ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশকে ৬২ কোটি ৭০ লাখ ডলার ঋণ দিতে চুক্তি সই করেছে। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ১০০ টাকা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৬ হাজার ২৭০ কোটি টাকা।
সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সম্মেলন কক্ষে দুপক্ষের মধ্যে এই চুক্তি সই হয় বলে ইআরডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। উন্নয়ন এবং জলবায়ু রক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এই ঋণ দিচ্ছে এডিবি। ইআরডি সচিব শরিফা খান এবং এডিবির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর জিয়াংবো নিং চুক্তিতে সই করেন।
এডিবি ট্রাঞ্চে টু নামক ‘তৃতীয় পাবলিক-প্রাইভেট অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’-এর জন্য ২৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার, ‘বৃহত্তর ঢাকা টেকসই নগর যাতায়াত প্রকল্প (বিআরটি-গাজীপুর)’-এর জন্য ১০ কোটি ডলার, ‘উপকূলীয় শহর জলবায়ু সহনহশীলতা প্রকল্প’-এর জন্য ২৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার ঋণ দেবে এডিবি। এ ছাড়া উপকূলীয় শহর জলবায়ু সহনশীলতা প্রকল্পের জন্য ৪০ লাখ ডলার অনুদান দেবে সংস্থাটি।
এই প্রকল্পগুলোর চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী ডিরেক্টর এবং সিইও আলমগীর মোরশেদ, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী মুহাম্মাদ ফেরদৌস এবং এডিবির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর জিয়াংবো নিং।
তৃতীয় পাবলিক-প্রাইভেট অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলের আদলে যে অবকাঠামো প্রকল্পগুলো গৃহীত হয়েছে সেগুলোতে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (আইডিসিওএল) বিনিয়োগ করার মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। এই প্রকল্প শেষ হওয়ার আনুমানিক মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০২৭ সাল পর্যন্ত।
এডিবি এই প্রকল্পে দুইভাবে ঋণ দিচ্ছে: প্রথমত, রেগুলার অর্ডিনারি অপারেশন্সের জন্য ২৬২.২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং কনসেশনাল অর্ডিনারি অপারেশন্সের জন্য ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেগুলো শক্তির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিকল্প নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য সহায়তা করবে। দুটি ঋণই ২৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে, যার মধ্যে পাঁচ বছরের অতিরিক্ত সময় অন্তর্ভুক্ত।
বৃহত্তর ঢাকা টেকসই নগর যাতায়াত প্রকল্প
সড়ক পরিবহন ও হাইওয়ে বিভাগ এই প্রকল্পটি কার্যকর করবে, অন্যদিকে বাস্তবায়নের দায়িত্বে সড়ক ও হাইওয়ে বিভাগের সঙ্গে থাকবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) এবং স্থানীয় সরকার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (এলজিইডি)।
এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো গাজীপুর ও টঙ্গী এলাকায় আরও কার্যকর, টেকসই, পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে এই এলাকার জনগণের জীবনমান উন্নয়ন। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০.৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাস র্যাপিড সিস্টেম চালু করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়।
২৫ বছরের সঙ্গে অতিরিক্ত ২৫ বছর সময়সীমার মধ্যে ঋণ পরিশোধের শর্তে এডিবি ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে।
উপকূলীয় শহর জলবায়ু সহনশীলতা প্রকল্প
স্থানীয় সরকারের অধীনে এলজিইডি বিভাগ এই প্রকল্প কার্যকর করবে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো ঝুঁকিতে থাকা কিছু নির্ধারিত উপকূলীয় শহরের জলবায়ু ও দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধি এবং ওই এলাকার নারী ও দরিদ্রদের জীবনমান উন্নয়ন। বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার পনেরোটি পৌর অঞ্চল, খুলনা বিভাগের তিনটি জেলার পাঁচটি পৌর অঞ্চল এবং ঢাকা বিভাগের শরিয়তপুর জেলার দুটি পৌর অঞ্চল এই প্রকল্পের আওতাধীন থাকবে।
এই প্রকল্পের আনুমানিক মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০২৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এডিবির ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্যের মধ্যে রয়েছে কনসেশনাল অর্ডিনারি অপারেশন্সের জন্য ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, রেগুলার অর্ডিনারি অপারেশন্সের জন্য ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ এবং এর সঙ্গে ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান। এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ২৫ বছর, যার সঙ্গে অতিরিক্ত পাঁচ বছর সময় যোগ হতে পারে।