্যাশন লিমিটেড এবং মাল্টি ম্যাক্স ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।

এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানা হামজা আলমগীর এবং তার নিকটাত্মীয়দের। স্বাভাবিক এ বিষয়ে অডিটে ধরা পড়ার কথা। কিন্তু দুটি অডিট কোম্পানি আহমেদ জাকের অ্যান্ড কো এবং রহমান মোস্তফা আলম অ্যান্ড কো এসব ভুয়া আর্থিক রিপোর্টের বৈধতা দিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘ইউএফএস’র ফান্ডগুলোর মধ্যে-আইবিবিএল ২০০ কোটি টাকা, ব্যাংক এশিয়ার ১০০ কোটি, পপুলার লাইফের ৮০ কোটি, পদ্মা লাইফের ৫০ কোটি এবং প্রগতি লাইফ ইউনিট ফান্ডের ১০ কোটি টাকার তহবিল পরিচালনা করছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

এছাড়া সানলাইফ ইউনিট ফান্ডের ১০ কোটি এবং ইউএফএস ইউনিট ফান্ডের ১০ কোটি টাকার তহবিল প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এরমধ্যে ১৫৮ কোটি টাকা নিয়ে গত বছরের ১৩ অক্টোবর দুবাই পালিয়েছে কোম্পানির এমডি হামজা আলমগীর। এর আগে দুবাই এবং ঢাকায় বারবার আসা-যাওয়া করলেও, তদন্তের শেষ দিকে তিনি আর দেশে ফেরেননি।’

এ বিষয় ইউএফএস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কোনো জবাব দেননি।

এ বিভাগের আরো খবর