বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টাকায় এলসি: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা

  •    
  • ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ২২:৫৫

ডলার সংকটের কারণে বিকেএমইএ গত দুই মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এই দাবি জানিয়ে আসছে। অন্যদিকে পোশাকশিল্পের প্রধান কাঁচামাল সুতা ও কাপড় সরবরাহকারী বস্ত্রশিল্প মালিকরা বলছেন, এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

তৈরি পোশাকশিল্পের অভ্যন্তরীণ ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র বা এলসি খোলার ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকায় এলসি খোলা নিয়ে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ ও বস্ত্রশিল্প মালিকদের সংগঠন বিটিএমইএর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

ডলার সংকটের কারণে বিকেএমইএ গত দুই মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এই দাবি জানিয়ে আসছে। অন্যদিকে পোশাকশিল্পের প্রধান কাঁচামাল সুতা ও কাপড় সরবরাহকারী বস্ত্রশিল্প মালিকরা বলছেন, এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

বিষয়টির সম্মানজনক সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বুধবার বিকেএমইএ ও বিটিএমইএ প্রতিনিধিদের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। মতিঝিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বৈঠক শেষে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঋণপত্র খোলার সময় ব্যাংকে ডলার সংকট পড়লে বাকিটা টাকায় বিল পরিশোধ করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আমরা আবেদন করেছি। এই অনুরোধ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে দীর্ঘ সময়ের জন্য নয়, স্বল্প সময়ের জন্য যত দিন ডলার সংকট থাকবে তত দিন টাকায় ঋণপত্র খোলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারের মাধ্যমে জানিয়েছিল কোনো ব্যাংক ব্যাক টু ব্যাক এলসি পরিশোধের দায় মেটাতে বিলম্ব করলে এডি লাইসেন্স বাতিলসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তখন ব্যাংক ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খোলা বন্ধ করে দিয়েছিল। কারণ ব্যাংকগুলো আগের ব্যাক টু ব্যাকের দায় পরিশোধ করতে বলছে। ব্যাংকের কাছে ডলার সংকট, আবার ঋণপত্রও খুলতে হবে। ফলে এর জন্য আমাদের আবেদন ছিল ডলারের পরিবর্তে টাকায় ঋণপত্র খোলার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘এর তাগিদেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। আজকে বাংলাদেশ ব্যাংক সংগঠনগুলোর অনুরোধ শুনেছে। হয়তো এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য আসবে।’

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘কারও অসুবিধা করে বিকেএমইএ কাজ করতে চায় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে যদি টাকায় শোধ করতে অসুবিধা কিংবা জটিলতা তৈরি হয়, তাহলে কাউকে সমস্যায় ফেলে আমরা এ অনুরোধ করব না।’

বৈঠকে অংশ নেয়া বিটিএমইএ প্রতিনিধি বাদশা মিয়া বলেন, ‘পোশাক মালিকরা সুতা কেনেন ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে। তাদের এক্সপোর্ট পেমেন্ট দিয়েই আমাদের পেমেন্ট দেয়। এখানে টাকায় এলসি খোলার আইন করা হলেও ডলার সাশ্রয়ের কোনো সুযোগ নেই। আমরা কটন ইমপোর্ট করি ডলার দিয়ে আবার পেমেন্টও করি ডলারে। এটা হলে আমরা কটনের পেমেন্ট কীভাবে দেব। এটা করা (টাকায় এলসি খোলা) হলে নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গের মতো হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ইডিএফ তহবিল, ফরেন ফাইন্যান্স, টার্মলোন নিয়েছি। এটা ডলারে পেমেন্ট করতে হয়, তাহলে ডলার কোথায় পাব। এটা না করে লোকাল সুতা আছে কোটি কোটি টাকার, যেগুলো অবিক্রীত রয়েছে, তারা লোকাল সুতা কিনুক, আপাতত এসব এলসি বন্ধ থাকুক।’

বস্ত্রশিল্প মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার ক্ষেত্রে আমরা শক্ত অবস্থান নিয়েছি। আমরা ডলারের বিপরীতে টাকার ব্যবহার মেনে নেব না। ডলারের পরিবর্তে টাকা ব্যবহার করলে আমাদের কোনো ধরনের সুবিধা হবে না।’

‘বিকেএমইএ এ ধরনের আবেদন কোন পরিপ্রেক্ষিতে করল সেটি আমরা বুঝতে পারছি না’ মন্তব্য করে খোকন বলেন, ‘তাহলে তারা রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) অর্থ কীভাবে পরিশোধ করবে? বিদেশি মুদ্রা ছাড়া ইডিএফের ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব নয়। অফসোর ঋণ কীভাবে পরিশোধ করা হবে? আর আমি যদি ডলার না আনতে পারি, তাহলে তো কোনো ব্যাংক ঋণপত্র খুলবে না।’

বাজারে ডলার সংকটের কারণে নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র বা এলসি খোলার ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশি টাকায় ঋণপত্র খোলার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অনুরোধ জানানো হয়। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই বুধবার বিকেএমইএ ও বিটিএমইএ প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন বাংলাদেশ ব্যাংক ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল।

বিকেএমইএ চিঠিতে বলা হয়, ঋণপত্র খোলা এবং মূল্য পরিশোধে ডলারের চাহিদা মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের রপ্তানি খাত। নিট সেক্টরের শতকরা ৮০ শতাংশ কাঁচামাল দেশীয় পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। সুতরাং বর্তমান ডলার সংকট মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে ঋণপত্র খোলা এবং এর মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশি টাকায় ঋণপত্র খোলা হলে এ সংকট কিছুটা হলেও দূর হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ঋণপত্র ক্রয় এবং মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশি টাকায় পরিশোধ করার ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে, ডলার কনভার্সনের নীতিগত প্রক্রিয়ার কারণে আমাদের ডলার প্রতি ৭-৮ টাকার পার্থক্যের ফলে বিশাল অংকের ক্ষতির সম্মুক্ষীন হতে হচ্ছে। ফলে এসকল বিষয় বিবেচনা করে ঋণপত্র খোলা এবং মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশি টাকায় ঋণপত্র খোলা এবং মূল্য পরিশোধের সুযোগ করে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল বিকেএমইএ।

এ বিভাগের আরো খবর